উত্তরে স্বেচ্ছাসেবক লীগ, দক্ষিণে যুবদল— কক্সবাজার সৈকতে দখলবাজি

কক্সবাজারের সুগন্ধা সৈকতে দখলের মহোৎসব চলছে। সৈকতের উত্তর পাশে স্বেচ্ছাসেবক লীগ দক্ষিণ পাশে যুবদলের নেতৃত্বে দখলকাণ্ড অব্যাহত আছে। দখল ও দূষণে বিপর্যস্ত পরিবেশ। শুটকির দোকান, মাছ ভাজা বিক্রির দোকানসহ হরেক রকম অবৈধ স্থাপনায় দখলের মহোৎসব চলছে সৈকতে। সরকারি ভূমিতে কোন রকম অনুমতিবিহীন প্রতিনিয়ত গড়ে ওঠছে অবৈধ স্থাপনা। কয়েক দফা উচ্ছেদের মাইকিং করার পরও থেমে নেই দখলের হিড়িক। অজ্ঞাত কারণে বারবার ঘোষণা দিয়েও উচ্ছেদ করতে পারেনি এসব অবৈধ স্থাপনা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র অনুসারে, কলাতলীর সুগন্ধা পয়েন্টের রাস্তার উত্তর পাশে রয়েছে রাজনৈতিক পরিচয়ে দখল করে বসানো সারিবদ্ধ দোকান। এখানে রয়েছে শুঁটকি, রেস্টুরেন্ট, ফিশ ফ্রাইয়ের দোকান, ওষুধ ফার্মেসি, ট্যুরিজম অফিসসহ নানা ধরনের দোকান। এই উত্তর পাশের অবৈধ স্থাপনায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন দুই স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা। যারা সুগন্ধা বিচের বৃহত্তর শুটকি, রেস্ট্যুরেন্ট, ফিস ফ্রাই ব্যবসায়ীদের নিয়ে সম্প্রতি একটি সমিতির জন্ম দিয়েছেন রীতিমতো।

এই সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন কক্সবাজার শহর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আবদুর রহমান। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক জসিম উদ্দিন। মূলত এই দুজনের নেতৃত্বে। সুগন্ধা পয়েন্টের উত্তর সারির সরকারি শত কোটি টাকার জমি দখলে রয়েছে। তাদের সাথে যারা দখলবাজদের তালিকায় রয়েছে মহেশখালীর মুফিজ, কলাতলীর নুর মোহাম্মদ, রবিন, তার বড় ভাই নাছির, রাসেল, মো. হানিফ, আরিফ, বাবু, পরিবেশ অধিদপ্তরের অফিস সহকারী আলম, সোহেল, সৈকত, আল্লার দান হোটেলের মালিক মনির, নয়ন, কিবরিয়া, ইয়াহিয়া, ভারুয়াখালী খালেক, মো. মেহেদী, হালিম, হামিদ সওদাগর, ছোট হামিদ, সাদেক, আবদুল্লাহ বিদ্যুৎ ও সাহেদ।

সুগন্ধা বিচের উত্তর পাশের পাশাপাশি দক্ষিণ পাশেও দখলকাণ্ড শুরু হয়েছে সম্প্রতি। এ সিন্ডিকেটে রয়েছে শহর যুবদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. জয়নাল আবেদীন, নাজিম উদ্দিন নাজু, আচার ব্যবসায়ী নাছির, কলাতলীর আবদুল্লাহ আল মামুন মিঠুসহ আরো কয়েকজন।

কক্সবাজার শহর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আবদুর রহমান বলেন, সরকারি জমি দীর্ঘদিন ধরে এস.আলম কোম্পানির দখলে ছিল। পরে দীর্ঘ সময় উচ্চ আদালতে মামলা পরিচালনার পর পুনরায় সরকারি কোষাগারে চলে আসে। কিন্তু বর্তমানে পরিত্যক্ত থাকায় দলীয় ছেলেরা দোকান নির্মাণ করে জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা করছে। তবে সরকারের উন্নয়নের প্রয়োজন হলে ছেড়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতির কথাও জানান এই নেতা।

