ইউসিবিতে ভাবির বদলে ননদ এখন নতুন চেয়ারম্যান, রনি আছেন আগের মতোই

সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও তার স্ত্রী রুখমিলা জামানের সব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দের নির্দেশ দেওয়ার পর ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) চেয়ারম্যান পদ থেকে রুখমিলাকে সরিয়ে সেই পদে বসানো হল ননদ রোকসানা জামান চৌধুরীকে। সম্পর্কে তিনি সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের বোন। এদিকে ব্যাংকের পরিচালক ও এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে জাবেদের ভাই আনিসুজ্জামান চৌধুরী রনি আগের মতোই রয়ে গেছেন ইউসিবির বোর্ডে।

বুধবার (১৪ আগস্ট) থেকে ব্যাংকটির নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর মেয়ে রোকসানা জামান চৌধুরীর নাম শোভা পাচ্ছে অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে।

এর আগে সোমবার (১২ আগস্ট) সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও তার স্ত্রী রুখমিলা জামানের সব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দের নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। জাবেদের স্ত্রী রুখমিলা জামান দীর্ঘদিন ধরে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। ব্যাংকগুলোকে দেওয়া এক চিঠিতে বিএফআইইউ জাভেদ ও তার স্ত্রীর নামে থাকা ব্যক্তিগত বা ব্যবসায়িক অ্যাকাউন্ট থেকে সব ধরনের টাকা উত্তোলন বন্ধ রাখতে বলা হয়। এছাড়া তাদের পরিবারের অন্য সদস্যদের নামে কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকলে আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তা জানাতে বলা হয়েছে।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ৮ আগস্ট থেকে বেসরকারি খাতের ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংককে (ইউসিবি) সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার পরিবারের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন ব্যাংকের দেড় শতাধিক শেয়ারধারী। গুলশানে ইউসিবির প্রধান কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে এই সময় তারা বিভিন্ন ফেস্টুন প্রদর্শন করে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর ‘বিদেশে অর্থ পাচার’ ও ব্যাংকটির নানা অনিয়ম নিয়ে অভিযোগ উত্থাপন করেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকে গত ৮ আগস্ট পাঠানো এক চিঠিতে ব্যাংকটির কিছু শেয়ারধারী জানিয়েছেন, রুখমিলা জামান ব্যাংকের চেয়ারপারসন হলেও সাইফুজ্জামান চৌধুরী কার্যত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন এবং তার ‘স্বেচ্ছাচারিতা ও লুটপাটের কারণে’ ব্যাংকটি আজ দেউলিয়া হওয়ার পথে। ওই চিঠিতে অভিযোগ করা হয়, সাইফুজ্জামান চৌধুরীর যুক্তরাজ্যে ১ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে, যা এই ‘ব্যাংকের আমানতকারীদের টাকা লুট করে পরিশোধ করা হয়েছে’।

চিঠিতে আরও অভিযোগ করা হয়, ২০১৭ সাল থেকে ব্যাংকটিকে একটি পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে ‘অবাধ লুটপাট, আর্থিক দুর্নীতি ও বিদেশে টাকা পাচার’ করা হয়েছে। ফলে ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। ২০১৭ সালে ব্যাংকে খেলাপি ঋণ ছিল ১ হাজার ৭৯২ কোটি টাকা, যা ২০২৩ সাল শেষে বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা।

শেয়ারধারীদের চিঠিতে আরও বলা হয়, সাইফুজ্জামান চৌধুরী তাঁর ক্ষমতা ব্যবহার করে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা উপেক্ষা করে মন্ত্রী থাকা অবস্থায় দায়িত্ব পালন করে গেছেন। এ জন্য ব্যাংকটির সম্পদের মান খুবই দুর্বল হয়ে পড়েছে। তা ছাড়া ব্যাংকটির উদ্যোক্তা পরিচালকদের ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন। না হলে এই ‘ব্যাংকের ওপর আমানতকারীদের আস্থা’ উঠে যেতে পারে। শেয়ারধারীরা পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে ‘পরিবারতন্ত্র ভেঙে’ দেওয়ার দাবি জানান।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm