এস আলম পরিবারের সাড়ে ৩ হাজার কোটির শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ

চট্টগ্রামভিত্তিক শিল্পগ্রুপ এস আলম গ্রুপের কর্ণধার মো. সাইফুল আলম মাসুদ ও তার পরিবারের সদস্যদের সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার শেয়ার অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মীর মোহাম্মদ আলী সালাম জানান, এস আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের ৩ হাজার ৫৬৩ কোটি ৮৪ লাখ ২১ হাজার টাকার শেয়ার রয়েছে। এসব সম্পদ অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। তাদের বিরুদ্ধে ‘অবৈধ সম্পদ’ অনুসন্ধানের সময় এসব শেয়ারের সন্ধান পাওয়া গেছে।

দুদকের উপ-পরিচালক আবু সাঈদের আবেদনের ওপর শুনানি করে বিচারক এ আদেশ দেন বলে জানান দুদকের কোর্ট পরিদর্শক আমির হোসেন।

এছাড়া অস্থাবর সম্পদগুলো মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ১৪ ধারা অনুযায়ী অবরুদ্ধ করার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরা হয়।

এর আগে গত মঙ্গলবার এস আলম ও তার পরিবারের ২০০ কোটি টাকা মূল্যের ১৬ স্থাবর সম্পদ জব্দ ও ২৫ কোটি টাকাসহ তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা ৮৭টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়।

জব্দ করা ১৬ সম্পদের মধ্যে রয়েছে—গুলশানের ১০ তলা ভবন এস আলম টাওয়ার, গুলশানের ২৬৫৮ বর্গফুট জমির ওপর নির্মিত ফ্ল্যাট, গুলশান-২ এর দশমিক ৭৮৮৮ একর জমি, ধানমন্ডিতে এক বিঘা জমিসহ ৬ তলা ভবন, ধানমন্ডি লেক সার্কাসে ১১ দশমিক ৮৮ শতাংশ জমিসহ ৪ তলা ভবন, উত্তরা আবাসিক এলাকায় ৭ তলা ভবন, ভাটারাতে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ১০৩ দশমিক ৩ কাঠা জমির প্লট এবং পৃথক পৃথক ১ দশমিক ৭২০০ একর জমি, ৯৬ কাঠা জমি, ১ দশমিক ৯৫৩৬ একর জমি, ১১ দশমিক ১০৬১ বিঘা জমি ও ১৩১ দশমিক ০৪ কাঠা জমি।

অবরুদ্ধ করা ৮৭ ব্যাংক হিসাবের মধ্যে ইউনিয়ন ব্যাংকের বিভিন্ন শাখার ১৯টি হিসাবে ১২ কোটি ২৪ লাখ ৭৬ হাজার ৭৬৩ টাকা ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখার ৬৮টি হিসাবে ১৩ কোটি ৫৩ লাখ ১৩ হাজার টাকা অবরুদ্ধ করা হয়।

২০২৪ সালের ৭ অক্টোবর একই আদালত সিঙ্গাপুরসহ অন্যান্য দেশে ১ বিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগে এস আলম ও তার পরিবারের ১২ সদস্যের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আদালত। নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়া অন্যরা হলেন— সাইফুল আলমের স্ত্রী ফারজানা পারভীন, দুই ছেলে আশরাফুল আলম ও আহসানুল আলম; ছয় ভাই মোরশেদুল আলম, সহিদুল আলম, রাশেদুল আলম, আবদুস সামাদ, ওসমান গণি ও মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ হাসান। একইসঙ্গে আবদুস সামাদের স্ত্রী শাহানা ফেরদৌস, ওসমান গণির স্ত্রী ফারজানা বেগম ও মিশকাত আহমেদ নামের এক ব্যক্তিকে দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।

হাসিনা সরকারের সময় সর্বোচ্চ সুবিধাভোগীদের একজন এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ। তার বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি, অর্থপাচার, কর ফাঁকির অভিযোগ নিয়ে তদন্ত করছে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা। সাইফুল আলম মাসুদ সরকার পতনের পর থেকেই বিদেশে রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে দুদকও অর্থপাচারের একটি অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করেছে।

এস আলমের বিরুদ্ধে সিঙ্গাপুরে অর্থপাচারের বিষয়টি সামনে আসে ২০২৩ সালের অগাস্টে। তখন এ বিষয়ে নিয়ে দুদকের অনুসন্ধান শুরু হলেও তা আর এগোয়নি। সরকার পরিবর্তনের পর গত ১৮ আগস্ট আপিল বিভাগের একটি আদেশের কপি পায় দুদক, সেখানে অনুসন্ধান চালিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়। আপিল বিভাগের ওই আদেশে বলা ছিল, অভিযোগটি যথার্থ নয়। তবে দুদক বা বাংলাদেশ ব্যাংকের বিএফআইইউ চাইলে অভিযোগটি অনুসন্ধান করতে পারে। এরপরই দুদক অনুসন্ধানে নামে।

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm