ইউএসটিসিতে ৫ ডাক্তার মিলে শিশুরোগীর স্বজনদের পেটান, খুলশীর মামলায় অচেনা আরও বারো
শ্বাসকষ্টে শিশুর ছটফটানি, ডাক্তার ব্যস্ত মোবাইল গেমসে
চট্টগ্রামের ইউএসটিসি হাসপাতালে ডাক্তারের অবহেলায় তিন মাস বয়সী শিশুর মৃত্যুর পর তার স্বজনদের ওপর হামলায় জড়িত ছিলেন ওই হাসপাতালেরই পাঁচ ডাক্তার। এর মধ্যে তিনজন ইন্টার্ন ডাক্তার। বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) গভীর রাতের এই ঘটনায় চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী থানায় দায়ের করা মামলায়ও আসামি করা হয়েছে এই পাঁচজনসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১২ জনকে।
মামলায় অবহেলাজনিত মৃত্যু ও শিশুর স্বজনদের ওপর হামলার বিষয়ে অভিযোগ আনা হয়। মামলায় আসামি হওয়া পাঁচ ডাক্তার হলেন— ডা. শওকত, ডা. মেজবাহ এবং ইন্টার্ন ডা. সাব্বির, ডা. নাহিদ ও ডা. রিজভী। এর বাইরে অজ্ঞাতনামা আরও অন্তত ১২ জনকে আসামি করা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘মারা যাওয়া শিশুর স্বজনদের ওপর হামলা ও চিকিৎসকদের অবহেলায় ওই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে।’
এর আগে বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১২টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশু অনুরাজ চক্রবর্তী মারা যায়। এ সময় চিকিৎসায় অবহেলার প্রতিবাদ করলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের পক্ষ নিয়ে ওই শিশুর মা ও খালার ওপর হামলা চালায় ইন্টার্ন ডাক্তাররা। এই ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজে হামলার বিষয়টি উঠে আসে।
ঘটনাস্থলে এসে পুলিশ শিশুর স্বজনদের সরিয়ে নেওয়ার সময় পুলিশের সামনেও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা রোগীর স্বজনদের ওপর চড়াও হন।
মারা যাওয়া শিশুটির খালা ববির অভিযোগ করে জানান, শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ায় শিশুকে বারবার এনআইসিউতে নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করা হয়। এ সময় চিকিৎসকরা মোবাইলে গেমস খেলায় ব্যস্ত। ফলে মৃত্যু হয় শিশু অনুরাজের। এ ঘটনায় বিচার চাইতে গেলে স্বজনদের মারধর করেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।
ওই শিশুর বাবা রাজীব চক্রবর্তী জানান, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশু অনুরাজকে গত ২২ ফেব্রুয়ারি আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে এনআইসিউতে সিট খালি না থাকায় স্বজনরা ইউএসটিসিতে এনে এনআইসিইউতে ভর্তি করেন। ২৪ ফ্রেব্রুয়ারি রাউন্ডে আসা প্রফেসর এম সাদেক এই শিশুকে জেনারেল ওয়ার্ডে রাখার জন্য লিখে দেন। রাতে হঠাৎ শিশুর শ্বাসকষ্ট শুরু হলে শিশুর বাবা রাজীব দায়িত্বরত চিকিৎসক ও অনান্যদের শিশুর অবস্থা জানান। কিন্তু দায়িত্বরত চিকিৎসক তখন মোবাইলে গেমস খেলায় ব্যস্ত ছিলেন। অনেক অনুরোধের পরও সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন তারা। পরে শিশুকে এনআইসিইউতে আনা হলেও অল্প সময়ের মধ্যে শিশুটির মৃত্যু ঘটে।
রাজীব চক্রবর্তী আরও বলেন, মৃত্যুর বিষয়টি গোপন রেখে শিশুকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে চিকিৎসকরা চাপ সৃষ্টি করে তাদের ওপর। এতে তাদের সন্দেহ হয়। পরে জানানো হয় শিশুটি মারা গেছে।
এ বিষয়ে হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা এমন গাফিলতি করিনি। রোগীর স্বজনরা জানানোর সঙ্গে সঙ্গে শিশুকে চিকিৎসা দিলেও মৃত্যু হয়।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পেশায় ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রি শিশুটির বাবা রাজীব চক্রবর্তী। ৫ বছর পর তাদের প্রথম সন্তান হিসেবে আসে এই শিশু। শিশুটিকে হাসপাতালে এনে এনআইসিউতে রাখা হয়। প্রতিদিন সিট ভাড়া ৫ হাজার টাকার সাথে তাদের গুণতে হয়েছে আরও খরচ। স্বজনদের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিছু টাকা জমা দিতে বলে। কিন্তু টাকা যোগাড় করতে কিছু দেরি হওয়ায় এবং রোগীর অবস্থা কিছুটা উন্নতি হওয়ায় এনআইসিইউ থেকে জেনারেল ওয়ার্ডে ওই শিশুকে পাঠানো হয়।
এদিকে শিশুর স্বজনদের উপর হামলার ঘটনায় ওঠে আসে সাব্বির, রিজভীও নাহিদের নাম। তারা সবাই এই হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক। তাদের সঙ্গে আরও ১০-১২ জন ছিলেন বলেও জানা গেছে। ভিডিও ফুটেজে পুলিশের সামনেই সাব্বিরকে ওই শিশুর স্বজনদের উপর চড়াও হতে দেখা যায়।
এমএফও/সিপি