‘এসিল্যান্ড অবরুদ্ধ’ রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়া মুক্তিযোদ্ধা ডা. আশরাফের দাফন

চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলা প্রশাসনের অবহেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক ডা. আলী আশরাফকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়া দাফন করা হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে বাঁশখালী উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) আতিকুর রহমানকে অবরুদ্ধ করে ক্ষোভ জানিয়েছেন জনতা।

জানা যায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আলী আশরাফ বার্ধক্যজনিত কারণে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার (২৬ জুলাই) বিকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। সোমবার (২৭ জুলাই) সকাল ১১টায় জানাযার সময় জানিয়ে মাইকিং করা হয়। বিষয়টি জেলা ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তারকেও জানানো হয়। কিন্তু যথাসময়ে থানা ও জেলা পুলিশ, মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত না থাকায় এবং সালামি পতাকার অভাবে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ছাড়া জানাযা শেষে দাফন সম্পন্ন করতে বাধ্য হন পরিবার।

এদিকে, জানাযা ও দাফনের প্রায় ৫০ মিনিট পর বাঁশখালীর সহকারি কমিশনার (ভূমি) আতিকুর রহমান ঘটনাস্থলে গেলে জানাযায় উপস্থিত জনতা তাঁকে অবরুদ্ধ করে রাখেন এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরে পুলিশের সহায়তায় তিনি ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে দুপুর ১টায় ঘটনাস্থলে গিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার সবার কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন। এরপর ডা. আলী আশরাফ কবরে পুস্পস্তবক দিয়ে সম্মান জানান এবং মরুহুমের পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানান।

এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা ডা. আলী আশরাফের ছেলে জহির উদ্দিন বাবর বলেন, ‘রাষ্ট্র ও জাতির জন্য আমাদের পরিবারের পরম ত্যাগকে উপজেলা প্রশাসন অবজ্ঞা করেছে ও অসম্মান করেছে। আমার বাবার প্রতি এই অশ্রদ্ধা সহ্য করতে পারছি না।’

দক্ষিণ জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার (অর্থ) মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসনের এই অবজ্ঞা ও অবহেলা মুক্তিযোদ্ধাদের কলঙ্কিত করেছে। প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের অদক্ষতা ও অযোগ্যতায় মুক্তিযোদ্ধারা পদে পদে লাঞ্চিত হচ্ছে। দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় এসব ঘটনা ঘটেই চলছে।’
বাঁশখালী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক আবুল হাশেম বলেন, ‘আমরা উপজেলা প্রশাসনকে কয়েকবার জানাযার সময় জানিয়ে দিয়েছি। এমন কী জানাযার লাইনে দাঁড়িয়ে কয়েকবার ফোন করেছি। প্রশাসনিক কর্মকর্তা আসেনি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার বলেন, ‘আমার ব্যস্ততার কারণে আমি এসিল্যান্ডকে মরহুমের জানাযায় পাঠিয়েছিলাম। টাইম মিসিংয়ের কারণে অনাকাঙ্খিত ঘটনাটি ঘটেছে। এসিল্যান্ডের বাবাও একজন মুক্তিযোদ্ধা। ইচ্ছাকৃত ঘটনাটি ঘটেনি।’

উল্লেখ্য, মুক্তিযোদ্ধা ডা. আলী আশরাফ ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রথম প্রতিবাদকারী ও চট্টগ্রাম জেলা যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মৌলভী সৈয়দের বড় ভাই। বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রথম প্রতিবাদ করায় ১৯৭৭ সালের ১১ আগষ্ট তৎকালীন সরকার মৌলভী সৈয়দকে গ্রেপ্তার করে নৃশংসভাবে শারীরিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয়।

এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!