ইপিজেডের ৫০ বছরের পুরনো দীঘি ভরাট করে গার্মেন্টস কারখানা হচ্ছে

রাতের আঁধারে ভরাট করে ফেলা হচ্ছে ৫০ বছরের পুরনো চৌধুরী দীঘি। চট্টগ্রামের ইপিজেড থানা এলাকায় প্রায় ৭ একরের এ জলাশয়ের কিছু প্লট চিহ্নিত করে গোপনে চলছে ভরাটের কাজ। আইন না মেনে জলাশয় ভরাট করে সেখানে নির্মাণ হতে যাচ্ছে গার্মেন্টস কারখানা। দীঘিটির মালিকানায় থাকা একজন অংশীদার ভরাটের কাজ করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রাচীন এ জলাশয় ভরাটের ফলে পরিবেশে মারাত্মক প্রভাব পড়বে বলে আশংকা করা হচ্ছে।

স্থানীয়রা বলেছেন, মধ্যরাতে ভরাটের কাজ চলে। অদূর ভবিষ্যতে ইপিজেড এলাকায় পানি সংকট আরও বাড়বে। পরিবেশের ক্ষতি তো রয়েছেই।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেল, চট্টগ্রাম নগরীর ইপিজেড থানার চৌধুরী মার্কেট সংলগ্ন প্রায় ৭ একর বিস্তৃত এ ‘চৌধুরী দীঘি’। জলাধারটি ভিআইপি সড়ক নিকর্টবর্তী। সেখানে বেশিরভাগ অংশজুড়ে মাছ চাষ করা হয়। ওই দীঘির প্রথম থেকে মধ্যাংশজুড়ে করা গার্ড নির্মাণ করে প্লট তৈরি করা হয়েছে। প্রত্যেকটি প্লট ধরে গভীর রাতে চলে ভরাটের কাজ। দীঘির পাড়ের মাটি ও পাথর সমান করতে সেখানে সার্বক্ষণিক রয়েছে একটি স্কেভেটর।

ইপিজেডের ৫০ বছরের পুরনো দীঘি ভরাট করে গার্মেন্টস কারখানা হচ্ছে 1

ওই দীঘির মালিকানা বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইপিজেড এলাকার চৌধুরী দীঘি নামের এ দীঘিটির মালিকানায় রয়েছেন একাধিক ব্যক্তি। অংশীদার হিসেবে রয়েছেন ওই এলাকার গার্মেন্টস ব্যবসায়ী মফিজ চৌধুরীও। ওই দীঘির উপর গার্মেন্টস কারখানা নির্মাণের কথা চলছে।

স্থানীয় কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, অত্যন্ত জনবহুল এলাকা হল ইপিজেড এলাকা। সিইপিজেডের কর্মরত বেশিরভাগ পোশাক শ্রমিক এখানে বসবাস করেন। এখানে নেই বড় খাল, জলাশয়, পুকুর বা দীঘি। প্রায় ৭ একর জায়গাজুড়ে একমাত্র এই দীঘিটি প্রায় ৫০ বছর পুরনো। সরকারের নিষেধ থাকার পরও গোপনে প্রতিদিন ভরাটকাজ চলছে। এর ফলে অদূর ভবিষ্যতে এলাকায় প্রায় দেড় লাখ মানুষ পানির সংকটে পড়বে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইপিজেড থানার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন অফিসার ইফতেখার উদ্দিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ইপিজেড এলাকার ঐতিহ্যবাহী চৌধুরী দীঘিটি অনেক পুরোনো জলাশয়। এ জনবহুল এলাকায় আর কোনো এ ধরনের দীঘিও নেই। শিগগিরই কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ইপিজেড থানার ওসি মীর মো. নুরুল হুদা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘দীঘি ভরাটের বিষয়টি এখন শুনলাম। আমি খবর নিচ্ছি। সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের পরিচালক (মহানগর) নুরুল্লাহ নুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন মোতাবেক প্রাকৃতিক কোনো খাল, পুকুর, জলাশয়, নদী ইত্যাদি ভরাট করা সম্পূর্ণ বেআইনি। গোপনে কেউ যদি এ ধরনের কাজ করে থাকেন তাহলে সেটি অন্যায় হয়েছে। আমি লোক পাঠিয়ে ব্যবস্থা নেব।’

জলাধার ভরাট প্রসঙ্গে কী আছে আইনে?
প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০ অনুসারে প্রাকৃতিক খাল, পুকুর, জলাশয়, নদী ইত্যাদি ভরাট করা বেআইনি। আইনটির ৫ ধারায় বলা হয়েছে, প্রাকৃতিক জলাধার হিসেবে চিহ্নিত কোনো জায়গার পরিবর্তন বা অন্য কোনোভাবে ব্যবহার, ভাড়া, ইজারা ও হস্তাস্তর বেআইনি কাজ হিসেবে গণ্য হবে।

৮ ও ১২ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি এ আইনের বিধান অমান্য করলে ৫ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। অন্যদিকে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (২০১০ সালে সংশোধিত) অনুসারে, যে কোনো ধরনের জলাশয় ভরাট করা নিষিদ্ধ।

এসএস/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!