ঘাটে নৌকা রাখার জন্য প্রতিদিন জেলেদের চাঁদা দিতে হয় ২০০ টাকা। প্রতিদিন দুইবার নদীতে মাছ ধরতে যাওয়ার জন্য প্রতিটি নৌকাকে দিতে হয় আরও ২০০ টাকা। মাছ ধরে নদীর পাড়ে উঠলে দিতে হয় ১০০ টাকা। বাজারে বিক্রি করতে গেলে প্রতি খাঁচা মাছের জন্য দিতে হয় ১০০ টাকা। এভাবে এক নৌকার জেলেদেরই দিনে ৬০০ টাকা চাঁদা দিতে হয় সন্দ্বীপের গাছুয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবালকে।
উপজেলা পরিষদের কাছ থেকে গাছুয়ার আমির মোহাম্মদ ফেরী ঘাটে ‘গোদীঘাট ইজারা’ নেওয়ার সুবিধা কাজে লাগিয়ে গত একমাস ধরে এভাবেই জেলেদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করে আসছিলেন ইকবাল। আমির মোহাম্মদ ফেরিঘাটের ২০টি নৌকায় দুই শতাধিক জেলে মাছ ধরতে যান বলে গাছুয়া ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে।
ইকবালের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে জেলেরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দ্বারস্থ হলে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের মধ্যস্থতায় রোববার (৫ জুন) গাছুয়া ইউনিয়ন পরিষদে জেলেদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেন সন্দ্বীপের সাংসদ মাহফুজুর রহমান মিতা। জেলেদের অভিযোগ শুনে তিনি জেলেদের কোনরকম চাঁদা দিতে নিষেধ করেন। কেউ চাঁদা দাবি করলে তাকে সাংসদের কাছ থেকে টাকা নিতে বলার জন্য জেলেদের পরামর্শ দেন তিনি। সাংসদের নিষেধের পরেও অব্যাহতভাবে চাঁদা আদায় করতে থাকেন যুবলীগ নেতা ইকবাল।
সোমবার (৬ জুন) একই কায়দায় জেলেদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করতে গেলে গাছুয়া ইউনিয়ন গ্রামপুলিশ ও স্থানীয় জনসাধারণ মিলে ইকবালের দুই সহযোগী সুমন ও সাহাবউদ্দিনকে অস্ত্রসহ আটক করে। পরে তাদের সন্দ্বীপ থানায় হস্তান্তর করা হয়।
বিষয়টি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে নিশ্চিত করেছেন গাছুয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওমর পারভেজ। আটক হওয়া দুজনসহ আরও তিনজনের নাম উল্লেখ করে সন্দ্বীপ থানায় চাঁদাবাজি ও অস্ত্র আইনে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। মামলায় আসামি হওয়া অন্য তিন আসামি হলেন ইকবাল, রনি ও ওয়াসিম। এরা সকলেই স্থানীয় যুবলীগের নেতাকর্মী।
এই ধরনের চাঁদাবাজি নজিরবিহীন উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ নেতা ওমর পারভেজ বলেন, ‘আমির মোহাম্মদ ফেরীঘাট জেলেদের জন্য আলাদা করে ইজারা দেওয়া নজিরবিহীন। এমন চাঁদাবাজিও আগে ঘটেনি। এমনকি এমপি মহোদয় না করার পরেও তারা বলেছে এমপি বললে হবে না, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে লিখিত দিতে হবে। আমরা এই ইজারা বাতিলের জোর দাবি জানিয়েছি। আশা করছি এই ইজারা বাতিল করা হবে। জেলেদের এভাবে নিষ্পেষণ করার সুযোগ নেই।’
এদিকে আমির মোহাম্মদ ফেরী ঘাটে আলাদা করে দেওয়া গোদী ঘাটের ইজারা বাতিল করা হবে জানিয়ে সন্দ্বীপের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিদর্শী সম্বৌধি চাকমা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এখানে আসলে কী ঘটেছে তা আমি জানি না। আমাকে কেউ জানায়নি। তবে গোদীঘাটের ইজারা বাতিল করা হবে। আমরা এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
এআরটি/সিপি