এতিম শিশুকে নির্যাতনকারী সেই মানবাধিকার নেত্রী গ্রেপ্তার, স্বামী পলাতক

মশার কয়েলের ছ্যাঁকা দিয়ে দিয়ে এতিম এক শিশু গৃহকর্মীকে নির্যাতনের দায়ে অভিযুক্ত সেই মানবাধিকার নেত্রী সারাহ সুদীপা ইউনুছকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

শনিবার (২৪ জুলাই) সকালে তাকে বান্দরবান সদরের বনরুপা পাড়ার নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে তার স্বামী ফয়সাল আহমেদ এখনও পলাতক।

এদিকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও চিকিৎসা শেষে নির্যাতিত শিশু জয়নাব আক্তার জোহরাকে (৯) আদালতের নির্দেশে চট্টগ্রামের হাটহাজারীর সেফহোমে (নিরাপদ আবাসন) পাঠানো হয়েছে।

এতিম এক শিশু গৃহকর্মীকে জ্বলন্ত মশার কয়েল দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে নিয়মিতই ছ্যাঁকা দিতেন মানবাধিকার নেত্রী সারাহ সুদীপা ইউনুছ। গৃহকর্ত্রীর এমন নির্যাতন সইতে না পেরে ওই শিশু পালিয়ে এলাকার এক বাসিন্দার কাছে ঘটনা জানালে তিনি তাকে পুলিশের কাছে নিয়ে যান।

ঘটনাটি ঘটে বান্দরবান পার্বত্য জেলার বান্দরবান সদরে। শিশু নির্যাতক ওই মানবাধিকার নেত্রীর নাম সারাহ সুদীপা ইউনুস। তিনি বান্দরবান জজ কোর্টের অ্যাডভোকেট। তিনি নিজেকে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্যানেল আইনজীবী হিসেবে পরিচয় দেন। অন্যদিকে তার স্বামী ফয়সাল কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের অর্গানিয়ার লিগ্যাল অ্যাডভাইজার। সারাহ সুদীপা ও ফয়সাল দুজনেই আইনজীবী।

মঙ্গলবার (২০ জুলাই) জয়নাব আক্তার জোহরা নামের ওই শিশু গৃহকর্মী পালিয়ে গেলেও ঘটনার বিস্তারিত প্রকাশ পায় ফেসবুকে শিশুটির একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর। শিশুটির বয়স নয় বছর।

বুধবার (২১ জুলাই) ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ২ মিনিট ৮ সেকেন্ডের এক ভিডিওতে শিশুটিকে দেখা যায় তার ওপর নির্যাতনের বিবরণ জানাচ্ছে। তাকে নির্যাতনকারী গৃহকর্ত্রী মানবাধিকার নেত্রী সারাহ সুদীপা ইউনুসের নাম উল্লেখ করে শিশুটি নির্যাতন সইতে না পেরে বাসা থেকে পালিয়ে আসার বর্ণনা দেয়। তাকে জ্বলন্ত মশার কয়েল দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে ছ্যাঁকা দিয়ে পুড়ে দেওয়ার নির্মম কাহিনীও সে জানায় ওই ভিডিওতে।

জানা গেছে, শিশুটির মা মারা যাওয়ার পর তার বাবা আর একটি বিয়ে করেন। এরপর সে এতিম হয়ে যায়। পরে তার এক প্রতিবেশী তাকে বান্দরবান সদরের মানবাধিকার নেত্রী সারাহ সুদীপা ইউনুসের বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করার জন্য দিয়ে আসে। আট মাস ধরে সে ওই মানবাধিকার নেত্রীর বাসায় কাজ করে আসছিল।

শিশুটি অভিযোগ করে বলে, ‘সুদীপা ম্যাডাম আমাকে জ্বলন্ত মশার কয়েল দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে ছ্যাঁকা দিয়েছে। উনার স্বামীর খাবার তাড়াতাড়ি বানাইনি বলে ম্যাডাম বলেছে আমাকে বাড়ির দোতলা থেকে ফেলে দিয়ে মেরে ফেলবে।’

নির্যাতন সইতে না পেরে মঙ্গলবার (২০ জুলাই) শিশুটি পালিয়ে এসে এলাকার এক ব্যক্তিকে ঘটনাটি খুলে বলে। পরে বান্দরবানের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কামরুল হাসান বাচ্চু অভিযুক্ত সারাহ সুদীপা ইউনুসের স্বামী ফয়সালের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানেও ওই শিশু গৃহকর্মী তার ওপর চালানো নির্যাতনের বিবরণ তুলে ধরে। পরে কাউন্সিলরের উপস্থিতিতে শিশুটিকে বান্দরবান শহরের হাফেজঘোনা এলাকার রওশন আরা নামে এক নারীর কাছে হস্তান্তর করা হয়।

বৃহস্পতিবার (২২ জুলাই) রওশন আরা নামের ওই প্রতিবেশী বান্দরবান সদর থানায় শিশুটির পক্ষ হয়ে একটি মামলা দায়ের করলে পুলিশ শিশুটিকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও চিকিৎসার জন্য পাঠায়। ২০১৩ সালের শিশু আইনে শিশুদের প্রতি নিষ্ঠুরতার অপরাধে দায়ের করা ওই মামলায় সারাহ সুদীপা ইউনুস (৪০) ও তার স্বামী ফয়সাল আহমেদকে আসামি করা হয়েছে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!