চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় ফেল করেছে ২৫ হাজার ৬৯ জন। এর মধ্যে শুধুমাত্র অংকেই ফেল করেছে ১১ হাজার ১২১ জন। পাসের হার ৮২ দশমিক ৮০ শতাংশ— যা গত দুই বছরের তুলনায় বেশি। আর সংখ্যার মারপ্যাঁচে এটাকেই ‘সাফল্য’ হিসেবে দেখছে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের যুক্তি, চট্টগ্রাম বিভাগকে আর দশটা এলাকার মত করে দেখলে হবে না। পার্বত্য এলাকাগুলো এ শিক্ষাবোর্ডের অন্তর্ভূক্ত। সেখানকার প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে শিক্ষার সর্বোত্তম সুফল পায় না পরীক্ষার্থীরা। আর এ কারণে পাস-ফেলের হিসাবে একটা বড় ভূমিকা রাখে তিন পার্বত্য জেলার শিক্ষার্থীরা।
এ বছর জিপিএ-৫ পেয়েছে ১০ হাজার ৮২৩ জন শিক্ষার্থী। গত বছর এই সংখ্যা ছিল ১১ হাজার ৪৫০ জন। গণিতের জটিল প্রশ্নে ফেল প্রচুর শিক্ষার্থী ফেল করায় কমেছে জিপিএ ৫— এমন যুক্তি দেখিয়ে বোর্ড কর্মকর্তারা এও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন, শিক্ষার্থীরা ক্লাসমুখী হওয়ার বদলে কোচিংমুখী ও গাইডনির্ভর হওয়ায় ফেলের সংখ্যা বেড়েছে।
বেড়েছে পাসের হার
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে এ বছর পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৭৫৩ জন। পাসের হার ৮২ দশমিক ৮০ শতাংশ। যা গত বছর ছিল ৭৮ দশমিক ২৯ শতাংশ। এর মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগরে পাসের হার ৮৭ দশমিক ০৬ শতাংশ। গত বছর এটি ছিল ৭৮ দশমিক ১০ শতাংশ। অন্যদিকে মহানগর বাদে চট্টগ্রাম জেলায় পাসের হার ৮৪ দশমিক ৯২ শতাংশ। গত বছর এটি ছিল ৮০ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
পার্বত্য জেলাগুলোর মধ্যে রাঙামাটি জেলায় এ বছর পাসের হার ৭২ দশমিক ৭২ শতাংশ। গত বছর এটি ছিল ৬৭ দশমিক ৯২ শতাংশ। খাগড়াছড়ি জেলায় এ বছর পাসের হার ৭২ দশমিক ২৫ শতাংশ। গত বছর এটি ছিল ৬৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ। বান্দরবান জেলায় পাসের হার ৭২ দশমিক ৭০ শতাংশ। গত বছর এটি ছিল ৭০ দশমিক ৩০ শতাংশ।
অংকে কেন এতো ফেল?
এবার অংক পরীক্ষা ৩ ঘন্টাব্যাপি শর্ট সিলেবাস অনুযায়ী ১০০ নম্বরের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়। প্রশ্নপত্র দেওয়া হয় দুটি ভাগে—যার মধ্যে ৭০ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্ন এবং ৩০ নম্বর ছিল এমসিকিউ আকারে। প্রকাশিত ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চট্টগ্রামে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংকে ফেল করেছে ১১ হাজার ১২১ জন। যদিও অংকে পাসের হার ৯২ দশমিক ৩৭ শতাংশ। বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী এবার অংকে কেন এভাবে ফেল করলো— বিষয়টি ভাবাচ্ছে অভিভাবকদের। তবে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এএমএম মুজিবুর রহমান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভীতি কাটিয়ে এবং শিক্ষকদের যথাযথ প্রশিক্ষণের আওতায় আনার কোনো বিকল্প নেই।
শিক্ষার্থীদের কোচিং নির্ভরতাকে দায়ী করে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা কোচিংমুখী হওয়ায় তারা মূল পাঠ্যবই অনুশীলন করতে চায় না। কোচিং সেন্টারের লেকচারশিট পড়ে অন্য কোনো বিষয়ে পার পাওয়া গেলেও গণিতে পাস করা কঠিন হয়ে পড়ে।’
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান আক্ষেপ করে বলেন, ‘এখনকার শিক্ষার্থীরা মূল পাঠ্যবই না পড়ায় ও অনুশীলন না করায় পরীক্ষার হলে গিয়ে ভড়কে যায়। এমসিকিউ ও সৃজনশীলে উত্তর দিতে গিয়ে টাইম ম্যানেজমেন্ট করতে পারে না। প্রশ্নকে ঘোরানো-প্যাচানো মনে করে উত্তর না দিয়ে চলে আসে।’
তবে তিনি গত দুই বছরের তুলনায় এ বছর চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার বেশি হওয়াকে ‘সাফল্য’ হিসেবেই দেখছেন।
এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থী নাসরিন আক্তার চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানালো, ‘পরীক্ষায় গণিত প্রশ্ন কঠিন হয়েছিল। কমন পড়েনি। প্রশ্নের কাঠামো জটিল ও ঘোরানো ছিল। বোঝা যাচ্ছিল না। এমসিকিউতে অনেকগুলো কনফিউশন ছিল। কোনটা হবে বোঝা যাচ্ছিল না।’
ওই পরীক্ষার্থী আরও জানায়, ‘এমসিকিউ এবার আরও বেশি কঠিন হয়েছে। ৩০ নম্বরের এমসিকিউ খসড়া করে চূড়ান্ত উত্তর বের করার সময় পাইনি। প্রথম দিকের উত্তর বের করতে করতেই সময় চলে গেছে। সৃজনশীলেও তাই হয়েছে।’
সিপি