এস আলমের পিএস আকিজের সব ব্যাংক হিসাব এবার জব্দ, সঙ্গে বউয়েরও

চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলমের পিএস ও ইসলামী ব্যাংকের সদ্য সাবেক ডিএমডি আকিজ উদ্দিনের সবগুলো ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে।

বুধবার (২৮ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এ সংক্রান্ত নির্দেশনা বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে পাঠিয়েছে।

আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, আকিজ উদ্দিন ও তার স্ত্রী-সন্তানদের নামে পরিচালিত হিসাবসহ তাদের ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নামে কোনো হিসাব পরিচালিত হয়ে থাকলে সেসব হিসাবে লেনদেন মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের আওতায় ৩০ দিনের জন্য স্থগিত রাখা এবং তাদের নামে কোনো লকার থাকলে তার ব্যবহার ৩০ দিনের জন্য বন্ধ করার নির্দেশনা দেওয়া হলো।

লেনদেন স্থগিতের পাশাপাশি তাদের সংশ্লিষ্ট সব ব্যাংক হিসাবের তথ্য বা দলিল, যেমন হিসাব খোলার ফরম, কেওয়াইসি ও লেনদেন বিবরণী প্রভৃতি তথ্য বিএফআইইউর কাছে আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে পাঠাতে বলা হয়েছে।

এর আগে সাইফুল আলম মাসুদের পিএস থেকে রাতারাতি ইসলামী ব্যাংকের ডিএমডি হয়ে ওঠা আকিজ উদ্দিনের চারটি প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক একাউন্টে ৯৯ কোটি টাকা পাওয়া গিয়েছিল। আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ) ওই টাকার খোঁজ পাওয়ার পরই একাউন্টগুলো থেকে টাকা তোলা বন্ধ করার নির্দেশ দেয় ব্যাংকগুলোকে।

এই চারটি একাউন্টের মধ্যে রহমান রহমান অ্যান্ড সন্সের একাউন্টে জমা আছে ৫৬ কোটি ২৪ লাখ, আলম ট্রেডিং অ্যান্ড বিজনেস হাউসে জমা আছে ৮ কোটি ২৮ লাখ, মোস্তাক ট্রেডার্সের একাউন্টে জমা আছে ১৫ কোটি ৪ লাখ টাকা, নজরুল এন্টারপ্রাইজের একাউন্টে জমা আছে ১৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা এবং নুরুল আলম নামের অপর একটি ব্যাংক একাউন্টে জমা আছে ৩ কোটি ৪৮ লাখ।

চট্টগ্রামের পটিয়ার বাসিন্দা আকিজ উদ্দিন এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদের পক্ষে ইসলামী ব্যাংক ছাড়াও বাকি সব ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ করতেন। শেখ হাসিনা সরকারের শীর্ষ পর্যায়েও তার ব্যাপক প্রভাব ছিল। এস আলম গ্রুপের হয়ে ভুয়া কোম্পানি খুলে নামে-বেনামে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণের টাকা বের করে নেওয়ার কাজটি করতেন আকিজ উদ্দিনই।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও চট্টগ্রামের ইসলামী ব্যাংকের একটি শাখা থেকে ভুয়া একটি প্রতিষ্ঠানের নাম দিয়ে ৩০০ কোটি টাকা তুলে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন আকিজ উদ্দিন। তার নানামুখী তদবিরের পরও ব্যাংক কর্মকর্তারা চেকগুলো আটকে দিয়ে ফেরত পাঠান। ৬ আগস্ট সোনালী, জনতা ও রূপালী ব্যাংকের পাঁচটি চেকে ৩০০ কোটি টাকা তুলে নেওয়ার জন্য পাঠানো হলে ইসলামী ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখার ম্যানেজার তাতে প্রাথমিক অনুমোদন দেন। চেকগুলো ইস্যু করা হয়েছিল ‘গোল্ডেন স্টার’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের নামে। অস্তিত্বহীন ওই প্রতিষ্ঠানের মূল একাউন্ট ছিল চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদ শাখায়। এগুলো নগদে উত্তোলন করার কথাও ছিল আগ্রাবাদের ওই শাখা থেকে। তবে টাকার অংক বেশি হওয়ায় সেটি পাঠানো হয় ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ে। সেখানেই চেকটি আটকে দেওয়া হয়।

‘গোল্ডেন স্টার’ নামের প্রতিষ্ঠানটি ইসলামী ব্যাংকের ডিএমডি ও সাইফুল আলম মাসুদের ব্যক্তিগত সহকারী আকিজ উদ্দিনের তৈরি করা একটি অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠান। আকিজ উদ্দিন এস আলম গ্রুপের হয়ে এভাবে বিভিন্ন অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের জন্ম দিয়ে ঋণের নামে বিপুল অংকের টাকা তুলে নিতেন।

ইসলামী ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ইসলামী ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখায় ‘গোল্ডেন স্টার’ নামের প্রতিষ্ঠানটির একাউন্ট থেকে বিভিন্ন ব্যক্তিকে ঘুষ দেয়ার কথা বলেও মাঝে মধ্যে বড় অঙ্কের টাকা তোলা হতো।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm