একটি দ্বিতীয় বিয়ে প্রাণ কেড়ে নিল মা ও শিশুকন্যার

দৌড়ে পালিয়ে বাঁচলো ৫ বছরের ছেলে

৭ বছরের ছেলে ও ৯ মাসের শিশুকন্যা থাকার পরও স্বামী করেছিল দ্বিতীয় বিয়ে। এ নিয়ে প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে কলহ লেগে থাকতো প্রতিদিনই। সোমবার বিকেলে শেষমেশ আর সহ্য করতে না পেরে পুত্র-কন্যা নিয়ে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেন শারমিন আক্তার। তবে ঘটনা বুঝতে পেরে ৫ বছরের ছেলেটি পালিয়ে গেলেও শাড়িতে শিশুকন্যাকে ঝুলিয়ে শারমিন নিজেও ঝুলে পড়েন ফ্যানের শিকে। তবে এলাকাবাসীর অনেকে দাবি করছেন, মা-মেয়েকে হত্যা করে ঘরের ভেতর ওড়না ঝুলিয়ে রেখে দেওয়া হয়েছে।

সোমবার (৩০ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলার পূর্ব গোমদণ্ডী এলাকার হাজিরহাটের মাহবুবুল আলমের ভাড়া বাসা থেকে মা ও মেয়ের লাশ উদ্ধার করে বোয়ালখালী থানার পুলিশ। নিহত শারমিন নোয়াখালীর কবিরহাট থানার চরমন্ডলিয়া গ্রামের আবু তাহের মন্ডলের মেয়ে।

বোয়ালখালী থানা সূত্রে জানা যায়, টেম্পো গ্যারেজের কর্মী মো. সেলিমের (৪০) সঙ্গে একই এলাকার শারমিন আক্তারের (২৭) বিয়ে হয়। সেলিম চট্টগ্রাম জেলা অটো টেম্পো শ্রমিক ইউনিয়ন (শ্রমিক লীগের অন্তর্ভূক্ত) বোয়ালখালীর সাধারণ সম্পাদক। পশ্চিম গোমদণ্ডী ফুলতল এলাকার গোলাম কাদের জুনুর পুত্র তিনি। তাদের ঘরে ৭ বছরের ছেলে ইমাম ও তাসলিমা নামের ৯ মাসের শিশুকন্যা থাকার পরও সেলিম আরো একটি বিয়ে করেন। এ কারণে তাদের মধ্যে প্রতিদিন ঝগড়াঝাটি হতো। এই পারিবারিক কলহের জের ধরেই শারমিন আক্তার প্রথমে নিজের শাড়ি মেয়ের গলায় প্যাঁচিয়ে এরপর নিজেও আত্মহত্যা করেন।

বোয়ালখালী থানার এসআই আরিফুর রহমান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, উপজেলার পশ্চিম গোমদণ্ডী এলাকার মাহবুবুল আলমের ভাড়া বাসায় ফ্যানের শিকে ঝুলন্ত অবস্থায় মা ও মেয়ের দুজনের লাশ পাওয়া যায়। স্বামীকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং প্রাথমিক ধারণা করা হচ্ছে পারিবারিক কলহের জের ধরে এই আত্মহত্যা। তার লক্ষণও আছে। ময়নাতদন্ত হলে সবকিছু নিশ্চিত করা যাবে।

তিনি বলেন, ‘তাদের ৭ বছরের ছেলে ইমাম বাইরে ঘরের থাকায় সে বেচে যায়। আমাদের জিজ্ঞাসাবাদে ইমাম জানায়, তাদের বাসায় প্রতিদিন ঝগড়াঝাটি হত। তার বোনের সাথে তাকেও শাড়িতে ঝোলাতে চাইলে সে দৌড়ে পালিয়ে যায়। ছেলেকে ধরতে না পেরে প্রথমে মেয়ে তাসলিমা ঝুলিয়ে তারপরও নিজে আত্মহত্যা করেছে।

তবে এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার আগের রাতেও সেলিম ও শারমিনের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হতে শুনেছেন তারা। তাদের অনেকের ধারণা মা-মেয়েকে হত্যা করে ঘরের ভেতর ওড়না ঝুলিয়ে রেখে দেওয়া হয়েছে। লাশ উদ্ধারের কয়েক মিনিট আগে সেলিমকে এ বাসা থেকে বের হয়ে যেতে দেখেছেন বলে জানান কেউ কেউ।

এলাকাবাসী সূত্রে এও জানা গেছে, শারমিন ছাড়াও সেলিমের আরও তিন স্ত্রী রয়েছে। তার প্রথম ঘরের বড় মেয়ে কলেজে পড়ে।

পুলিশ এ ঘটনায় সেলিম ও বিল্ডিংয়ের দারোয়ান জাহাঙ্গীর আলমকে আটক করেছে। অন্যদিকে নিহতের বড় সন্তান ইমাম হোসেনকে (৭) পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

জিজ্ঞাসাবাদের জন্য স্বামী সেলিমকে বোয়ালখালী থানা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্য নেওয়া হচ্ছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তার স্বামী স্বীকার গিয়েছে দ্বিতীয় বিয়ে নিয়ে প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে তার প্রায়ই ঝগড়াঝাটি হতো।

আরএ/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!