এমপি মোছলেমের নামে ১৫ লাখের চেক, চট্টগ্রামে মনোনয়ন বাণিজ্যের নালিশে তোলপাড়

চট্টগ্রামের দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাংসদ মোছলেম উদ্দিন আহমেদের নাম করে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ তুলেছেন চট্টগ্রাম জজ কোর্টের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর কামাল উদ্দিন। তিনি দক্ষিণ জেলা আওয়ামী যুবলীগের লীগের আইন বিষয়ক সহ সম্পাদকও। আসন্ন নির্বাচনে সাতকানিয়া উপজেলার ১৭ নং সোনাকানিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পাইয়ে দিতে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হুসেইন কবির মোছলেম উদ্দিনের নামে ১৫ লাখ টাকার এই চেক গ্রহণ করেন বলে দাবি কামাল উদ্দিনের।

বৃহস্পতিবার (৬ জানুয়ারি) বেলা দুইটায় নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে দেওয়া এক পোস্টে চট্টগ্রাম জজ কোর্টের আইনজীবী ও অতিরিক্ত পিপি মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন অভিযোগ তুলে লিখেছেন— ‘আসন্ন ১৭ নং সোনাকানিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আমাকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাইয়ে দিবে বলে সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হুসেইন কবির চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সংগ্রামী সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা জননেতা জনাব আলহাজ্ব মোসলেম উদ্দিন আহমেদ এম. পির নাম দিয়ে আমার কাছ থেকে ১৫,০০,০০০৳ (পনের লক্ষ) টাকার চেক নিয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে আমাকে মনোনয়ন দেয়া ত দূরে থাক, কেন্দ্রে আমার নামটি পর্যন্ত পাঠায়নি।

সেই চেক ও টাকা ফেরত চেয়ে আইনজীবী কামাল উদ্দিন লিখেছেন, ‘এখন আমি আমার চেক ও টাকা ফেরত চাই। অন্যথায় বিষয়টি নিয়ে আমি তৃণমূলের আশা ভরসার শেষ আশ্রয়স্থল জননেত্রী শেখ হাসিনার দ্বারস্থ হব এবং ফৌজদারি মামলা করতে বাধ্য হব।’

কামাল উদ্দিনের এমন দাবির বিষয়ে সাংসদ ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদের বক্তব্য জানার জন্য তার মুঠোফোন নম্বরে কল করলেও অন্য প্রান্ত থেকে সাড়া মেলেনি।

সাতকানিয়ায় নৌকা প্রতীক নিয়ে এই মনোনয়ন বাণিজ্যে এক মিষ্টি বিক্রেতা ও ইয়াবাবিক্রেতার হাতও দেখছেন কামাল উদ্দিন। তবে কারও নাম উল্লেখ না করে তিনি এও লিখেছেন, ‘আমি মিষ্টি বিয়ারী ও বাবা বিয়ারীকে প্রশ্ন করছি— নমিনেশন দেওয়ার মালিক জননেত্রী শেখ হাসিনা। তো আমার নামটি ৬ জনের মধ্যে কেন্দ্রে পাঠাইলে সমস্যা কোথায় ছিল?’

সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা যে হুসাইন কবিরের মাধ্যমে মোছলেম উদ্দিনের জন্য টাকা দিয়েছেন বলে দাবি কামাল উদ্দিনের, সেই হুসাইন কবির চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘উনি (কামাল উদ্দিন) একটা মস্তিস্ক বিকৃত মানুষ। উনার সাথে গত ৫-৭ বছরে আমার দেখাও হয় নাই। দেখা হলেও কথা হয় নাই। উনার সাথে আমার ফোন বা ফেসবুক কোথাও যোগাযোগ নাই। বিকেল থেকে অনেকেই আমাকে ওই পোস্টের কথা বলেছে। সেখানে যে চেকের ছবি তিনি দিয়েছেন সেটাও একটা এনালগ চেক। এভাবে কি টাকা লেনদেন হয়? লিডার (মোছলেম উদ্দিন) মনোনয়ন দেয়ার জন্য এভাবে কারও কাছ থেকে টাকা পয়সা নিয়েছেন এমন কথা আমি জীবনেও শুনি নাই।’

তবে কামাল উদ্দিনের ওই পোস্টে অনেকেই মোছলেম উদ্দিনের বিরুদ্ধে মনোনায়ন বাণিজ্যের অভিযোগ তুলেছেন রাখঢাক ছাড়াই। তাজুল ইসলাম নামের একজন লিখেছেন, ‘গতবারের মতো এবারও মোসলেম উদ্দিনের সদাগরের ব্যবসা ভাল চলতেছে।’ তবে অনেকে পাল্টা কামাল উদ্দিনকেও প্রশ্ন করেছেন— দলীয় মনোনায়নের জন্য কামাল উদ্দিন টাকা দিয়ে নিজেও অপরাধ করেছেন কিনা।

নাজমুল ইসলাম নামে একজন লিখেছেন , ‘সব বুঝলাম, আগে আপনি বলেন… আপনি ১৫ লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়ে চেয়ারম্যান ইলেকশন করতে চান কেন? কি মধু আছে? জনসেবা করবেন? নাকি লুটের মাল ভাগ করবেন?’

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!