ভালোবাসা দিবসে পৃথিবীর মুখ দেখেই কঠিন এক বাস্তবতার মুখোমুখি হয় চট্টগ্রামের আনোয়ারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ফেলে যাওয়া মেয়ে নবজাতককে। তাকে দত্তক পেতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন প্রায় শতাধিক মানুষ। গত রোববার রাতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেয়ের জন্ম দেন এক নারী। এরপর নবজাতককে ফেলে চলে যান তার মা ও স্বজনেরা।
রোববার (১৩ ফেব্রুয়ারি) রাত দশটায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বাঁশখালীর সাধনপুরের ঠিকানা দিয়ে বিলকিছ আকতার নামে (১৮) এক নারী আসেন চিকিৎসা নিতে। সঙ্গে ছিলেন আরও দুজন নারী। রোববার দশটার দিকে হাসপাতালে কন্যা সন্তানের জন্ম দেওয়ার কয়েক ঘন্টা পর শিশুটির মাসহ সঙ্গে আসা দুজনই নবজাতককে হাসপাতালের বেডে রেখে চলে যান।
সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানতে পেরে আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ জোবায়ের আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি দুপুরে কন্যা শিশুটিকে কোলে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মায়ের সন্ধান চেয়ে পোস্ট দেন।
ঘটনাটি জানাজানি হলে আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ জোবায়ের আহমেদ নবজাতককে তার কার্যালয়ে নিয়ে যান। নবজাতককে কোলে নিয়ে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেন। ছবিটি মুহূর্তেই অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে।
মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সারা দিন ইউএনওর কার্যালয়ে সশরীর হাজির হয়ে এবং অনেকে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে নবজাতককে দত্তক নিতে আগ্রহ দেখিয়েছেন।
ইউএনও শেখ জোবায়ের আহমেদ বলেন, মঙ্গলবার সারাদিন শতাধিক মানুষ নবজাতককে দত্তক নিতে যোগাযোগ করেছেন। নবজাতককে হাসপাতালের এক কর্মীর কাছে রাখা হয়েছে। সে সুস্থ আছে।
দেশের অন্য আরও অনেক এলাকার মতোই চট্টগ্রামেও কন্যাসন্তান জন্ম দেওয়া নিয়ে ঘটে অপ্রীতিকর নানা ঘটনা। কন্যাশিশু জন্ম দেওয়ার ‘অপরাধে’ অনেক মাকেই শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়। এই ঘটনায় তেমন কোনো কারণ ছিল কিনা— উধাও হয়ে যাওয়া সেই মায়ের খোঁজ না পাওয়ায় এখন পর্যন্ত তা স্পষ্ট নয়।
এদিকে প্রায় একই সময়ে লালমনিরহাটের এক রাস্তা থেকে উদ্ধার হওয়া নবজাতক শিশুকে দত্তক নিতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আবেদন করেছেন অর্ধশতাধিক দম্পতি লালমনিরহাট সদর থানার অফিসার ইনচার্জ শাহা আলম জানান, সোমবার রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত এই ৪০ দম্পতি তাকে ফোন করে শিশুটিকে দত্তক নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তবে পুলিশ ওই নবজাতকের প্রকৃত অভিভাবককে খুঁজে বের করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে তদন্ত শেষে পুলিশ আদালতকে অবহিত করবে এবং আদালতই শিশুটিকে দত্তক দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন ওসি।
সিপি