উত্তর কাট্টলীতে করোনার বাহক নিয়ে দুই সন্দেহ

চট্টগ্রাম নগরীর উত্তর কাট্টলীতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিটি একটি নামি হোটেলের মালিকের ভূ-সম্পত্তি দেখাশোনা (কেয়ারটেকার) করে আসছেন গত ৫ বছর ধরে। ওই বাড়িতে তার ছাড়া অন্য কোনো পরিবারের বসবাস নেই। ৫৭ বছর বয়স্ক ওই ব্যক্তির গ্রামের বাড়ি সন্দ্বীপ উপজেলায়। সোমবার (১৩ এপ্রিল) তার শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর আগে একই এলাকায় গার্টেক্স গার্মেন্টসের এক কর্মকর্তার শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছিল।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসের শুরুতে মধ্যবয়সী লোকটি জ্বরে আক্রান্ত হন। এরপর তিনি উত্তর কাট্টলীর এলাকারই একটি ফার্মেসি জননী ড্রাগ হাউস থেকে ওষুধ খান। কিন্তু তাতেও জ্বর না সারায় ১২ এপ্রিল (রোববার) ফৌজদারহাটের বিশেষায়িত হাসপাতাল ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) ভর্তি হন। এরপর সোমবার (১৩ এপ্রিল) তার শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, উত্তর কাট্টলীতে নামি হোটেল মালিকের প্রাচীরঘেরা বাড়ির ভেতরে শাক-টমেটো ইত্যাদি সবজি চাষ করা হয়। সেগুলো আবার খুচরা বিক্রি করা হয় উত্তর কাট্টলীর সেবাখোলা রাস্তার পাশে। অসুস্থ হওয়ার আগ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত ওই কেয়ারটেকার নিজেই সেসব সবজি বিক্রি করতেন। সর্বশেষ তাকে রাস্তায় সবজি বিক্রি করতে দেখা গেছে ২৬ মার্চও। সবজি বিক্রি করতে গিয়ে কোনো ক্রেতার মাধ্যমে তিনি করোনায় আক্রান্ত হলেন কিনা— এই প্রশ্নটি এখন ভাবাচ্ছে প্রশাসনকে। স্থানীয় এলাকাবাসীর সন্দেহও সেরকমই।

স্থানীয় বাসিন্দা শাহেদ আকবর চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আক্রান্ত ব্যক্তি বাসার পাশে সবজি চাষ করে রাস্তার পাশে বসে বিক্রি করতেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন করোনার কমিউনিটি ট্রান্সমিশন ঘটছে। এর আগে একই এলাকায় গার্টেক্স গার্মেন্টসের এক কর্মকর্তার শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছিল। আমাদের আশঙ্কা সবজি বিক্রি করতে গিয়ে তিনি আক্রান্ত হয়েছেন।’

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই কেয়ারটেকার পাড়ার চা দোকানেও আড্ডা দিতেন। সেখান থেকেও সংক্রমণ ঘটতে পারে বলে অনেকের ধারণা।

প্রশাসন থেকে বারবার সতর্ক করে দেওয়া হলেও ওই এলাকায় সামাজিক দূরত্ব কেউ মানছে না বলে অভিযোগ উঠেছে বারবার। ঈশান মহাজন রোড, জি ব্লক কাঁচাবাজার, কৈবল্যধাম কাঁচাবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় সামাজিক দূরত্ব না মানার প্রবণতা খুবই বেশি। আকবরশাহ থানা থেকেও বারবার এলাকার মানুষজনকে সতর্ক করা হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব না মানায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানিয়েছেন।

এদিকে জানা গেছে, করোনায় আক্রান্ত ওই কেয়ারটেকারের ছেলে হালিশহর গরিবে নেওয়াজ স্কুলের পাশে একটি লন্ড্রি দোকান পরিচালনা করেন। অনেক ক্ষেত্রে বাহকের শরীরে করোনার কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না। কিন্তু তার কাছ থেকে ছড়িয়ে অন্যের শরীরে সংক্রমণ ঘটায়। তবে এক্ষেত্রে জানা গেছে, ২৬ মার্চ থেকে ওই লন্ড্রি বন্ধ ছিল। ফলে ছেলের মাধ্যমে বাবার শরীরে সংক্রমণের সম্ভাবনা কম বলেই ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তবে সবজি ক্রেতা থেকেই যদি ওই কেয়ারটেকারের শরীরে করোনাভাইরাস সংক্রমিত হয়ে থাকে, তাহলে তৈরি হয়ে যায় গভীর এক শঙ্কা— কে সেই অজ্ঞাত করোনা বাহক? ওই এলাকার আরও কতো মানুষের মধ্যে ওই বাহক সংক্রমণ ছড়িয়েছে প্রাণঘাতি এই ভাইরাসের।

এফএম/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!