ক্যাসিনোর পণ্য আমদানি স্থগিত করার জন্য কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনআরবি)। বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এই তথ্য জানান।
মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ইতিমধ্যে ক্যাসিনো পণ্য আমদানি স্থগিতের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দেশে ক্যাসিনো অবৈধ হলেও এতদিন আমদানি নিষিদ্ধ পণ্যের তালিকায় ক্যাসিনোয় ব্যবহৃত পণ্যগুলো ছিল না। ফলে সেগুলো খেলার সামগ্রী ও বিভিন্ন নামে বিভিন্ন দ্রব্যের সঙ্গে এসেছে।
তিনি বলেন, ১৯৭৩ সালের পর থেকে এসব পণ্য দেশে নিষিদ্ধ। শুধু বিদেশিদের জন্য সীমিত আকারে মদ চালু ছিল। দেশে ক্যাসিনোর কোনও অনুমতি নেই।
দেশে ক্যাসিনো অবৈধ, কিন্তু বিস্ময়করভাবে ক্যাসিনো সরঞ্জাম আমদানিতে কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই শুল্ক আইনে। নিষেধাজ্ঞা না থাকার এই ফাঁককে পুঁজি করে বছরের পর বছর ধরে বাধাহীনভাবে চলছে ক্যাসিনো সরঞ্জাম আমদানি। সরকারও এ থেকে কর পেয়ে আসছে।
আমদানি নীতির দুর্বলতায় ক্যাসিনোতে ব্যবহৃত চিপ, কয়েন ও টেবিল সহজেই ঢুকছে দেশে। কারণ আমদানির বাণিজ্যিক ঘোষণায় এগুলোকে দেখানো হয় জুতো, বিনোদন এবং ক্রীড়াপণ্য সম্পর্কিত সরঞ্জাম হিসাবে। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের (সিআইআইডি) এক তদন্তে এ ধরনের বেশকিছু ঘটনা বেরিয়ে এসেছে।
এনবিআর চেয়ারম্যান জানান, নিষিদ্ধ পণ্যের তালিকায় ক্যাসিনো পণ্যকে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যেই বাণিজ্য সচিবকে ক্যাসিনোয় ব্যবহৃত পণ্যকে আইপিওতে নিষিদ্ধ পণ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে চিঠি দেওয়া হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অবৈধ ক্যাসিনো বন্ধ করা কিংবা সেখানে মানুষের আনাগোনা কমানো রাজস্ব প্রশাসনের কাজ নয়। তবে ২০০৯ থেকে এখন পর্যন্ত ক্যাসিনো সামগ্রী কারা আমদানি করেছে তা খুঁজে বের করা হচ্ছে। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর এ নিয়ে কাজ করছে বলে তিনি জানান।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর অন্তত সাতটি প্রতিষ্ঠানকে ইতিমধ্যে চিহ্নিত করেছে, যারা ক্যাসিনো সরঞ্জাম আমদানির সঙ্গে জড়িত। এ বিষয়ে অধিকতর তদন্ত চলছে বর্তমানে। কাস্টমস এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড অবৈধ ক্যাসিনো সরঞ্জাম আইনি উপায়ে আমদানির ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের তথ্য অনুসারে, ২০১৬ সালের ৭ ডিসেম্বর এএম ইসলাম অ্যান্ড সন্স লিমিটেড চীন থেকে ৭০টি ক্যাসিনো চিপ আমদানি করে। প্রতিষ্ঠানটি সাউথইস্ট ব্যাংকে ৮ দশমিক ৮৮ লাখ টাকার ঋণপত্র খুলে সরঞ্জামগুলো বাংলাদেশে নিয়ে আসে। এই আমদানির বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটি কাস্টমস শুল্ক, পরিপূরক শুল্ক এবং মূল্য সংযোজন কর হিসাবে মাত্র ৪ হাজার ১৮৮ টাকা এনবিআরকে পরিশোধ করে।