একাউন্টে টাকাই ঢোকেনি, সেই উকিলের আড়ালে অন্য কারও হাত দেখছেন এমপি মোছলেম

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদকে ঘিরে মনোনয়ন বাণিজ্যে অভিযোগের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে নিজেদের অবস্থান জানিয়েছে দক্ষিন জেলা আওয়ামী লীগ।

সংবাদ সম্মেলনে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চান্দগাঁও বোয়ালখালী আসনের সংসদ সদস্য মোছলেম উদ্দিন বলেন, ‘মনোনয়ন দেয়ার কোন এখতিয়ার আমাদের নেই। আমরা সবার সাথে আলোচনা করে কেন্দ্রে তালিকা পাঠিয়েছি। সেখান থেকে মনোনয়ন বোর্ড যাকে যোগ্য মনে করেছে তাকে মনোনয়ন দিয়েছে।’

এক্ষেত্রে সবাইকে সন্তুষ্ট করতে না পারলেও দলের ভাবমূর্তি রক্ষার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন দাবি করে এই নেতা বলেন, ‘আমি হয়তো সবাইকে সন্তুষ্ট করতে পারিনি, তবে সবার সঙ্গে বিনয়ী আচরণ করেছি। সবসময় দলের ভাবমূর্তি রক্ষায় কাজ করার চেষ্টা করে গিয়েছি।’

সংবাদ সম্মেলনে মোছলেম উদ্দীন আহমদ বলেন, ‘সম্প্রতি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন পাইয়ে দিতে আমার নাম ব্যবহার করে ফেসবুকে যে পোস্ট দেওয়া হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আমার নাম ব্যবহার করে কেউ পোস্ট করলে তার দায় আমি নিব না। আমি মানুষ, রাজনীতি করতে গিয়ে চলার পথে ভুল-ত্রুটি হতেই পারে। তবে এখন যে অভিযোগ উঠেছে, এ ধরনের কোনও অন্যায় কাজ আমি করিনি। গণমাধ্যমে নিউজ দেখে আমি হতাশ হয়েছি। আমাদের ভুল নেই, সেটা বলবো না। দলীয় কিছু বিষয় আছে, যেগুলো জনগণের সামনে বলা যায় না।’

কামাল উদ্দিনের অভিযোগকে অপপ্রচার হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কিন্তু দুর্ভাগ্য, একটি ঘটনা আমাকে মর্মাহত করেছে। ফেসবুকে আমাকে নিয়ে কামাল উদ্দিন নামে একজন অপপ্রচার করেছে।’

মোছলেম উদ্দিন বলেন, ‘যে লোক (কামাল উদ্দিন) এ কাজ করেছে তা কেন করেছে আমার জানা নেই। সে লোকই আবার গতকার ফেসবুকে আমার প্রশংসাও করেছেন। আমার কাছে ক্ষমাও চেয়েছেন। তার প্রতি আমার কোন অভিযোগ নেই বরং আমি তার নিরাপত্তা নিয়েই ভাবছি। তাকে পেছন থেকে হয়তো ইন্ধন দিচ্ছে।’

তিনি এই ধরনের কোন কাজের সাথে সম্পৃক্ত নন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তবে অন্যায় কাজে আমার কোনও সংশ্লিষ্টতা ছিল না। তবুও আমার কোনও অন্যায় হয়ে থাকলে এবং তা প্রমাণ করতে পারলে আমি যে কোনও ধরনের শাস্তি মাথা পেতে নিতে রাজি আছি। তাই আমি এ ব্যাপারে গণমাধ্যমের নিরপেক্ষ উপস্থাপনা কামনা করবো।’

এক পর্যায়ে তিনি বলেন, ‘ভয়ে আমি আমার ব্যাংক স্টেটমেন্ট পর্যন্ত তুলেছি। এটা চেক করে দেখুক। আমার একাউন্টে কোন টাকা ঢুকেছে কিনা। তাছাড়া কামাল উদ্দিনের অভিযোগের বিষয়েও সুষ্ঠু তদন্ত হোক।’

সিআরবিতে হাসপাতালের পক্ষে অবস্থান নেয়ায় মিডিয়া তার প্রতি অবিচার করছে এমন দাবি করে মোছলেম উদ্দিন বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে সিআরবিতে হাসপাতাল তৈরি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমরা সরকার পক্ষের লোক, সরকার যেটা করে সেটা সমর্থন করা স্বাভাবিক। আবার কারও বিরোধিতা করার অধিকার রয়েছে। আমরা কোন পক্ষে, তার জন্য আমাদের বর্জন করে নিউজ ছাপানো হবে না, সেটা আমাদের ওপর অবিচার। আমি জননেত্রী শেখ হাসিনার কর্মী, আমি তার পক্ষে থাকবো। আমি সরকারের অংশ, এটাই স্বাভাবিক।’

এসময় জামায়াত নেতা মুমিনুল হক চৌধুরীর ছেলে রুহুল্লা চৌধুরীর মনোনয়ন দেয়ার অভিযোগের ব্যাপারে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মোছলেম উদ্দিন বলেন, ‘মুমিনুল হকের ছেলে রুহুল্লাহর নাম আমরা পাঠাইনি। আমরা পাঁচজনের নাম পাঠিয়েছিলাম, কেন্দ্রে অনেকের নাম পাঠানো না হলেও সেখানে যুক্ত করেছে। কেন্দ্র থেকে যারা মনোনয়ন ফরম নিয়ে থাকে, তাদের নামও যুক্ত করা হয়ে থাকে অনেক সময়। জামায়াতের সাথে রুহুল্লার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে দলীয় সভানেত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগ করেছে সাতকানিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।’

প্রসঙ্গত গত ৬ জানুয়ারি বেলা দুইটায় নিজের ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন লিখেন, ‘আসন্ন ১৭ নম্বর সোনাকানিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আমাকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাইয়ে দিবে বলে সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হুসেইন কবির দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সংগ্রামী সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা জননেতা মোছলেম উদ্দিন আহমদ এমপির নাম দিয়ে আমার কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকার চেক নিয়েছেন। কিন্তু দুখের বিষয় হচ্ছে, আমাকে মনোনয়ন দেওয়া তো দূরে থাক, কেন্দ্রে আমার নামটি পর্যন্ত পাঠায়নি। এখন আমি আমার চেক ও টাকা ফেরত চাই। অন্যথায় বিষয়টি নিয়ে আমি তৃণমূলের আশা ভরসার শেষ আশ্রয়স্থল জননেত্রী শেখ হাসিনার দ্বারস্থ হবো এবং ফৌজদারি মামলা করতে বাধ্য হবো।’

এই স্ট্যাটাস দেয়ার পর ফেসবুকে মোছলেম উদ্দিন আহমদ এমপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোর অভিযোগে সোমবার (১০ জানুয়ারি) আদালতে মামলা দায়ের করা হয়। মামলার আসামি মো. কামাল উদ্দিন চট্টগ্রাম জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) ও দক্ষিণ জেলা যুবলীগের আইন বিষয়ক সহ সম্পাদক।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান প্রমুখ ।

এআরটি/এমএহক

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!