ইডেন টেস্ট তৃতীয় দিনে নিয়ে গেলেন মুশফিক

এখনো ইনিংস হারের শঙ্কা

ইডেন টেস্টের দ্বিতীয় দিনে ভারত যখন ইনিংস ঘোষণা করে (৩৪৭/৯) তখন তারা বাংলাদেশের চেয়ে ২৪১ রানে এগিয়ে। দ্বিতীয় দিনের খেলা পুরো এক সেশনের চেয়েও বেশি বাকি। প্রথম ইনিংসে গোলাপি বলে নীল হয়ে যাওয়া বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে নেমে হুড়মুড় করে ভেঙে পড়তে থাকে ব্যাটিং লাইনআপ। প্রথম ইনিংসের অভিজ্ঞতায় শঙ্কা জেগেছিল দ্বিতীয় দিনেই ইডেন টেস্ট শেষ হয়ে যাওয়ার। সেটি হয়নি, আবার যা হয়েছে সেটিও সুখকর নয়। ইনিংস ব্যবধানে হারের শঙ্কা নিয়ে দিনশেষ করেছে সফরকারীরা।

আরেকটি ইনিংস ব্যবধানে পরাজয় এড়াতেই আরও ৮৯ রান চাই টাইগারদের। হাতে ৪ উইকেট। যার এক উইকেট মাহমুদউল্লাহ শনিবার খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে মাঠ ছেড়েছেন হ্যামস্ট্রিং চোট নিয়ে। আর মুশফিকুর রহিম ৫৯ রানে অপরাজিত আছেন। যারা তৃতীয় দিনের টিকেট কিনেছেন তারা হয়তো শঙ্কাতেই পড়ে গিয়েছিলেন! এই বুঝি দুই দিনেই শেষ হয়ে যায় ইডেন টেস্ট। তাদের জন্য সুসংবাদ, খেলাটা অন্তত তৃতীয় দিন পর্যন্ত গড়িয়েছে। দুঃসময়ের দুর্বিপাকে হাবুডুবু খেতে থাকা বাংলাদেশ দল সম্ভাবনা জাগিয়ে রেখেছে ইনিংস পরাজয় এড়ানোর।

ভারতের ২৪১ রানের লিডের বিপরীতে বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে দ্বিতীয় দিন শেষ করেছে ৬ উইকেটে ১৫২ রান তুলে। হ্যামস্ট্রিংয়ে মাঠ ছাড়া মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ রোববার নামতে পারবেন কিনা তা এখনও অজানা। ৭০ বলে ৫৯ রানে অপরাজিত মুশফিকুর রহিমকে নয়ত সঙ্গ দিতে হবে ইবাদত-আল আমিনদের।

প্রতিপক্ষের লিড আড়াইশর কাছে, বড় রানের বোঝা। বেশ কঠিন এক লড়াইয়ে প্রথম ব্যর্থতা আনলেন সাদমান ইসলাম, প্রথম ওভারের পঞ্চম বলেই ‘ডাক’। ইশান্ত শর্মার সুইং অফস্টাম্পের বাইরে টার্ন নিয়ে আঘাত হানে তার প্যাডে। আম্পায়ার আউট দিতেই রিভিউ নিয়েছিলেন সাদমান, বাঁচতে পারেননি। তার মতো দলের রানও তখন শূন্য!

ইডেনের নন্দনকাননে ম্যাচে নিজের দ্বিতীয় শূন্য থেকে বাঁচতে পারেননি মুমিনুল হকও। ইশান্তের করা তৃতীয় ওভারের নিরীহ দর্শনের পঞ্চম বলটি কেনো খেলতে গেলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সেটাই প্রশ্ন। কোনরকম পায়ের কাজ ছাড়া শট খেলতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ঋদ্ধিমান সাহাকে ক্যাচ দিয়েছেন। ম্যাচে পেয়ার (এক টেস্টে দুই শূন্য) তার! চা বিরতিতে যাওয়ার আগে বাংলাদেশের রান তখন মাত্র ৭। উইকেটে ইমরুল কায়েস ও মোহাম্মদ মিঠুন।

২০ মিনিট বিরতি কাটিয়ে ফিরে কিসের তাড়াহুড়ো ছিল মোহাম্মদ মিঠুনের সেটা তিনিই ভালো জানেন। মাঠে নেমে ইনিংসকে বড় করতে পেরেছেন মাত্র দুই বল। উমেশ যাদবের করা পঞ্চম ওভারের প্রথম বল থেকে নিয়েছিলেন ২। পরের বলে হুক করতে গিয়ে শর্ট মিডউইকেটে মোহাম্মদ সামির হাতে ক্যাচ দিয়েছেন ৬ রানে, যাকে উইকেট বিলিয়ে আসাই বলে। ইন্দোর আর ইডেনে ৪ ইনিংস মিলিয়ে তার রান হল ৩৭।

