আরএফ বিল্ডার্সের দেলোয়ারের সম্পদ ক্রোকের নির্দেশ

দুদকের সম্পদ বিবরণীতে মিথ্যা তথ্য দেওয়া ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের দায়ে চট্টগ্রামভিত্তিক আবাসন প্রতিষ্ঠান আরএফ প্রপার্টিজ লিমিটেড ও আরএফ বিল্ডার্স লিমিটেডের স্বত্ত্বাধিকারী দেলোয়ার হোসেনের (৬১) স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ও ব্যাংক হিসাব ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন চট্টগ্রামের একটি আদালত।

বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম মহানগরের সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. আকবর হোসেন মৃধা এ আদেশ দেন বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কৌঁসুলি কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাভলু।

আরএফ প্রপার্টিজ লিমিটেড ও আরএফ বিল্ডার্স লিমিটেডের স্বত্ত্বাধিকারী দেলোয়ার হোসেন চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার পশ্চিম গাটিয়াডেঙ্গা গ্রামের এয়াজর রহমানের ছেলে। বর্তমানে তিনি নগরের গোলপাহাড় এলাকার মেহেদীবাগ ২৩/২ আরএফ টাওয়ারের পঞ্চম তলায় বসবাস করেন।

দুদকের অনসন্ধানে মো. দেলোয়ার হোসেনের নথিসংক্রান্ত রেকর্ড পর্যালোচনা করে ২০০৪-০৫ করবর্ষে আয় বাবদ ৪৫ লাখ ২৬ হাজার ২৮৩ টাকা, রেমিট্যান্স বাবদ ৬৭ লাখ ৮৩ হাজার ২৫৫ টাকা, জমি বিক্রি বাবদ ৩৯ লাখ ৩০ হাজার টাকা, আয়কর অধ্যাদেশ ৮২-সি মূলে ২৬ লাখ ৬ হাজার ৮৪০ টাকাসহ মোট ১ কোটি ৭৮ লাখ ৪৬ হাজার ৩৭৮ টাকা বৈধ আয়ের উৎস পাওয়া গেছে।

অন্যদিকে সম্পদবিবরণী যাচাইকালে দেলোয়ার হোসেনের নিজ নামে ৩ কোটি ২০ লাখ ৬৪ হাজার ৪২৫ মূল্যের স্থাবর সম্পত্তি এবং ১ কোটি ৭৫ লাখ ৫৯ হাজার ৩৭৮ টাকার মূল্যের অস্থাবর সম্পদসহ নিজ নামে সর্বমোট ৪ কোটি ৯৬ লাখ ২৬ হাজার ৮০৩ টাকার খোঁজ পেয়েছে দুদক। একই সময়ে তিনি পারিবারিক ব্যয় করেছেন ৩৪ লাখ ৫৩ হাজার ৮২১ টাকা। সবমিলিয়ে তার অর্জিত সম্পদের পরিমাণ (৪,৯৬,৪৬,৮০৩+৩৪,৫৩,৮২১) = ৫ কোটি ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৬২৪ টাকা।

ওই সম্পদের বিপরীতে দেলোয়ার হোসেনের গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া গেছে ১ কোটি ৭৮ টাকা ৪৬ হাজার ৩৭৮ টাকা। এক্ষেত্রে তার অর্জিত সম্পদের চেয়ে (৫,৩০,৭৭,৬২৪-১,৭৮,৪৬,৩৭৮) ৩ কোটি ৫২ লাখ ৩১ হাজার ২৪৬ টাকা মূল্যের সম্পদের উৎস খুঁজে পায়নি দুদক।

দুর্নীতি দমন কমিশন জেলা সমন্বিত কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর উপ-সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ জাফর সাদেক শিবলী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার পর তার বিভিন্ন সম্পদ বিক্রি করার চেষ্টা করছেন—এ মর্মে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানতে পারে দুদক। এ অবস্থায় তার সম্পদ বা সম্পত্তির বিষয়ে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে তা বেহাত হয়ে রাষ্ট্রের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দুদক কমিশনের বিধিমালা ২০০৭ এর বিধি ১৮ ধারামতে তার বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে মোট ২ কোটি ৫৩ লাখ ৯ হাজার ২০ টাকার মূল্যের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোকের আবেদন করা হয়। বুধবার এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার সম্পত্তির ক্রোকের আদেশ দেন আদালত।’

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ১৯ জুন দুর্নীতি দমন কমিশনের কাছে মো. দেলোয়ার হোসেন দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে ২ কোটি ১ লাখ ৬৯ হাজার ৮৯২ টাকা স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি অর্জনের তথ্য গোপন করে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন বলে অভিযোগ আনে দুদক। ৩ কোটি ৩২ লাখ ৩১ হাজার ২৪৬ টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ জ্ঞাত আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণভাবে ভোগদখলে রেখে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪-এর ২৬ (২) ও ২৭ (১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করার অভিযোগ এনে দুদকের জেলা সমন্বিত কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর উপ সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিন বাদি হয়ে ঢাকার রমনা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

এএম/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!