এক ম্যাচ বাকি থাকতেই চ্যাম্পিয়ন অদম্য চট্টগ্রাম আবাহনী

চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগ

ম্যাচের শেষ ওভার শুরুর আগেই ডাগআউটে থাকা চট্টগ্রাম আবাহনীর খেলোয়াড়-কর্মকর্তারা গায়ে দিতে শুরু করেন ‘চ্যাম্পিয়ন’ লেখা গেঞ্জি। শেষ ওভারের ৬ বলে ৪৩ রানের অসম্ভব লক্ষ্য পৌঁছাতে পারবে ফ্রেন্ডস ক্লাব সেটি ছিল কল্পনারও বাইরে। আবাহনীর বোলার তৌহিদ দ্বিতীয় বলেই তুলে নেন ফ্রেন্ডস ক্লাবের শেষ উইকেট। ততক্ষণে পুরো মাঠে আবাহনীর খেলোয়াড়-কর্মকর্তাদের বিজয়োল্লাস।

চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা (সিজেকেএস) আয়োজিত সুপার ফোরে নিজেদের দ্বিতীয় খেলায় ফ্রেন্ডস ক্লাবকে ৪৩ রানের হারিয়ে শিরোপা পুনরুদ্ধার করে চট্টগ্রাম আবাহনী। তাও এক ম্যাচ বাকি থাকতে।

শেষ ম্যাচে চট্টগ্রাম আবাহনী খেলবে ব্রাদার্স ইউনিয়নের সাথে। সেই ম্যাচে তারা হারলেও চ্যাম্পিয়নের পথে কোন বাধা হবে না। কারণ এখনো পর্যন্ত লিগে একমাত্র অপরাজিত দল চট্টগ্রাম আবাহনীই।

জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সোমবার (১৪ মার্চ) অনুষ্ঠিত ম্যাচে সকালে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে চট্টগ্রাম আবাহনী।

দলের নিয়মিত অধিনায়ক সাজ্জাদুল হক রিপনের অনুপস্থিতিতে প্রথমবারের মতো সুযোগ পেয়ে সাইদুল ইসলাম সাঞ্জুকে নিয়ে ইনিংসের গোড়াপত্তন করেন ওমর হাসান।

এ দুজন ৬.৫ ওভারে আবাহনীকে ৩৩ রানের সূচনা এনে দেন। ৩১ বলে ২৩ রান করা ওমরের বিদায়ের পর শোয়েব এসে জুটি গড়েন সাঞ্জুর সাথে। এ দুজন দলের রান নিয়ে যান ১০৫-এ। বাইশতম ওভারের চতুর্থ বলে শোয়েব ১৯ রান করে হিমেলের বলে এলবিডব্লু হয়ে যান।

আগের ম্যাচে ৭৩ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলা ইমরান এদিন কিছুটা শ্লথ গতিতে খেলে ৬১ বলে ৩৮ রান করে আউট হয়ে যান। অবশ্য তার আগে হিমেলের বলে সাজঘরে ফিরে মাত্র ২ রানের জন্য নিজের অর্ধশতক পূর্ণ করতে পারেননি সাঞ্জু। এক হালি চার ও একজোড়া ছয়ে ৪৮ রানের ইনিংসটি খেলার জন্য তিনি বল ব্যয় করেন ৫৭টি।

ছয় নম্বরে ব্যাট করতে নেমে ফজলে রাব্বিও বলের সাথে পাল্লা দিয়ে রান তুলতে পারেননি। তিনি ২৫ রান করতেই বল খেলেন ৪০টি। ফলে চট্টগ্রাম আবাহনী তাদের রান দুইশ পূর্ণ করতে পারে ৪৫ ওভারে গিয়ে।

এরপরই ভোজবাজির মতো বদলে যায় ম্যাচের চিত্রনাট্য। যেখানে ত্রাতা ভূমিকায় অবতীর্ণ হন চট্টগ্রাম আবাহনীর আবু বক্কর জীবন। তিনি সাগরপাড়ের সাগরিকা স্টেডিয়ামে তুলেন টর্নেডো। ফ্রেন্ডস ক্লাবের বোলারদের বলগুলো তিনি একের পর এক সীমানা ছাড়া করেন। তার কোনটি মাটি কামড়ে হলেও অনেকগুলো ছিল হাওয়ায় ভাসিয়ে। তার ব্যাটিং তাণ্ডবে শেষ ৫ ওভারে ৭২ রানের পুঁজি পায় আবাহনী। জীবন মাত্র ২৬ বলে আধা ডজন ৪ আর পাঁচটি ৬-এ খেলেন ৬৬ রানের ঝোড়ো ইনিংস।

আবাহনী থামে এবারের লিগে সর্বোচ্চ ২৭৮ রানে। মাত্র আগের ম্যাচেই পাইরেটস এর বিপক্ষে ২৭৬ রান করেছিল তারা। ফ্রেন্ডস ক্লাবের হয়ে সাদ্দাম ও হিমেল নেন ২টি করে উইকেট।

এক ম্যাচ বাকি থাকতেই চ্যাম্পিয়ন অদম্য চট্টগ্রাম আবাহনী 1
ম্যাচ সেরা আবু বক্কর জীবনের হাতে পুরস্কার তুলে দেন ফোর এইচ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গাওহার সিরাজ জামিল

নিজেদের আগের ম্যাচে ব্রাদার্স ইউনিয়নের বিপক্ষে দুই শতাধিক রান তাড়া করতে গিয়ে ফ্রেন্ডস ক্লাব জিতেছিল ১ উইকেটে। ‘বিগ ফিশ হান্টার’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া ফ্রেন্ডস ক্লাব ২৭৯ রানের বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রথম ওভারেই তারা উইকেট হারায়।

পরবর্তী ৯ ওভারে আর কোন উইকেট না পড়লেও এরপর আবার নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পড়তে থাকে ফ্রেন্ডস ক্লাবের।

২১.৪ ওভারে ৯৮ রানের মাথায় তারা হারায় ৪ উইকেট। এর মধ্যে রয়েছে ওপেনিংয়ে নেমে দারুণ খেলা উদয় ভুঁইয়াও। ৭৮ বলে ৭১ রান করা উদয়ের ইনিংসের অস্ত ঘটান আবাহনীর জীবন। শেষ পর্যন্ত জীবনের হাতে প্রাণ দেয় ফ্রেন্ডস ক্লাবের ৪ ব্যাটসম্যান। জীবনের স্পিন বিষের মাঝেও ফ্রেন্ডসকে লড়াইয়ে রেখেছিলেন পাঁচ নম্বরে নামা শাওন কাজী সুমন। আবাহনীর অফ স্পিনার বাপ্পার ৩ শিকারের এক শিকারে পরিণত হওয়ার আগে শাওন খেলেন স্বপ্ন দেখানো ৭৭ রানের প্রত্যয়ী ইনিংস। শেষ পর্যন্ত ফ্রেন্ডস ক্লাবের দৌঁড় থেমে যায় ২৩৫ রানে।

জীবন ১০ ওভার বল করে ৩৮ রান দিয়ে নেন ৪ উইকেট। বাপ্পা ২৩ রানে ৩ উইকেট। অলরাউন্ডিং পারফরম্যান্স করা জীবন হন ম্যান অব দ্য ম্যাচ। তার হাতে পুরষ্কার তুলে দেন চট্টগ্রাম আবাহনী দলকে স্পন্সর করা ফোর এইচ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গাওহার সিরাজ জামিল।

আবাহনী চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় এখন বাকি ম্যাচগুলোতে নির্ধারিত হবে লিগের রানার আপ।

এমএহক

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!