নিলামে সর্বোচ্চ দরদাতা হয়ে ২ কোটি ৫৬ লাখ টাকার পণ্য নিতে পে-অর্ডার করার কথা ২৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা। কিন্তু চালাক ব্যবসায়ী সে পণ্য নিতে চেয়েছিলেন মাত্র ১২০ টাকায়। সেজন্য কাস্টমসে পে-অর্ডারও করেছিলেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না, ব্যাংকে যাচাই করার পর ধরা পড়লো ব্যবসায়ীর জালিয়াতি। আর পে-অর্ডার জালিয়াতির কারণে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী খলিলুর রহমানকে এখন যেতে হচ্ছে জেলে। বুধবার (২০ অক্টোবর) তাকে প্রধান আসামি করে মামলা করা হয়েছে নগরের বন্দর থানায়।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের নিলামে সিএনজি চালিত ট্যাক্সির চালানে ২৫ লাখ ৬০ হাজার টাকার পে-অর্ডার দাখিল করেছিলেন খলিলুর রহমান নামের ওই দরদাতা। ব্যাংকে যাচাই করে দেখা যায়, প্রকৃতপক্ষে পে-অর্ডারটি ছিল ১২০ টাকার। এমন জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়ায় খলিলুর রহমানের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের বন্দর থানায় ফৌজদারী আইনে মামলা দায়ের করে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস।
বুধবার (২০ অক্টোবর) কাস্টম হাউসের নিলাম শাখার সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা (এআরও) রাশেদুর রহমান বাদী হয়ে এই মামলা দায়ের করেন। মামলায় বিবাদী করা হয়েছে খলিলুর রহমানকে। তার বাড়ি চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলায়। চট্টগ্রাম নগরীর মোগলটুলি এলাকায় বসবাস করেন তিনি।
মামলার বাদী রাশেদুর রহমান বলেন, রাজস্ব ফাঁকি এবং নিলাম কার্যক্রম ব্যাহত করার দায়ে বিডার মো. খলিলুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় আসামির বিরুদ্ধে প্রতারণার উদ্দেশ্যে জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়েছে। এ ঘটনা ছাড়াও বিডার খলিলুর রহমানের বিরুদ্ধে জালিয়াতির আরও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এর আগে একটি লটে ১ কন্টেইনার ফ্লোর ম্যাট পণ্যের ২ লাখ ৬০ হাজার টাকার পে অর্ডারের জায়গায় মাত্র ১৫০ টাকার এবং ৩ কন্টেইনার পিভিসি ব্যানার পণ্যের একটি লটে ১৯ লাখ ৪৭ হাজার ৮৫৮ টাকার জায়গায় ১২৫ টাকার পে অর্ডার জমা দেন। যার প্রমাণ পেয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। এর মধ্যে দুটি লটের সর্বোচ্চ দরদাতাও নির্বাচিত হন তিনি।
জালিয়াতির এসব ঘটনায় খলিলুর রহমানের বিরুদ্ধে আরও একটি ফৌজদারী মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানান চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের নিলাম শাখার সহকারী কমিশনার।
বন্দর থানায় দায়ের হওয়া মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, বিডার খলিলুর রহমান কাস্টমসের নিলাম শাখা কর্তৃক পণ্যক্রয়ের উদ্দেশ্যে গত ৯ জুন দুই কোটি ছাপান্ন লাখ টাকা বিড মূল্যে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে গণ্য হন। দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী বিডমূল্যের ১০ শতাংশ অর্থাৎ পচিঁশ লক্ষ ষাট হাজার টাকা সরকারি ট্রেজারিতে জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সে অনুযায়ী খলিলুর রহমান গত ৯ জুন এক্সিম ব্যাংক লিমিটেড শেখ মুজিব রোড শাখার পঁচিশ লাখ ষাট হাজার টাকার একটি পে-অর্ডার জমা করেন।
মামলার এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, ওই পে-অর্ডারটির ব্যাপারে সন্দেহ দেখা দিলে পে-অর্ডারটি যাচাই করতে এক্সিম ব্যাংকে চিঠি পাঠায় কাস্টম হাউস। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসকে জানায়, পে-অর্ডারটির (নং ২০২০২০৫৯) প্রকৃত টাকার পরিমাণ মাত্র ১২০ টাকা।
পে-অর্ডারটি নগদায়নের লক্ষ্যে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড, কাস্টম হাউস, চট্টগ্রাম শাখায় নগদায়নের জন্য গত ৯ আগস্ট প্রেরণ করা হয়। টাকার অংক পরিবর্তন হওয়ায় পে-অর্ডারটি নগদায়ন করা সম্ভব হয়নি।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের নিলাম শাখার সহকারী কমিশনার আলী রেজা হায়দার বলেন, কাস্টমসে জাল-জালিয়াতি করে ছাড় পাওয়ার সুযোগ নেই। খলিলুর রহমানের বিরুদ্ধে আরও একটি ফৌজদারী মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। তিনি জালিয়াতি করে মারাত্নক অপরাধ করেছেন। তাই তাকে একচুলও ছাড় দেওয়া হবে না।
মামলার বিষয়ে বন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নিজাম উদ্দিন বলেন, পে-অর্ডার জালিয়াতির ঘটনায় কাস্টমসের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্তে জালিয়াতির বিষয়টি প্রমাণিত হলে আসামিকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
মামলায় অভিযুক্ত দরদাতা খলিলুর রহমান বলেন, কাস্টমসের নিলাম শাখার একজন ডিসি যড়যন্ত্র করে আমাকে মামলায় ফাঁসাচ্ছেন। আমার পণ্যটা দেয়নি। পণ্য চালান না দিয়ে পে-অর্ডার যাচাই করে মামলা করা অন্যায়। এটা আমার বিরুদ্ধে পুরোটাই ষড়যন্ত্র।
কেএস