জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় বিগত দুই বছরের তুলনায় এ বছরের ফল কিছুটা ভালো। তবে এর আগের দুই বছরের তুলনায় কম। এছাড়া জিপিএ-৫ গত বছরের তুলনায় বেশি হলেও এর আগের বছরের চেয়ে খুব একটা ভালো নয়। বিষয়ভিত্তিকে পাসের হার আগের চেয়ে ভালো হলেও শতকরা হিসেবে গড় পাসের হারে অন্য বোর্ডের চেয়ে পিছিয়ে আছে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড।
দেশের ৯টি শিক্ষাবোর্ডের মধ্যে ৭টিই চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডকে পেছনে ফেলেছে। কেবল ঢাকা শিক্ষাবোর্ডকে টপকাতে পেরেছে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগের চেয়ে পাসের হার বাড়লেও তিন পার্বত্য জেলায় পাসের হার কম ও এক বিষয়ে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ায় সার্বিক ফলে এই প্রভাব পড়েছে। যে কারণে গড় হারে পিছিয়ে গেছে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে এবার পাসের হার ৮২ দশসিক ৯৩ শতাংশ। যা ২০১৭ ও ২০১৮ সালে পাসের হার ছিল যথাক্রমে ৮১ দশমিক ১৭ ও ৮১ দশমিক ৫২ শতাংশ। এর আগের দুই বছরে পাসের হার এর চেয়েও ভালো ছিল। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে পাসের হার ছিল যথাক্রমে ৮৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ ও ৯০ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
এবারের ফলে পাসের হারে সবচেয়ে এগিয়ে বরিশাল বোর্ড। পাসের হার সবচেয়ে কম ঢাকা বোর্ড। আর চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড টপকাতে পেরেছে ঢাকাকে ।
২০১৯ সালে ঢাকা শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার ৮২ দশমিক ৭২ শতাংশ, রাজশাহীতে ৯৪ দশমিক ১০ শতাংশ, কুমিল্লায় ৮৮ দশমিক ৮০ শতাংশ, যশোরে ৯১ দশমিক ৮ শতাংশ, বরিশালে ৯৭ দশমিক ৫ শতাংশ, সিলেটে ৯২ দশমিক ৭৯ শতাংশ, দিনাজপুরে ৮৩ দশমিক ৯২ শতাংশ এবং ময়মনসিংহে ৮৭ দশমিক ২১ শতাংশ।
এদিকে, চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে মোট ৬ হাজার ৪১ জন। গতবছর পেয়েছে ৫ হাজার ২৩১ জন।
চট্টগ্রাম মহানগরে পাসের হার ৮৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ যা গতবার ছিল ৮৭ দশমিক ১৯ শতাংশ। মহানগর বাদে চট্টগ্রাম জেলার পাসের হার ৮১ দশমিক ১৬ শতাংশ যা গতবার ছিল ৭৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ। মহানগরসহ চট্টগ্রাম জেলার পাসের হার ৮৩ দশমিক ২৪ শতাংশ, যা গতবারের তুলনায় ২ দশমিক ০৬ শতাংশ বেশি।
অন্যদিকে, কক্সবাজারে পাসের হার ৮৪ দশমিক ১০ শতাংশ, রাঙামটিতে ৭৯ দশমিক ৫০ শতাংশ, খাগড়াছড়িতে ৮০ দশমিক ৮৮ শতাংশ এবং বান্দরবানে ৭৯ দশমিক ৭৭ শতাংশ।
মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে ফলাফল প্রসঙ্গে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথ বলেন, ‘এবার পাসের হার ও জিপিএ-৫ দুটোই গত বছরের তুলনায় বেড়েছে। ‘
