চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পটিয়ার সাবেক সংসদ সদস্য মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান দিদারুল আলম, সাবেক মেয়র আইয়ুব বাবুল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম সামশুজ্জামান চৌধুরীকে আসামি করে নতুন মামলা হয়েছে চট্টগ্রামের পটিয়া থানায়।
মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) রাতে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা এনামুর রশিদ বাদী হয়ে ১৫১ জনের নাম উল্লেখ করে আরো অজ্ঞাত ৩০০ থেকে ৩৫০ জনকে আসামি করে পটিয়া থানায় মামলাটি দায়ের করেছেন। আসামিরা সবাই পটিয়া উপজেলার বাসিন্দা। মামলাটির তদন্তের দায়িত্বে আছেন পটিয়া থানার উপ-পরিদর্শক ইয়ামিন সুমন।
শিবিরনেতার এই মামলায় আরও যাদের আসামি করা হয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা লিটন বড়ুয়া, যুবলীগ নেতা ডিএম জমির উদ্দিন, মোজাম্মেল হক লিটন, সেলিম চেয়ারম্যান, ইনজামুল হক জসিম, মোহাম্মদ ছৈয়দ চেয়ারম্যান, আমিনুল ইসলাম খান টিপু, আবদুর রাজ্জাক, এহসানুল হক।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, বিবাদীগণ চাঁদাবাজ, অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী, ভূমিদস্যু, একাধিক মামলার আসামি। গত ৪ আগস্ট দুপুর বারোটার দিকে পটিয়ার সাধারণ ছাত্র-জনতা পৌর এলাকার ডাক বাংলোর মোড় হতে শান্তিপূর্ণ মিছিল সহকারে বাইপাস রাস্তার মোড়ে যাওয়ার সময় মিছিলটি পল্লী বিদুৎ সমিতির কার্যালয়ের সামনে পৌছালে পূর্ব থেকে উৎপেতে থাকা ১-৪ নং আসামি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, দিদারুল আলম, আইয়ুব বাবুল ও সামশুজ্জামানের নির্দেশ ও নেতৃত্বে ৫ নং আসামি লিটন বড়ুয়াসহ অন্যান্য আসামিদের হাতে থাকা দেশী ও বিদেশী আগ্নোয়াস্ত্র (পিস্তল, শর্টগান ও বন্দুক) নিয়ে একই উদ্দেশ্যে প্রাণে হত্যার লক্ষ্যে হঠাৎ মিছিলে থাকা লোকজনদের আক্রমণ করে এলোপাতাড়ি গুলি বর্ষণ করে। এসময় আগ্নোয়াস্ত্রের গুলিতে আহত হয় একাধিক ভিকটিম যাদের শরীরের বিভিন্নস্থানে গুলিতে রক্তাক্ত ও গুরুতর জখম সহ মারাত্মকভাবে আহত হয়। এছাড়াও এজাহারনামীয় বিবাদী (২৩-১৫১) এবং তাদের সহযোগী অজ্ঞাতনামা ৩০০-৩৫০ জন বিবাদীরা একই হত্যার উদ্দেশ্যে ইট-পাথর, কুড়াল, চাপাতি, চাইনিজ কুড়াল সহ দেশীয় অস্ত্র-সস্ত্রে সজ্জিত হয়ে শান্তিকামী মিছিলকারী ছাত্র-জনতার উপর এলোপাতাড়ি হামলা করে ছাত্র জনতার একাধিক সদস্য হাতে, পায়ে, পিঠে, বুকে, মাথায়, উরুতে সহ শরীরের বিভিন্নস্থানে গুরুতর রক্তাক্ত জখম হয়।
মামলার অভিযোগে আরও বলা হয়, হামলার সময় আসামীদের গুলিতে ভিকটিম হাফেজ শাহেদুল ইসলাম (২৩) এর মাথার পিছনে ডান পাশে গুলি লেগে মারাত্মক জখমপ্রাপ্ত হয়। ভিকটিম মোঃ মোরশেদ (২১) চোখে, বুকে ও হাতে এবং নাকে গুলিবিদ্ধ হয়। ভিকটিম আবদুল বাসেত (২০) এর কাঁধে গুলিবিদ্ধ হয়। ভিকটিম আরিফুল ইসলাম (২২) এর মাথায়, হাতে, পিঠে ঘাড়ে ও উরুতে গুলিবিদ্ধ হয়। ভিকটিম ইমাদ (২০) এর সারা শরীরে সর্বমোট ২২টি গুলি বিদ্ধ হয়। ভিকটিম আমজাদ (২২) এর সারা শরীরে হকিস্ট্রিকের আঘাতে মারাত্মক ভাবে জখম হয়। ভিকটিম মুঃ ফয়জুল ইসলাম (২৩) এর সারা শরীরে ১৩টি গুলি বিদ্ধ হয়। ভিকটিম মুঃ তে.কি (২০) নিতম্ব ও কোমড়ে গুলিবিদ্ধ হয়। ভিকটিম রবিউল হাসান পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়। ভিকটিম মুঃ ছাবেদ (২৫) এর পাঁজরে ও পায়ে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। ভিকটিম মুঃ হুজাইফা (১৯) এর মুখে গুলিবিদ্ধ হয়। ভিকটিম মুঃ রিয়াজুল করিম ২৩) এর পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়। ভিকটিম মুঃ আ. রায়হান পেটে গুলিবিদ্ধ হয়। ভিকটিম মোঃ ওসমান হাতে বুকে ও নাকে গুলিবিদ্ধ হয়। ভিকটিম নুর কাসেম (২৮) মাথায় ইটের আঘাতে রক্তাক্ত ফাটা জখমপ্রাপ্ত হয়। ভিকটিম মিনার (২০) এর উরুতে গুলি বিদ্ধ হয়ে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। ভিকটিম মোঃ তানজিদ (২৭) এর পিঠে গুলিবিদ্ধ হয়। ভিকটিম মোঃ তৌহিদুল ইসলামের পিঠে ৪টি গুলি লাগে। ভিকটিম মোঃ ইয়াছিরের পায়ে ইট ও হকিস্টিকের আঘাতে গুরুতর হাড়ভাঙ্গা জখমপ্রাপ্ত হয়। ভিকটিম মহিউদ্দিন ফয়সালের মাথায় হকিস্টিক এর আঘাতে রক্তাক্ত ফাটা জখমপ্রাপ্ত হয়।
এতে বলা হয়, ভিকটিমগণ গুলিবিদ্ধ ও আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে রাস্তায় লুটিয়ে পড়লে এবং কেউ কেউ দোকানের গলিতে সহ বিভিন্ন স্থানে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ছুটাছুটি করে একপর্যায়ে গুরুতর জখমের কারণে ‘মৃত’ প্রায় রাস্তায় পড়ে থাকে। আমি সহ উপস্থিত লোকজন এবং মিছিলরত অন্যান্য ছাত্র-জনতা ভিকটিমদের উদ্ধার করে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। বর্তমানেও অনেক ভিকটিমের জীবন সংকটাপূর্ণ অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছে।