এখনও চেকে স্বাক্ষর করছেন চসিকের বিদায়ী প্রশাসক সুজন, পছন্দের লোক বসাতে আরেক কাণ্ড

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসকের দায়িত্ব থেকে বিদায় নেওয়ার পর বাসায় গোপনে ঠিকাদারের কাজের বিলের চেক স্বাক্ষর করছেন খোরশেদ আলম সুজন। সম্প্রতি ঠিকাদারের বকেয়া পাওনা বাবদ বিভিন্ন বিলের প্রায় ৮০ লাখ টাকার চেকে আগের তারিখ দেখিয়ে স্বাক্ষর করেছেন সদ্য বিদায়ী এই প্রশাসক।

এদিকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তাকে আকস্মিক সরিয়ে দিয়ে অতিরিক্ত প্রধান কর্মকর্তাকে আর্থিক ক্ষমতা অর্পণের দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়েও বিতর্কিত ভূমিকা পালন করেছেন সদ্য বিদায়ী প্রশাসক সুজন— এমন অভিযোগ তুলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এমন আদেশ নিয়মবর্হিভূত।

নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে পাওয়া এক অভিযোগে জানা গেছে, সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসকের দায়িত্ব থেকে বিদায় নেওয়ার পর তার বাসায় গোপনে ঠিকাদারের কাজের বিলের চেক স্বাক্ষর করছেন খোরশেদ আলম সুজন। ১ ফেব্রুয়ারির আগের তারিখ দেখিয়ে সেসব চেকে স্বাক্ষর করছেন তিনি। সম্প্রতি ঠিকাদারের বকেয়া পাওনা বাবদ বিভিন্ন বিলের প্রায় ৮০ লাখ টাকার চেকে স্বাক্ষর করেছেন তিনি। বিষয়টি চসিকের হিসাব শাখায় খোঁজ নিলেই এর সত্যতা মিলবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

এদিকে জানা গেছে, গত ৪ আগস্ট সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন যোগদানের ৮ দিনের মাথায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের হিসাব শাখার প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. সাইফুদ্দিনকে কোনো অভিযোগ ছাড়াই পাঠানো হয় ১৫ দিনের ছুটিতে। পরে ছুটি শেষে নিজ কর্মস্থলে যোগ দিলেও তাকে দেওয়া হয়নি দায়িত্ব পালন করতে। কোনো ধরনের নোটিশ ছাড়াই বিদায়ী প্রশাসক সুজন ওই কর্মকর্তাকে তার দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রাখার নির্দেশ দেন বলে জানা গেছে।

গত ৭ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে নিয়ম না মেনে মো. সাইফুদ্দিনের জায়গায় হিসাব শাখার অতিরিক্ত প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির চৌধুরীকে আর্থিক ক্ষমতা অর্পণের দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়ে অফিস কপিতে স্বাক্ষর করেন প্রশাসক।

ওই আদেশে বলা হয়েছিল, সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক যতদিন দায়িত্ব পালন করবেন, ওই সময় পর্যন্ত অতিরিক্ত প্রধান হিসবারক্ষণ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির চৌধুরী দায়িত্ব পালন করবেন। তবে গত ১ ফেব্রুয়ারি চসিক প্রশাসক বিদায় নেওয়ার পরও এখনও পর্যন্ত হুমায়ুন কবির চৌধুরী প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হিসেবে ওই দায়িত্বে কর্মরত রয়েছেন।

এদিকে মহামান্য রাষ্ট্রপতির এক অফিস আদেশে বলা হয়, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র দায়িত্ব গ্রহণ না করা পর্যন্ত সিটি কর্পোরেশনের অত্যাবশকীয় প্রশাসনিক ও আর্থিক দায়িত্ব পালনের জন্য প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে ক্ষমতা অর্পণ করা হল। এ অফিস আদেশের হিসেব মতে, চসিক প্রশাসকের হিসাব শাখার অতিরিক্ত প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির চৌধুরীকে আর্থিক ক্ষমতা অর্পণের দায়িত্ব পালনের নির্দেশ ছিল নিয়মবর্হিভূত।

জানা গেছে, ১৯৯৮ সালে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন মো. সাইফুদ্দিন। ২০১৪ সালের ৩ জুন হিসাব শাখার ভারপ্রাপ্ত প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হিসেবে তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০২০ সালের ৯ জানুয়ারি প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হিসেবে সাইফুদ্দিনকে নিয়োগ দেয় সিটি কর্পোরেশন।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের তার পদোন্নতিপ্রাপ্ত দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে মো. সাইফুদ্দিন বলেন, ‘আমার কী অভিযোগ সেটাও জানি না। গত ৫ মাস ধরে আমাকে দায়িত্ব থেকে বিরত রাখা হয়েছে। তার আগে আমাকে প্রশাসকের নির্দেশক্রমে ১৫ দিনের ছুটিতে পাঠানো হয়। ছুটিতে যাওয়ার পর থেকে আমার দায়িত্ব পালন করেন অতিরিক্ত প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা।’

তিনি বলেন, ‘ছুটি শেষ করে আসার পর থেকেও অদ্যাবধি আমাকে আমার দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। এখনও পর্যন্ত আমার পদে স্বাক্ষর করছেন অতিরিক্ত প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকতা।’

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক বলেন, ‘সিটি কর্পোরেশনের প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রাখা হয়েছে। তার স্থলে দায়িত্ব পালন করছেন অতিরিক্ত প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা। তদন্ত মোতাবেক ওনার বিচার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। তাই এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা ঠিক না।’

তবে তিনি বলেন, ‘অভিযোগের পর তার অর্পিত দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রাখার পরামর্শ দিয়েছেন প্রশাসক নিজেই।’

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন বলেন, ‘আমি চসিক থেকে বিদায় নেওয়ার পর থেকে আমার সঙ্গে সেখানে কোনো সম্পর্ক নেই। অভিযোগের বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই।’

পরে প্রতিবেদককে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে বক্তব্য নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

২০২০ সালের ৪ আগস্ট খোরশেদ আলম সুজনকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) প্রশাসক নিয়োগ দেয় সরকার। ১৮০ দিন দায়িত্ব পালন শেষে ১ ফেব্রুয়ারি কর্পোরেশন থেকে বিদায় নেন তিনি।

কেএস/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!