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এবারের ফলে আমরা পুরোপুরি সন্তুষ্ট, আবার সন্তুষ্ট না- এটা বলা কঠিন। তিনটি পার্বত্য জেলার কারণে পাশের হারে বোর্ড পিছিয়ে পড়ে। ওই তিন জেলায় পাশের হার কম। এটাই মূলত কারণ। ‘
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথ আরও বলেন, ‘পাহাড়ের জনগোষ্ঠী একটু পিছিয়ে পড়া। তাদের আরও পৃষ্ঠপোষকতা ও সহযোগিতা দরকার। এখন তাদের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আশা করি সুফল মিলবে।’
এক বিষয়ে ফেল বাড়ায় কমেছে পাস
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে অংশ নেয়া পরীক্ষার্থীদের মাঝে এক বিষয়ে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৬ হাজার ১ জন যা গতবারের তুলনায় কম। শতকরা হিসেবে এক বিষয়ে অকৃতকার্যের হার ১২ দশমিক ৬৩ শতাংশ। তবুও ফলে প্রভাব পড়েছে। এবার বিষয়ভিত্তিক হিসেবে পাসের হার বাংলায় ৯৮ দশমিক ৮০ শতাংশ, গণিতে ৯১ দশমিক ৩০ শতাংশ, ইংরেজিতে ৯১ দশমিক ৫৯ শতাংশ এবং বিজ্ঞানে ৯৬ দশমিক ২৪ শতাংশ। অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে আইসিটিতে ৯৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ এবং বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বিষয়ে ৯৮ দশমিক ১০ শতাংশ। এছাড়া ধর্মীয় বিষয়গুলোতে পাসের হার ৯৯ শতাংশের উপরে।
বিষয়ভিত্তিক পাসের হার এত বেশি হওয়ার পরও গড় পাসের হার কম হওয়া প্রসঙ্গে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথ বলেন, ‘যে শিক্ষার্থী গণিতে পাস করেছে হয়তো ইংরেজিতে ফেল করেছে। আবার অন্য বিষয়গুলোতে পাস করেছে। কিন্তু ইংরেজিতে ফেল করেছে। কেউ হয়তো আবার গণিতে ফেল করেছে। এক বিষয়ে ফেল বাড়ার কারণেই এবার ফলে প্রভাব পড়েছে।
এদিকে, গণিত বিষয়ে শতভাগ পাস করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২৭৫টি যা গতবারের তুলনায় বেশি। গতবার ছিল ২০৯টি। ইংরেজি বিষয়ে শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২২২টি। যা গতবারের তুলনায় বেশি। গতবার ছিল ১৯৩টি প্রতিষ্ঠান।
ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা এগিয়ে
এবারের জেএসসি পরীক্ষায় এ বছর চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ২ লাখ ৮ হাজার ৯৬২ জন। পাসের হার ৮২ দশমিক ৯৩ শতাংশ। পাস করেছে ১ লাখ ৭০ হাজার ৭৩৪ জন। এরমধ্যে ছাত্র ৯১ হাজার ৭৯ জন এবং ছাত্রী ১ লাখ ১৪ হাজার ৭৯২ জন। মোট পাসের হার গত বছরের তুলনায় ১ দশমিক ৪১ শতাংশ বেশি এবং মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬ হাজার ৪১ জন শিক্ষার্থী। যা গতবারের তুলনায় ২ দশমিক ৯৩ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে জিপিএ ৫ প্রাপ্ত ছাত্রী ৩ হাজার ৬২২ জন এবং ছাত্র ২ হাজার ৪১৮ জন শিক্ষার্থী। পাসের হারেও মেয়েরা এগিয়ে। ছাত্র পাসের হার ৮২ দশমিক ৭৯ শতাংশ এবং ছাত্রী পাসের হার ৮৩ দশমিক ০৫ শতাংশ। জিপিএ ৫ এর দিক থেকেও এগিয়ে রয়েছে মেয়েরা। জিপিএ ৫ প্রাপ্ত ছাত্রী ৩ হাজার ৬২২ এবং ছাত্র ২ হাজার ৪১৯ জন।
এসআর/এসএ