চট্টগ্রাম এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেসিয়াম মাঠে আয়োজিত একুশে বইমেলায় স্কুলবেলার ছড়া-কবিতা নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে ব্যতিক্রমধর্মী একটি সংকলন। স্বাধীনতার পর থেকে শুরু করে গত দশক পর্যন্ত প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত বাংলা পাঠ্যবইয়ের সব ছড়া ও কবিতা নিয়ে এ সংকলনটি করা হয়েছে।
শিক্ষা গবেষক ও লেখক, সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের শিক্ষক প্রশিক্ষক ড. শামসুদ্দীন শিশির এবং তরুণ গল্পকার-সাংবাদিক আবু মোশাররফ রাসেল যৌথভাবে এ সংকলনটি করেছেন। এটি প্রকাশ করেছে স্বনামধন্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান বইবেলা প্রকাশন। মেলায় ইতোমধ্যে বইটি সব শ্রেণীর পাঠকের মধ্যে সাড়া ফেলেছে। চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব ও আপন আলো স্টলে বইটি পাওয়া যাচ্ছে।
বইটির ফ্ল্যাপে ‘মিষ্টি ছড়ায়-প্রিয় কবিতায় ফিরে যাই সেই স্কুলবেলায়’ শিরোনামে বলা হয়েছে, প্রতিটি মানুষের জীবনের সবচেয়ে উজ্জ্বলতম সময় হলো তার শৈশব-কৈশোর। মানবজীবন অতি ক্ষুদ্র, সময় গড়িয়ে যায় দ্রুতই। পরিণত বয়সের যে কাউকে যদি প্রশ্ন করা হয় তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠতম, সুন্দরতম এবং মধুরতম সময় কোনটি? সবাই চোখ বন্ধ করে এক কথায় উত্তর দেবেন—‘স্কুলজীবন’। সেই সময়ের পাঠ্যসূচির কথা মনে পড়লেই অবধারিতভাবে প্রত্যেকের মনে পড়ে যায় শৈশবের মিষ্টি ছড়া কিংবা কবিতার প্রিয় কোনো পঙক্তি।
মা-বাবার মুখে মুখে কিংবা স্কুলে শিক্ষকের সাথে মিষ্টি ছড়া দিয়ে শুরু হয় শিশুর প্রথম পাঠ। যে বয়সে মস্তিষ্কের গঠন আর শারীরিক-মানসিক বিকাশ শুরু হয় সেই সময়ে পড়া মিষ্টি কোনো ছড়া কিংবা প্রিয় কবিতারা গেঁথে যায় কচি মনের গভীরে।
স্কুলবেলায় প্রথম শ্রেণী থেকে মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত সব শ্রেণির বইয়ে পাঠ্য হয়েছে বিখ্যাত কবি-সাহিত্যিকদের লেখা নানা ধরনের ছড়া-কবিতা। শিশুর বয়স অনুযায়ী তাকে আনন্দ দেওয়া এবং সুস্থ মনন গঠনের অংশ হিসেবে পাঠ্য হওয়া সেসব কবিতা ধাপে ধাপে তার মানসপটে পরিবর্তন ঘটাতে থাকে। স্কুলজীবনের কোনো ছড়া শিশুকে আনন্দ দেয়, কোনো ছড়া তাকে ভাবিয়ে তুলে গভীর কোনো বিষয়ে, কোনো কবিতা তাকে জীবনচলার পথে বাধা ডিঙানোর শিক্ষা দেয়, কোনো কবিতা তাকে করে তুলে দৃঢ় সাহসী-অসীম প্রত্যয়ী, কোনো কবিতা তার ভেতরে জাগিয়ে তুলে নৈতিক-দর্শন, মানবিকচর্চার সংস্কৃতি। এভাবে সেই ছড়া-কবিতাগুলো প্রতিটি মানুষের জীবনে শৈশবের আনন্দ, কৈশোরের ভালোলাগা কিংবা প্রিয় অনুষঙ্গ হয়ে চিরদিন স্মৃতিতে ভেসে থাকে। কিন্তু সময়ে সাথে সাথে, বয়সের সাথে সাথে স্মৃতি থেকে সেগুলো হারিয়ে যেতে থাকে, অনেক ক্ষেত্রে পাঠ্যবই থেকেও উঠে যায় সময়ের প্রয়োজনে।
স্কুলবেলার সেই ছড়া-কবিতাগুলো প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে হৃদয় জুড়িয়ে, আমাদের আবহমান সংস্কৃতির সাথে মিশে—চিরন্তন ঐতিহ্যের অংশ হয়ে আছে। কোলাহলপূর্ণ জীবনের ক্ষণিক অবসরে মানুষ যখন তার ফেলে আসা শৈশবকে হাতড়ে বেড়ায়…কখনো কখনো অনেক চেষ্টা করেও খোঁজে পাওয়া যায় না মিষ্টি ছড়াটি কিংবা কবিতার প্রিয় পংক্তি। ধীরে ধীরে বিস্মৃত হতে যাওয়া সেই ছড়া-কবিতাগুলো এক মলাটে স্মৃতিকাতর প্রজন্মের হাতে তুলে দিতে এই সংকলন।
বইটির প্রসঙ্গে মেলায় কথা হয় শিক্ষক প্রশিক্ষক ড. শামসুদ্দীন শিশিরের সাথে। তিনি বলেন, স্কুলজীবনে পড়া মিষ্টি ছড়া কিংবা কবিতাগুলো প্রতিটি মানুষের শৈশব স্মৃতির সাথে গেঁথে আছে। কিন্তু বয়সের সাথে সাথে সেগুলো স্মৃতি থেকে হারিয়ে যায়, অনেকে সেই কবিতাগুলো এখানে সেখানে খুঁজে বেড়ান। তাদের সেই স্মৃতির তৃষ্ণা মেটাতেই ব্যতিক্রমধর্মী সংকলনের উদ্যোগ নিয়েছিলাম আমরা। আমার সাথে যুক্ত হয়ে তরুণ গল্পকার ও সাংবাদিক আবু মোশাররফ রাসেল কাজটিকে সহজ উপভোগ্য করে তুলেছেন। বইটি বেশ সাড়া ফেলেছে মেলায়। আশা করছি, এটা সবার কাছে প্রয়োজনীয় একটি বই হিসেবে থাকবে।