মিঠুনের চেয়ে কায়েসের অবস্থা আরও করুণ! প্রথম টেস্টে দুই ইনিংস মিলিয়ে করেছিলেন ১২। ইডেনের প্রথম ইনিংসে ৪ রান করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যর্থতার ষোলোকলা পূর্ণ করলেন, এবার মাত্র ৫। ঘাতক ইশান্তই, আউটসাইড এজে ক্যাচ দিয়ে এসেছেন বিরাট কোহলির হাতে। চার ইনিংস মিলিয়ে বাঁহাতি ওপেনারের রান মাত্র ২৩! কেবল সান্ত্বনা একটাই যে, টপঅর্ডার ব্যাটসম্যানদের মধ্যে তিনিই শূন্য রানে আউট হননি!

১৩ রানে ৪ উইকেট হারানো বাংলাদেশকে খানিকটা এগিয়ে নিচ্ছিলেন দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। রক্ষণকে খোলসে ভরে দুজনেই বেছে নেন আক্রমণ পন্থা। তাতে রান এলো দ্রুতই। মাত্র ৪৭ বলে ৫০ রান আসে জুটিতে।

রান এলেও মুশফিক-মাহমুদউল্লাহর জুটি বেশ ঘটনাবহুল। একবার রিভিউ নিয়ে বেঁচেছেন মুশফিক, আবার বল মাথায় লেগে অল্পের জন্য ইনজুরি থেকেও বেঁচে গেছেন তিনি।

মুশফিক বাঁচলেও মাহমুদউল্লাহ রক্ষা পাননি চোট থেকে। ইডেনে ভারতের গতিময় পেসারদের বাউন্সারে আঘাত পেয়ে আগের ইনিংসে মাঠ ছেড়েছিলেন লিটন দাস ও নাঈম হাসান। এবার আরেক চোট কেড়ে নেয় মাহমুদউল্লাহকে। ৪১ বলে ৭ চারে ৩৯ করার পর হঠাৎই হ্যামস্ট্রিংয়ে টান পড়ে ডানহাতি ব্যাটসম্যানের। চোট গুরুতর হওয়ায় শেষ পর্যন্ত মাঠই ছাড়তে হয় তাকে।

মাহমুদউল্লাহ ফেরার পর উইকেটে আসেন এই টেস্টে লিটনের বদলি হিসেবে নামা মেহেদী হাসান মিরাজ। টপ অর্ডারদের তুলনায় খুব একটা খারাপও করেননি। একবার জীবন পেয়ে মুশফিকের সঙ্গে গড়েছেন ৫১ রানের জুটি।

মিরাজকে এক পাশে রেখে সিরিজে নিজের দ্বিতীয় ফিফটি তুলে নেন মুশফিক। ইশান্ত শর্মাকে চার মেরে মুশির ফিফটি এসেছে মাত্র ৫৪ বলে। মুশফিকের ফিফটি পাওয়া ওভারেই ফেরেন মিরাজ। ১৫ করে স্লিপে কোহলির হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে।

পরে তাইজুলকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা থাকলেও তা বড় হয়নি। ১১ রানে দিনের শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে তাইজুল ফেরার পরই দিন শেষের ঘোষণা দেন আম্পায়াররা। ৫৯ রানে অপরাজিত থেকে যান মুশফিক।

এর আগে ৩ উইকেটে ১৭৪ রান নিয়ে দিন শুরু করা ভারত ৯ উইকেটে ৩৪৭ রান তুলে ঘোষণা করে প্রথম ইনিংস। ১৩৬ রান করেছেন কোহলি। ১৮ চারে ১৯৪ বলে করা তার ১৩৬ রানের ইনিংস থামান ইবাদত হোসেন। উড়িয়ে মারতে গিয়ে তাইজুলের দারুণ এক ক্যাচে থামে ভারত অধিনায়কের ইনিংস।

৩টি করে উইকেট নিয়েছেন আল-আমিন ও ইবাদত হোসেন। ২ উইকেট রাহির। স্পিনার হিসেবে একমাত্র উইকেট তাইজুল ইসলামের। নাঈম হাসানের কনকাশন বদলি হিসেবে খেলছেন তিনি।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!