এদিকে সূত্র জানায়, সরকারি মূল্যবান জমি দখলের জন্য প্রশাসন ম্যানেজ ও মামলা-হামলাসহ নানা কৌশল চালিয়ে যান স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা জসিম উদ্দিন। মূলত তার নেতৃত্বে চলে দখলের সকল কার্যক্রম। প্রশাসনের উচ্ছেদ অভিযানের মাইকিংয়ের পরও তার নানা কৌশল ও ভয়-ভীতিতে উচ্ছেদ অভিযান স্থবির হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

তবে সরকারি জমি দখলবাজির ব্যাপারে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক, সমিতির সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আগে যে সব দোকান নির্মাণ করা হয়েছে তা আমরা কিছু লোকজন মিলে করেছি। বর্তমানে যে সব দোকান নির্মাণ চলছে সেগুলোর সাথে আমি (জসিম) জড়িত নেই। জসিমের বক্তব্য নেয়ার পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, সুগন্ধা পয়েন্টের দক্ষিণ পাশে দখলের যে মহোৎসব চলছে তাতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন শহরের বাহারছড়া এলাকার পৌর যুবদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন ও তার ভাই কালাম। তার সাথে আরো রয়েছেন মাদক ব্যবসাসহ নানা অপকর্মের হোতা সাতকানিয়ার হাফেজ ও বাহারছড়ার মনিয়া ও যুবদল নেতা হেলাল উদ্দিন, সৈকতপাড়ার নাজিম উদ্দিন নজু, আলা উদ্দিন, আজিজ উদ্দিন এবং কলাতলীর মিঠু। এই পাঁচজনের নেতৃত্বে চলছে প্রায় পঞ্চাশের অধিক অবৈধ দোকান/স্থাপনা বসানোর কাজ। ইতিমধ্যে ১০/১২ দোকান চড়া দামে বিক্রিও হয়ে গেছে। পাশাপাশি মাসিক ১০/১২ হাজার টাকায় ভাড়াও হয়েছে বেশ কয়েকটি।

সরকারি জমি দখল করে বিক্রির ব্যাপারে প্রশ্ন করলে যুবদল নেতা জয়নাল বলেন, ‘সুগন্ধা পয়েন্টের দক্ষিণ পাশে দীর্ঘদিন ধরে সরকারি জমির উপর আমার (জয়নাল) একটি দোকান ছিল। কিন্তু প্রশাসন কয়েকবার উচ্ছেদ করে। বর্তমানে যে যার মত দখল করার কারণে আমি আমারটা দখলে নিয়েছি। আমার একটি দোকান ছাড়া কোন দোকান নেই। যা আছে সব নজু আর রাসেলের। তাদের একেকজনের ৭-৮টি করে দোকান রয়েছে। আবদুল্লাহ আল মামুন মিঠু জানান, দখল হচ্ছে তা সত্য। কিন্তু আমি (মিঠু) কোন প্রকার দখলবাজির সাথে জড়িত নেই।

স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ীদের মতে, সুগন্ধা পয়েন্টের এই অবৈধ স্থাপনার সিংহভাগ ইতোপূর্বে ৯ বার উচ্ছেদ করে উদ্ধারকৃত সরকারি জমিতে কাঁটাতার দেয়াসহ ৯০টি নারকেল গাছের চারা রোপন করা হয়েছিল। এছাড়া উচ্ছেদ অভিযানের কিছুদিন যেতে না যেতেই কাঁটাতার, নারকেল গাছ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেয়া সাইনবোর্ড তুলে নিয়ে যায় সৈকত এলকার শীর্ষ দখলবাজ যুবদল নেতা জয়নাল ও সাতকানিয়ার হাফেজ।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আশরাফুল আফসার বলেন, ‘সরকারি জমি উচ্ছেদে জেলা প্রশাসনের ধারাবাহিক অভিযান চলছে। পাশাপাশি সুগন্ধা পয়েন্টের এই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের ব্যাপারে কাজ চলছে। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান শুরু হবে।’

এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!