উড়ালসেতুর নিচে মাদকের রমরমা, সিডিএ ধরে আর পুলিশ ছাড়ে

চট্টগ্রামের আখতারুজ্জামান চৌধুরী উড়ালসড়কের নিচে রাত-বিরাতে চলছে মাদকের আসর। ঘড়ির কাঁটায় দশটা ছুঁই ছুঁই হতেই জমতে থাকে মাদকসেবীদের আড্ডা। লোকচক্ষুর আড়াল হতে উড়াল সড়ককেই নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে খুঁজে নিয়েছে মাদকসেবীরা, যা অনেক সময় প্রশাসনেরও নজর এড়িয়ে যাচ্ছে।

টানা তিন মাস ধরে চট্টগ্রাম প্রতিদিনের অনুসন্ধানে দেখা যায়, নগরীর লালখানবাজার থেকে মুরাদপুর পর্যন্ত পাঁচ দশমিক ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৫৪ ফুট চওড়া আখতারুজ্জামান চৌধুরী উড়ালসড়কের নিচে প্রতিরাতেই চলছে ১৫ থেকে ২০ জন মাদকসেবীর আড্ডা। কখনো কখনো মাদকসেবীর সংখ্যা তিরিশও ছাড়িয়ে যায়। রাতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলে মাদকের জমজমাট আসর।

মাদকের আড্ডা যেসব স্পটে

লালখানবাজার উড়ালসড়কের শুরু, ওয়াসা মোড়, নাসিরাবাদ বালক স্কুলের সামনে, দুই নম্বর গেট ও উড়াল সড়কের শেষ সীমানা মুরাদপুর মোড়ে মাদকসেবীদের উন্মুক্ত আড্ডা চলছে।

দায় এড়ালো দুই থানা

মাদকসেবীদের বিষয়ে অবগত কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে খুলশী থানার ওসি প্রণব চৌধুরী বিস্ময় প্রকাশ করে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি তো আজকেই শুনলাম! আর এটা তো ওপেন প্লেস, কী করে সম্ভব? তারপরেও বিষয়টি দ্রুত তদন্ত করে দেখছি।’

অপরদিকে পাঁচলাইশ থানার ওসি আবুল কাশেম ভূঁইয়া বলেন, ‘এ ধরনের ইনফরমেশন আমাদের কাছে নেই। আমাদের ২৯টি টিম রাতদিন কাজ করছে। আমাদের নজরে আসেনি। তবুও বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখবো।’

সিডিএ ধরে, পুলিশ ছাড়ে

উড়ালসড়ক নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক ও সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, আমরা বিভিন্ন সময়ে প্রশাসনকে এ সম্পর্কে অবহিত করেছি। ২০-২৫ জনের একটা গ্রুপ প্রায় প্রতিদিনই আড্ডা বসায় সেখানে। তার চেয়ে বড় কথা ওরা (মাদকসেবীরা) ক্যাবল চুরি করে নিয়ে যায় এবং ওদের কাছে ধারালো ব্লেডও থাকে। আমরা বহুবার ওদের ধরে পুলিশের কাছে দিয়েছি। আমরা পুলিশকে দেই আর পুলিশ তাদের ছেড়ে দেয়।

হতাশার সুরে মাহফুজুর জানান, এদের কোনোভাবেই দমিয়ে রাখা যাচ্ছে না। এরা চুরি-ছিনতাই থেকে শুরু করে সব করছে। আমাদের কাছে সব তথ্য আছে। কিন্তু প্রশাসন থেকে হেল্প পাচ্ছি না। তারা অভিনব কায়দায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে ফ্লাইওভারের। এদের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে ২ মার্চ চকবাজার থানায় আমরা মামলাও করেছি (মামলা নম্বর ০১)।

দায়িত্বরত নিরাপত্তাকর্মী এমকে রায় বাবু বলেন, সুযোগ পেলেই এরা আড্ডা বসায়। এদের কাছে ধারালো ব্লেড থাকায় ভয়ে সামনে যাওয়া যায় না। আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে জানিয়েছি।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ১৭ জুন উড়ালসড়কের একাংশ খুলে দেওয়া হয়। পরে ঈদুল আজহার আগেই পুরোপুরি চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিল।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!