এই ১৭ নিয়ম মেনেই চট্টগ্রামে খুলতে হবে মার্কেট

মার্কেটে যেতে হলে হাতে রাখতে হবে জাতীয় পরিচয়পত্র। অথবা বাসার ঠিকানা নিশ্চিত করতে গ্যাস, বিদ্যুৎ কিংবা পানির বিলের ফটোকপি রাখতে হবে সঙ্গে। কারণ নিজ ঘরের ২ কিলোমিটারের মধ্যে থাকা মার্কেটে যেতে পারবে ক্রেতারা। এসব নথি দেখে পুলিশ সনাক্ত করবে ক্রেতার বাসার দূরত্ব দুই কিলোমিটারের মধ্যে কিনা।

আবার থার্মাল স্ক্যানারের মাধ্যমে ক্রেতার শরীরের তাপমাত্রা মাপতে হবে মার্কেট কর্তৃপক্ষকে। শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য দোকানের সামনে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রেখে মার্কিং করা থাকতে হবে। ওই মার্কিংয়ে দাঁড়িয়ে কেনাকাটা করতে হবে জনসাধারণকে।

চট্টগ্রামে মার্কেট বা যেকোনো দোকানপাট খোলা রাখতে হলে ১৭টি নির্দেশনা মানতে হবে মার্কেট কর্তৃপক্ষকে। এর মধ্যে ৬টি নির্দেশনা চট্টগ্রাম নগর পুলিশের, বাকি ১১টি শর্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের।

চট্টগ্রাম নগর পুলিশ (সিএমপি) বলছে, এসন শর্ত কিংবা নির্দেশনার প্রত্যেকটি নিশ্চিত করেই খুলতে হবে মার্কেট, ক্রেতারা আসতে পারবেন মার্কেটে। না মানলে তাৎক্ষণিক বন্ধ করে দেওয়া হবে প্রতিষ্ঠান। পড়তে হবে সংক্রমণ প্রতিরোধ আইনে মামলায়ও।

ঈদ উপলক্ষে দোকানপাট ও মার্কেটগুলোর আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও করোনা ভাইরাস সংক্রমণ এবং বিস্তার রোধে শনিবার (৯ মে) দুপুর ১২টায় দামপাড়া পুলিশ লাইন্সে সিএমপির সম্মেলন কক্ষে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা হয়। এতে উপস্থিত বিভিন্ন ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দকে সিএমপির পক্ষ থেকে এসব শর্ত ও নির্দেশনা জানিয়ে দেওয়া হয়।

শপিংমল খোলা রাখতে সিএমপির ৬ নির্দেশনা হল—

১. সরকারঘোষিত নির্ধারিত সময় সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৪ টার মধ্যে দোকানপাট ও শপিংমল খোলা ও বন্ধ করতে হবে।

২. শপিং মল/ ও মার্কেট থেকে ২ কিলোমিটার এলাকা বসবাসকারী ক্রেতাদের সংশ্লিষ্ট শপিং মল/মার্কেটে কেনাকাটা করতে হবে।

৩. বসবাসের এলাকা নিশ্চিত হওয়ার জন্য ক্রেতা সাধারণের নিজ নিজ পরিচয়পত্র (যেমন-ব্যক্তিগত আইডি কার্ড বা পাসপোর্ট বা ড্রাইভিং লাইসেন্স বা বিদ্যুৎ বা গ্যাস বা পানির বিলের মূল কপি ইত্যাদি) সাথে রাখা এবং চেক করে শপিংমলের প্রবেশ করতে দেয়া।

৪. শপিংমলে বয়স্ক, শিশু ও অসুস্থদের গমনাগমনে নিরুৎসাহিত করা।

৫. শপিংমলের প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ আলাদা আলাদা নির্ধারণ করা।

৬. শপিংমলে আসা যানবাহন অবশ্যই জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা করা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ১১ নির্দেশনা হল—

১. শপিংমলের প্রবেশ মুখে স্বয়ংক্রিয় জীবাণুনাশক চেম্বার স্থাপন করা এবং থার্মাল স্ক্যানারের মাধ্যমে ক্রেতাদের শরীরের তাপমাত্রা নির্ণয় করা।

২. শপিংমল ও দোকানের প্রবেশমুখে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা করা এবং মাস্ক ছাড়া কাউকে শপিংমলে প্রবেশ করতে না দেওয়া।

৩. পণ্য ক্রয়-বিক্রয়কালে ক্রেতা-বিক্রেতার পারস্পরিক শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য দোকানের সামনে এক মিটার বা তিন ফুট দূরত্ব বজায় রেখে মার্কিং করা।

৪. মাস্ক ও জীবাণুমুক্ত করার সামগ্রী সংগ্রহে রাখা এবং এ বিষয়ে দোকানের কর্মীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

৫. শপিং মল ও দোকানের কর্মীদের স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণে রেখে তা নিয়মিত নথিভুক্ত করা।

৬. ক্রেতাদের শারীরিক তাপমাত্রা নির্ণয় করে শপিং মল ও দোকানে প্রবেশ করতে দেওয়া।

৭. কেন্দ্রীয় এয়ারকন্ডিশনার স্বাভাবিক তাপমাত্রায় চালানো এবং বের হওয়া বাতাস যেন পুনরায় প্রবেশ করতে না পারে সে ব্যবস্থা করা।

৮. বারবার মানুষের সংস্পর্শে আসা সরঞ্জামসমূহ যেমন— অ্যালিভেটর বাটন, দরজার হাতল ও ময়লা ফেলার ঝুড়ি নিয়মিত জীবাণুমুক্ত করা।

৯. সার্বিকভাবে শপিং মলের ফ্লোর ও অন্যান্য জিনিস পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা।

১০. সেলফ সার্ভিস শপিং ও স্পর্শ ছাড়া মূল্য পরিশোধে উৎসাহিত করা।

১১. যদি নিশ্চিত করোনা রোগী থাকে তবে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুসারে জীবাণুমুক্ত করতে হবে।

সিএমপি কমিশনার মো মাহাবুবর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (প্রশাসন ও অর্থ) আমেনা বেগম, অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) এসএম মোস্তাক আহমেদ খান, অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপারেশন) শ্যামল কুমার নাথ, উপ কমিশনার (বিশেষ শাখা) আব্দুল ওয়ারিশ, উপ কমিশনার (উত্তর জোন) বিজয় বসাক, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ ও চিটাগাং উইমেন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির নেতৃবৃন্দ।

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজার, নিউমার্কেট, টেরিবাজার, জহুর মার্কেট, সানমার ওশান সিটি, ইউনেস্কো টাওয়ার, আমিন সেন্টারসহ বিভিন্ন দোকান মালিক ও ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দ।

প্রসঙ্গত, এসব শর্তবলীসহ সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে বৈঠকে উপস্থিত প্রায় বিভিন্ন মার্কেট, শপিংমলের প্রায় ৩০০ ব্যবসায়ী নেতা নিজ নিজ মার্কেট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

এফএম/এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm