ইপিজেডে অবৈধ হিউম্যান হলার যাত্রী জিম্মি করে ভাড়া নিচ্ছে কয়েকগুণ

অনুমতি ছাড়া স্টেশন সিমেন্ট ক্রসিংয়ে

চট্টগ্রামের সিমেন্ট ক্রসিং ও ইপিজেড এলাকায় ভুয়া পারমিট দেখিয়ে চলছে প্রায় ৩০টিরও বেশি যাত্রীবাহী পরিবহন। হিউম্যান হলার নামের এসব যানের বেশিরভাগ চালকেরই নেই ড্রাইভিং লাইসেন্স। হাতেগোনা কয়েকটি চার চাকার যানেরই শুধু বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ থেকে নেওয়া ফিটনেস ও রোড পারমিট আছে। অথচ আড়াল হিসেবে এগুলো দেখিয়ে চলছে কয়েকগুণ বেশি অবৈধ যানবাহন। শুধু তাই নয়, প্রতিদিন যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়াও।

নির্দিষ্ট রোডে যাত্রী নিয়ে এ গাড়িগুলো চলাচলের নিয়ম থাকলেও সেখানে চলাচল না করে অবৈধ স্টেশন বানিয়ে শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট এলাকায় চলছে এসব যান। অভিযোগ রয়েছে, অলংকার ও ইপিজেড এলাকায় যাওয়ার কথা বলে কৌশল করে যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়া হয় সিমেন্ট ক্রসিং ও ইপিজেড এলাকায়। এতে নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্য পৌঁছাতে না পেরে ভোগান্তিতে পড়ছেন কর্মব্যস্ত মানুষ।

অভিযোগ রয়েছে, ওই এলাকার ট্রাফিক পরিদর্শক ও সার্জেন্টকে ‘ম্যানেজ করে’ই চলছে এসব অনিয়ম। নিয়ম অনুসারে এসব যান এয়ারপোর্ট থেকে যাত্রী নিয়ে অংলকার পর্যন্ত যাওয়ার কথা থাকলেও সেখানে না গিয়ে সিমেন্টক্রসিং কিংবা ইপিজেডে এসেই গন্তব্য শেষ করা হয়। প্রতিদিন যাত্রীদের কাছ থেকে নানা অজুহাতে আদায় করা হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। শুধু তাই নয়, যাত্রীদের জিম্মি করে রাত আটটার পরে এ ভাড়া বেড়ে যায় নিয়মিত ভাড়ার চেয়ে কয়েকগুণ। ওই এলাকায় গণপরিবহন না থাকায় বাধ্য হয়ে এসব যানে চলাচল করছে বেশিরভাগ মানুষ।

সরেজমিনে চট্টগ্রামের ইপিজেড থানার সিমেন্টক্রসিং এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সিমেন্ট ক্রসিং এলাকায় বৈধ হিউম্যান হলার স্টেশনের অনুমতি না থাকার পরও সেখানে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত লম্বা সারি জুড়ে হিউম্যান হলার এয়ারপোর্টগামী যাত্রী বহনের জন্য দাঁড়িয়ে থাকে। হাতেগোনা কয়েকটি বৈধ যানবাহন ছাড়াও অধিকাংশ যানই লক্কড়জক্কড়।

জানা গেছে, এসব গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করছেন চট্টগ্রামের কয়েকজন কথিত পরিবহন শ্রমিক নেতা। তার মধ্যে সালাম, টিটু ও হানিফের নামে রাসেল নামের এক ব্যক্তি প্রতিটি হিউম্যান হলার থেকে চাঁদা আদায় করছেন ১০০ টাকা করে। সেখানে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০টি গাড়ি চলাচল করতে দেখা যায়।

পতেঙ্গা ১৫ নম্বর এলাকায় কার্গো জাহাজের মাস্টার মো. জসিম প্রতিদিন এয়ারপোর্ট থেকে অলংকার যাতায়াত করেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চাকরি করি ১৫ নম্বর এলাকায়। প্রতিদিন কাজ শেষ করে বাসায় ফিরতে হয় রাতে। গণপরিবহন না থাকায় এখানে চার চাকান হিউম্যান হলারগুলো এয়ারপোর্ট থেকে অলংকার যাওয়ার কথা থাকলেও তারা সেখানে না গিয়ে সিমেন্ট ক্রসিং এসেই নামিয়ে দেয়। পরে অন্য একটি গাড়ি ধরে আবার গন্তব্য যেতে হচ্ছে। এতে ভোগান্তির পাশাপাশি প্রতিদিন ব্যয় হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। ব্যয় হচ্ছে অতিরিক্ত সময়ও।’

একাধিক যাত্রী অভিযোগ করে বলেন, রাতে ছাড়াও দিনের অনেক সময় ১০ টাকার ভাড়ার পরিবর্তে দিতে হচ্ছে ১৫ টাকা। আবার ফ্রিপোর্ট গেলে দিতে হয় ১৫ টাকার পরিবর্তে ২০ টাকা। চালকরা প্রতিদিন রাস্তা ভাঙ্গা, যানজট ও যাত্রী সংকট ইত্যাদি অজুহাত দেখিয়ে আদায় করছে অতিরিক্ত কয়েকগুণ টাকা।

পতেঙ্গা ও এয়াপোর্ট এলাকায় কর্মরত ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘সিমেন্ট ক্রসিং এলাকায় হিউম্যান হলার চলাচলের নিয়ম হচ্ছে এয়ারপোর্ট থেকে অলংকার পর্যন্ত। সেখানে সিমেন্ট ক্রসিং পর্যন্ত এসেই গন্তব্য শেষ করে চালকরা। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (১৭ ডিসেম্বর) সার্জেন্টকে বলে ২টি গাড়ি ‘টো’ করেছি। সিমেন্ট ক্রসিংয়ে গাড়ির স্টেশন না করতে সার্জেন্ট নির্দেশনা দিয়েছেন।’

মুআ/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!