দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে অন্তত ২০ কিলোমিটার কমে গেল চট্টগ্রাম ও সিলেটের দূরত্ব। এখন থেকে এই দুই পথের যাত্রীদের আর ঢাকা হয়ে চলাচল করতে হবে না। সেই কারণে অন্তত দুই ঘণ্টা সময় সাশ্রয় হবে যাত্রীদের। এ সবই মিলছে একটিমাত্র সেতুর কারণে, যার নাম তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু। দক্ষিণের যাত্রীরা পদ্মা সেতু দিয়ে মুন্সীগঞ্জ হয়ে শীতলক্ষ্যা সেতু দিয়ে মদনপুর হয়ে এখন থেকে চট্টগ্রাম কিংবা সিলেট যেতে পারবেন।
সোমবার (১০ অক্টোবর) দুপুর ১২টায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেতুটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটি নাম পেয়েছে বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম নাসিম ওসমান সেতু। তবে সেতুটি দিয়ে গাড়িচলাচল শুরু হবে সোমবার রাত ১২টার পর থেকে।
সেতুটি চালু হওয়ার পর যারা খুলনা, যশোর, মাগুরা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া এলাকার মানুষ, তারা পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা শহরে প্রবেশ না করেই সরাসরি চট্টগ্রাম চলে আসতে পারবে। সেক্ষেত্রে একটা বড় দূরত্ব কমে গেল। সেতুটি খুলে দেওয়ার পর দেশের তিনটি জাতীয় মহাসড়ক ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-মাওয়া-খুলনা একে অপরের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হবে। সেতুটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সঙ্গে পদ্মা সেতুর দূরত্ব কমাবে অন্তত ৯ কিলোমিটার।
সোয়া কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতুর দুই পাশে প্রায় দেড় কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ সড়ক রয়েছে। সেতুটা ছয় লেন বিশিষ্ট। চার লেন দিয়ে চলবে দ্রুতগতির যানবাহন, বাকি দুই লেনে চলবে ধীরগতির যানবাহন। ওয়াকওয়েসহ সেতুটিতে ৩৮টি স্প্যান রয়েছে, পাঁচটি নদীতে এবং ৩৩টি পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে। হাঁটার পথসহ সেতুটির প্রস্থ ২২.১৫ মিটার।
২০১০ সালের নভেম্বরে সদর উপজেলার সৈয়দপুর থেকে বন্দরের মদনগঞ্জ এলাকা পর্যন্ত শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর দিয়ে একটি সেতু নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয় সওজ। প্রায় ৩৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে তিন বছরের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ করার কথা থাকলেও পরামর্শক ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঠিক করতে প্রায় ছয় বছর সময় চলে যায়। ২০১৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতুটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। দীর্ঘসূত্রতায় সেতুটির নির্মাণ ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৬০৮ দশমিক ৫৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে সৌদি সরকার ৩৪৫ কোটি ২০ লাখ টাকা ঋণসহায়তা দিয়েছে। চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেড সেতুটি নির্মাণ করে।
শীতলক্ষ্যা নদীটি জেলা সদরের সাথে বন্দর ও সোনারগাঁ উপজেলাকে আলাদা করে রেখেছিল। এ দুটি উপজেলার সঙ্গে জেলা সদরের সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় কাঁচপুর (শীতলক্ষ্যা সেতু-১) হয়ে দীর্ঘ ৩০ কিলোমিটার পথ ঘুরতে হয়। বন্দর উপজেলার মদনপুর থেকে মদনগঞ্জ পর্যন্ত অন্তত তেরোটি খেয়াঘাট রয়েছে। তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু নদীপথের ভোগান্তি থেকে মুক্তি দেবে।
তবে সেতু খুলে দেওয়া হলেও সহসাই পুরো সুফল মিলবে না। কারণ সেতুর পূর্বপাড় মদনগঞ্জ থেকে মদনপুরের ১১ কিলোমিটারের সড়কটি খুবই সংকীর্ণ। এই পথে সবসময়ই যানজট লেগে থাকে। সেতুটি চালু হলে যানবাহনের চাপ যেমন বাড়বে, তেমনি সড়কেও যানজট আরও বাড়বে। তবে মদনগঞ্জ থেকে মদনপুর পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ১৮ ফুট প্রস্থের রাস্তার প্রশস্ততা আরও ৬ ফুট বাড়ানোর কাজ চলছে।
সিপি