বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশনের (বিএসএএ) বর্তমান কমিটির মেয়াদ বাড়লো আরও ছয় মাস।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠন-২ এর উপসচিব তাহসিনা বেগম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এই অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বর্ধিত এই মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৫ দিন আগে পরবর্তী পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন সম্পন্ন ও দায়িত্ব হস্তান্তর করার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে মন্ত্রণালয় থেকে।
বাণিজ্য সংগঠন আইন মোতাবেক এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের স্বার্থে আগামী ২৮ এপ্রিল থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে নির্বাচনের ৯০ দিন আগে ৩ সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচন বোর্ড এবং ৩ সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচনী আপিল বোর্ড গঠনের জন্য পরিচালনা পর্ষদকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন বোর্ড ৮০ দিন আগে তফসিল প্রকাশ করবে।
ব্যবসায়ীদের অনুরোধে মন্ত্রণালয়ের সাড়া
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস্ এসোসিয়েশন নির্বাচনী বোর্ডের চেয়ারম্যান তারেক কামাল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠনের মহাপরিচালক বরাবরে দেওয়া একটি চিঠিতে শিপিং এজেন্টস্ এসোসিয়েশনের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ ২৯ এপ্রিল থেকে ৬ মাস বৃদ্ধির অনুমোদন প্রদানের অনুরোধ জানান।
ওই চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস্ এসোসিয়েশনের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ আগামী ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত রয়েছে। এসোসিয়েশনের পরবর্তী পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচনের লক্ষ্যে যথাসময়ে ইলেকশন বোর্ড এবং ইলেকশন আপিল বোর্ড গঠন করা হয়। ইলেকশন শিডিউল মোতাবেক পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচনের তারিখ আগামী ১৩ এপ্রিল নির্ধারিত ছিল। নির্বাচন সংক্রান্ত সমুদয় ধাপ ইতোমধ্যে যথাসময়ে প্রতিপালন করা হয়। কিন্তু ইতোমধ্যে পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচনের ব্যাপারে পরিচালক পদের কয়েকজন প্রার্থী এবং ‘বৈষম্যের শিকার’ ব্যবসায়ী ফোরাম কর্তৃক আপত্তি উত্থাপন করা হয়। উক্ত আপত্তিসমূহ ইলেকশন আপিল বোর্ডের সভায় আলোচনান্তে ইলেকশন আপিল বোর্ডের সকল সদস্য মতামত ব্যক্ত করে, উত্থাপিত আপত্তিসমূহ সমাধান এবং নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি সময়সাপেক্ষ। তাই বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
ভোট ছিল ১৩ এপ্রিল
এর আগে ২৪ সদস্যবিশিষ্ট পরিচালনা পর্ষদের ২০২৫-২০২৭ মেয়াদের নির্বাচন গত ১৩ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। সংগঠনটির মোট ভোটার সংখ্যা ২২৬ জন। সদস্যরা ২৪ জন পরিচালক নির্বাচন করার পর সেখান থেকে পরিচালকরা মিলে একজন চেয়ারম্যান, দুজন সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও দুজন ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেন। অন্যরা পরিচালক হিসেবে থাকেন।
জানা গেছে, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ৯ মার্চ পর্যন্ত সাধারণ ক্যাটাগরিতে ১৬ পরিচালক পদের জন্য ২৮ জন এবং সহযোগী ক্যাটাগরিতে ৮ পরিচালক পদের জন্য ১৭ জন মনোনয়নপত্র জমা দেন। দুজন প্রার্থী উভয় ক্যাটাগরিতে মনোনয়ন জমা দেওয়ায় মোট মনোনীত প্রার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৩ জনে। এর মধ্যে ৩৬ জনই বলেছেন, তারা নির্বাচন ছাড়া অগণতান্ত্রিক পন্থায় নেতৃত্বের পরিবর্তন চান না। গত ২৭ মার্চ চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশিত হয়।
রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের অভিযোগ
নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে হঠাৎ করেই চট্টগ্রাম বিএনপির কয়েকজন নেতা বিএসএএর নির্বাচন বন্ধ করতে তৎপর হয়ে ওঠেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
শিপিং খাতের ঐতিহ্যবাহী সংগঠনটির পূর্বনির্ধারিত দ্বিবার্ষিক নির্বাচন বন্ধ করে সিলেকশনের মাধ্যমে ‘নিজেদের লোক’ বসাতে মরিয়া হয়ে ওঠেন চট্টগ্রাম বিএনপির কয়েকজন নেতা। তাদের হুমকির মুখে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধিভুক্ত সংগঠনটি নির্বাচনের মাত্র এক সপ্তাহ আগে নির্বাচনের ভেন্যু পরিবর্তন করতেও বাধ্য হয়। সংগঠনটির অফিসে গিয়ে শিপিং ব্যবসার সঙ্গে দূরতম সম্পর্ক নেই—এমন ‘বিএনপি ক্যাডার’রা গিয়ে নির্বাচন কমিশন ও শিপিং ব্যবসায়ীদের হুমকি দেয় বলেও অভিযোগ ওঠে। ৪৭ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত শিপিং খাতের গুরুত্বপূর্ণ সংগঠনটি অতীতে কখনও এ ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়নি।
জানা গেছে, সংগঠনটির ৯৫ ভাগেরও বেশি সদস্য অবাধ নির্বাচনে যে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপের বিরোধী। শিপিং ব্যবসায়ীরা বলছেন, নির্বাচিত কমিটিকে পাশ কাটিয়ে নিজেদের ‘পছন্দের লোক’ বসিয়ে অনির্বাচিত কমিটি গঠনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, শিপিং এজেন্টদের ভেন্ডর নিয়োগ ও বিভিন্ন কাজ বাগিয়ে নেওয়ার নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে রাখা।
সিপি