আড়াই মাসের শিশুকে ভুল টিকা, অভিযোগ করে উল্টো দুর্ব্যবহার পেলেন মা

আড়াই মাসের একটি শিশুকে দেওয়া হল ভুল টিকা। এ নিয়ে অভিযোগ করে উল্টো স্বাস্থ্যকর্মীর দুর্ব্যবহারের শিকার হয়েছেন শিশুটির মা। শুধু তাই নয়, স্বাস্থ্যকর্মীর কাছ থেকে দুর্ব্যবহারের শিকার হওয়ার পর দায়িত্বশীলদের কাছে অভিযোগ করেও উল্টো হয়রানির মুখে পড়েন ওই নারী।

চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলায় ঘটেছে এই ঘটনা। ওই নারীর পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন, তাদের আড়াই মাসের একটি শিশুকে ইপিআইয়ের ভুল টিকা দেওয়ার অভিযোগ করে প্রথমে স্বাস্থ্যকর্মীর দুর্ব্যবহারের শিকার হন শিশুটির মা। বাচ্চাকে ভুল টিকা দেওয়া ও এর প্রতিবাদ করে স্বাস্থ্যকর্মীর কাছ থেকে দুর্ব্যবহারের শিকার হওয়ার বিষয়ে দায়িত্বশীলদের কাছে অভিযোগ করে কোন সুরাহা না পাওয়ার অভিযোগও করেছেন তারা।

মঙ্গলবার (৭ জুলাই) সাতকানিয়া পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে ভোয়ালিয়া পাড়ার রূসকস ক্লাব টিকাদান কেন্দ্রে এই ঘটনা ঘটে। ওই নারীর স্বামী গিয়াস উদ্দিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমার মেয়ের বয়স আড়াই মাস। ৪৫ দিনের মাথায় তাকে ইপিআইয়ের প্রথম দফা টিকা দেওয়া হয়। তখন চার হাত পায়ে চারটি টিকা দেওয়া হয়। ৭ জুলাই তাকে দ্বিতীয় দফায় দুই পায়ে দুটি টিকা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু টিকা দিতে নিয়ে গেলে স্বাস্থ্যকর্মী ভুল করে প্রথম ডোজের টিকা দিয়ে দেয়। প্রথমে দুই হাতে দুটি টিকা দিয়ে পায়ে টিকা দিতে গেলে আমার স্ত্রী তাদের বলে দ্বিতীয় ডোজে তো শুধু দুই পায়ে দুটি টিকা দেওয়ার কথা। এরপর সে নিজের ভুল আড়াল করতে আমার স্ত্রীর সাথে খারাপ ব্যবহার শুরু করে।’

গিয়াসউদ্দিন বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবে একই টিকা দুবার দেওয়ায় এবং দ্বিতীয় দফায় টিকাবঞ্চিত হওয়ায় মেয়ের কোন ক্ষতি হয় কিনা তা নিয়ে আমার স্ত্রী আতংকিত হয়ে পড়ে। কিন্তু এই বিষয়ে কয়েক দফা স্বাস্থ্যকর্মীর সাথে কথা বলতে গেলেও স্বাস্থ্যকর্মী তাকে দুর্ব্যবহার করে তাড়িয়ে দেয়। পরে সে বাড়িতে এসে একজন পুরুষ নিয়ে আবার যায়। তখন ওই স্বাস্থ্যকর্মী স্বীকার করে যে সে ভুল টিকা দিয়েছে। এর জন্য ক্ষমাও চায় সে।’

তিনি বলেন, ‘তবে এই ভুলের কারণে কোন সমস্যা হবে কিনা বা এর সমাধান কী— এই বিষয়ে কিছুই বলতে পারেনি ওই স্বাস্থ্যকর্মী। তাই আমি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে ঘটনাটি জানাই। তবে তিনিও আমাকে কোনরকম সহযোগিতা করেননি। শুধু আমার বাচ্চা নয়, এসব টিকা তো সব বাচ্চার জন্যই জরুরি। এভাবে দায়সারাভাবে টিকাদান কর্মসূচি চালালে তো সবার জন্য বিপদ।’

নিজে ঢাকায় ব্যবসা করেন জানিয়ে গিয়াসউদ্দিন আরও বলেন, ‘আমি ঢাকায় থাকি বলে আমার স্ত্রী বাচ্চাকে নিয়ে টিকা দিতে গেছে। এখন সে নারী হওয়ায় যদি ভুল দেখে তা বলতে গিয়ে দুর্ব্যবহারের শিকার হয়, তাহলে আসলে যে উদ্দেশ্য নিয়ে এসব টিকা দেওয়া হচ্ছে তার কতটা সুফল পাওয়া যাবে সেটা নিয়েও তো প্রশ্ন উঠে। আমি তাই বিষয়টি নিয়ে সবার সাথে কথা বলেছি। দুঃখজনক বিষয় হলো জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে কেউই বিষয়টি খুব গুরুত্বসহকারে নেয়নি।’

এই বিষয়ে জানতে চাইলে সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আবদুল মজিদ ওসমানী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘একজন ব্যক্তি ফোন করে এই বিষয়ে অভিযোগ করেছিলেন। আমি উনাকে বলেছিলাম বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) যেন তিনি অফিসে আসেন। আমি বিষয়টি দেখবো। কিন্তু তিনি তো এলেন না। তবে ইপিআইয়ের টিকা নিয়ে মাঝে মাঝে ভুল বোঝাবুঝি হয়। সামনাসামনি কথা বললে বোঝা যেতো আসলে কী হয়েছে।’

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!