উদাসীনতা/ চসিকের প্রচারণায় এডিস যখন ‘এসিড মশা’!

বানান বিভ্রাট হরহামেশাই চোখে পড়ে। কিন্তু বিভ্রাট যখন বিভ্রান্তিকর হয়ে ওঠে, তা কেবল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাই দেখিয়ে দেয়। রাজধানীতে ডেঙ্গু মহামারী আকার নিলেও কোনো অংশে পিছিয়ে নেই চট্টগ্রাম। ডেঙ্গুর প্রকোপে প্রতিদিনই বাড়ছে রোগী। কেবল চট্টগ্রামেই এ পর্যন্ত আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছাড়িয়েছে তিনশতেরও বেশি। এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। কিন্তু সেই কাজও যখন হয় উদাসীনভাবে, তখন সমস্যা উত্তরণের পথটাও প্রশ্নবিদ্ধ।

চসিক ডেঙ্গু সচেতনতায় মাইকিংয়ের পাশাপাশি লিফলেট বিতরণ করছে। এখন পর্যন্ত ১০ লাখ লিফলেট বিতরণ শেষ। কিন্তু সেটি একবারের জন্যও পড়ে দেখেনি কর্তৃপক্ষ। যদিও কর্তৃপক্ষের দাবি, সাধারণ মানুষের কাছে বিতরণের আগে চসিকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। কিন্তু কারোর চোখেই ভুলটি ধরা পড়েনি। চসিকের বিতরণ করা লিফলেটে এডিস মশাকে ‘এসিড’ মশা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সচেতনতামূলক লিফলেটে এমন অসচেতন বানান নিয়ে ক্ষোভ ঝেড়েছেন সচেতন নাগরিকরা।

ক্ষোভ প্রকাশ করে ব্যাংক কর্মকর্তা তানজীম উদ্দীন বলেন, ‘এটাও মানতে হবে আমাদের! মানুষকে দেওয়ার আগে নিজেরা পড়ে দেখে না, এদের থেকে কী জানবে সাধারণ মানুষ? সব লোকদেখানো কাজ। দেখেন, টাকাগুলো তাদের পকেটে যায় কিনা। তাই এমন উদাসীন।’

সরকারি সিটি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী মুনতাহিনা মীম বলেন, ‘চসিকের মতো প্রতিষ্ঠান এ ধরনের ভুল করলে আমরা কী শিখবো? এটা স্রেফ দায় এড়ানো ছাড়া কিছুই না।’

শিক্ষিকা শামীম আরা বেগম বলেন, ‘সকালে নিউজপেপারের সাথে লিফলেট দেখে আমার আট বছরের ছেলেটা দৌঁড়ে এসে বলে মা এখানে সঠিক শব্দ কোনটা হবে। লেখাটা পড়ে মাথার টনক নড়ে গেছে। ভাবা যায় তারা কি রকম উদাসীনভাবে কাজ করে? মরলে আমরা মরবো, তাদের তো কিছুই হয় না। না জানি মশার ওষুধ নিয়ে কী খেল দেখায়।’

ইতিমধ্যে নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডজুড়ে প্রথম ধাপে ৫ হাজার এবং দ্বিতীয় ধাপে আরও ৫ হাজার করে ১০ হাজার লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। কোনো কোনো ওয়ার্ডে তারও বেশি লিফলেট বিতরণ হয়েছে। এর মধ্যে সাতটি জোন অফিসসহ ৭২টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫ হাজার লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও চসিক নিয়ন্ত্রিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও প্রায় ২০ হাজার লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। এখনও মজুদ আছে ৪০ হাজার লিফলেট। এতো লিফলেট বিতরণের পরেও কেউই পড়ছেন না কেবল সচেতন নাগরিক ছাড়া।

চসিকের প্রজেক্ট অফিসার আনসার আহমেদ জনান, ‘ডেঙ্গু প্রতিরোধে মাইকিং এর পাশাপাশি লিফলেট বিতরণ করে যাচ্ছি। ওয়ার্ডের বিভিন্ন বাসা-বাড়ির পাশাপাশি স্কুল-কলেজগুলোতেও সবাইকে সচেতন হতে উদ্ধুদ্ধ করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘লিফলেট বিতরণের আগে সর্বপ্রথম চসিকের সকল কর্মকর্তা আর কর্মচারীদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।’

নিজের লিফলেটে থাকা বার্তা পড়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই আমরা সকলেই পড়েছি এবং আশেপাশের মানুষকেও সচেতন করছি।’
কিন্তু এমন ভুলের বিষয়টি চোখ এড়িয়ে যাওয়ার ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘কাছাকাছি হওয়াতে অতটা ভুল চোখে পড়ে না।’

অন্যদিকে চসিকের ভেক্সিনেশন ইনচার্জ আবু সালেহ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের কাজ বিতরণ করা। মানুষ পড়বে নাকি পড়বে না তা তাদের ব্যাপার। যেভাবে আমাদের কাছে লেখা এসেছে সেভাবেই প্রেসে পাঠিয়ে দিয়েছি। সেখান থেকে এমন ভুল হতে পারে।’

এ প্রসঙ্গে চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে তাই আমরাও সচেতনতামূলক কার্যক্রম চলমান রেখেছি। ক্রাশ প্রোগ্রাম, মাইকিং, লিফলেট বিতরণ তো চলছেই।’

লিফলেটে থাকা লেখাগুলো নিজেরা পড়েছে কিনা জানতে চাইলে মিনিটদেড়েক চুপ থেকে তিনি বলেন, ‘আমরা তো জানিই। এখন আপনাদের কাজ সাধারণ মানুষদের জানানো, সচেতন করা।’

ভুলের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী বলেন, ‘এটা প্রথম দিকের ঘটনা। প্রেসে টাইপ মিসটেক হয়েছিল। এটা নিয়েও যদি আপনারা কথা বলেন তাহলে কোথায় যাবো? তাছাড়া আপনারা এভাবে দোষারোপ না করে সম্মিলিতভাবে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সহায়তা করেন। আমরা অনেক দুর্যোগ মোকাবেলা করে বাংলাদেশ থেকে পোলিও, গুটিবসন্ত নির্মূল করতে পেরেছি এখন ডেঙ্গুও প্রতিরোধে আপনাদের সহায়তায় প্রয়োজন। ছোটোখাটো বিষয় না ধরে নৈতিক অবস্থানে আমাদের কাজ করা দরকার।’

এসআর/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!