আফসানা বেগমের (ছদ্মনাম) বিয়ে হয় প্রায় ৪ মাস আগে। স্বামীর বাড়ি চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলার ১৩ নম্বর মায়ানী ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায়। বিয়ের কিছুদিন যেতে না যেতে স্বামীর অত্যাচারের শিকার হন এই গৃহবধু।
সমাধান চাইতে দারস্থ হন স্বামীর নানা সম্পর্কের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিনের কাছে। সেখানে সমাধানের পরিবর্তে উল্টো গিয়াস উদ্দিন ওই নারীকে দেন কু-প্রস্তাব। গিয়াস উদ্দিনের পক্ষ থেকে এই অনৈতিক প্রস্তাবের বিষয়ে কাউকে কিছু না বলতে ওই নারীকে দেওয়া হয়েছে হুমকিও।
গত ২২ মে এ হুমকির ঘটনায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে ওই গৃহবধু। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মীরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘হুমকির বিষয়ে তদন্ত করা হবে।’
সাধারণ ডায়েরি থেকে জানা গেছে, ২০২১ সালের ১৪ জানুয়ারি ওই নারীর সঙ্গে বিয়ে হয় এক ব্যক্তির। কিছুদিনের মধ্যেই তার উপর শুরু হয় স্বামীর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। দিনের পর দিন এসব অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় গত ২০ মে ওই গৃহবধু ভাইয়ের সঙ্গে চলে যায় বাবার বাড়িতে।
পরে এ নির্যাতনের বিচার চেয়ে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিনের কাছে যান। সেখানে বিচার করার পরিবর্তে উল্টো স্বামীর সংসার ছেড়ে তার সঙ্গে সম্পর্ক চালিয়ে যাওয়ার কু-প্রস্তাব দেন গিয়াস উদ্দিন। এ বিষয়টি জনসম্মুখে কাউকে না বলতে স্থানীয় গোলাম সারওয়ার নামে এক ব্যক্তিকে পাঠিয়ে গৃহবধুকে হুমকি দেওয়া হয়।
উপজেলা চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন এবং ওই নারীর কথোপকথনের একটি অডিও ক্লিপ চট্টগ্রাম প্রতিদিনের হাতে এসেছে।
অডিও ক্লিপের কথপোকথন তুলে ধরা হল-
গিয়াস উদ্দিন: হ্যাঁ হ্যালো
নারী : হ্যাঁ, শুনছি, আপনি ফোন দিলেন যে?
গিয়াস উদ্দিন : আমিতো বললাম, আমি দেখা করতে চাই?
নারী : ও হ্যাঁ
গিয়াস উদ্দিন : এখন একটু আদর করে দাও।
নারী : না, এখন না পরে।
গিয়াস উদ্দিন : ও সরি, এখন কথা বলা যাবে?
নারী : হ্যাঁ, সমস্যা নেই।
গিয়াস উদ্দিন : তোমার নানী মোর্শেদকে দেখছে, আমি তখন ফোনে ব্যস্তছিলাম, অনেক্ষণ মোর্শেদের সঙ্গে কথা বলছেন।
নারী : আমরাতো আপনার কাছে বিচার চাইছিলাম, আর আপনি এখন বন্ধুত্ব করতে চাইছেন, আচ্ছা, হ্যাঁ, সমস্যা নেই, আগে বন্ধুত্ব।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে গোলাম সারওয়ার বলেন, ‘ওই গৃহবধু আমার এলাকার মেয়ে। আমি কেন তাকে হুমকি দেব। তারা আমাকে সমাধান করতে ডেকেছে। তাই তাদের বাড়িতে গিয়েছি। আর কিছু হয়নি।’
অভিযোগ প্রসঙ্গে সাবেক মীরসরাই উপজেলা চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘ওই গৃহবধু স্বামীর আনোয়ার হোসেন আমার ভাগ্নে হয়। তারা সংসার করবে না জানাতে আমার কাছে আসছিল তার স্ত্রী। আমি তাদের বিষয়টি সমাধান করার আগেই আনোয়ার তাকে ডিভোর্স দিয়ে দেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘ওই গৃহবধুর সঙ্গে কথা হতো সেটা ঠিক আছে। একদিন সম্ভবত হোয়াটসঅ্যাপেও ভিডিও কলে কথা বলেছি। সে যে আমাকে ফাঁসানোর উদ্দেশ্যে আনোয়ারের সঙ্গে সম্পর্ক না থাকলেও তার সঙ্গে বন্ধুত্ব চালিয়ে যাওয়ার কথা বলতো। এখন শুনছি, সে নাকি এগুলো পুঁজি করে আমার বিরুদ্ধে জিডি করেছে। এলাকার এক শ্রেণীর লোক রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার জন্য ফাঁয়দা লুটছে। এছাড়া আর কিছু না।’
মুআ