আরএফপি বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের ‘জার্নালিজম ফর পিস ইন কমিউনাল ইস্যুজ’ শীর্ষক সংলাপ
প্রতিটি ধর্মই শান্তির বার্তা দেয়। পারস্পরিক ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহনশীলতা একটি সমাজকে সুন্দরভাবে গড়ের তোলার জন্য অপরিহার্য। অপরদিকে আন্তঃধর্মীয় বিদ্বেষ ও অসহিষ্ণু আচরণ সমাজকে অস্তির ও অশান্ত করে তোলে। তবে, ধর্মকে কখনো, কখনো সাম্প্রদায়িক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের অপচেষ্টা সংঘাত ও সহিংসতাকে উসকে দেয়, যা সমাজ ও রাষ্ট্রের নিরাপত্তা তথা সমৃদ্ধির অন্যতম অন্তরায়। এক্ষেত্রে সমাজে শান্তি ও সম্প্রীতি বিনির্মাণে সংবাদ মাধ্যমের ভূমিকা অপরিহার্য। সাম্প্রদায়িক ইস্যুতে দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা রুখে দিতে পারে শান্তি ও সম্প্রীতি বিনষ্টের অপচেষ্টা।

রিলিজিয়নস ফর পিস (আরএফপি) বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের ‘জার্নালিজম ফর পিস ইন কমিউনাল ইস্যুজ’ শীর্ষক সংলাপে বক্তারা উপরোক্ত অভিমত ব্যক্ত করেন।
শনিবার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর সিনিয়র’স ক্লাবে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
আরএফপি বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের সভাপতি প্রফেসর ড. সুকান্ত ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারি জেনারেল প্রফেসর ড. মাছুম আহমেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সংলাপে মূল বক্তৃতা উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট কবি ও সাংবাদিক ওমর কায়সার। অনুষ্ঠান উপকমিটির আহবায়ক সাংবাদিক ও আবৃত্তিশিল্পী ফারুক তাহেরের শুভেচ্ছা বক্তব্য দিয়ে সূচিত সংলাপে অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন আরএফপি কার্যকরী কমিটির সদস্য প্রফেসর রণজিৎ কুমার দে, প্রফেসর ড. রাশেদা খানম, কোষাধ্যক্ষ বিশ্বজিৎ বড়ুয়া, যুগ্ম সম্পাদক তপু চৌধুরী, সাংবাদিক শেখ গোলামুন্নবী যায়েদ, আল রাহমান প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন সংগঠনের কার্যকরী কমিটির সদস্য চবি শিক্ষক মিশকাতুল মমতাজ মুমু। পবিত্র গ্রন্থসমূহ থেকে পাঠ করেন যথাক্রমে সাংবাদিক ফারুক তাহের, মুক্তা চক্রবর্তী, কবি বিশ্বজিৎ বড়ুয়া ও তেরেসা আইরিন।
সংলাপে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নানা ঘটনার দৃষ্টান্ত তথা নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে মূল বক্তা সাংবাদিক ওমর কায়সার বলেন, এদেশ সম্প্রীতির দেশ। যুগযুগ ধরে আমরা দেখে এসেছি। কিন্তু ইদানিংকালে মানুষে মানুষে ভেদ ও ধর্মীয় উন্মাদনায় পর্যবষিত হয়ে একটা শ্রেণি এদেশের মানুষের সম্প্রীতির বন্ধন ও বিশ্বাসে চিড় ধরানোর অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মূলত রাজনৈতিক কারণে দলীয় চিন্তা-চেতনার বোধ-ব্যাধী সাধারণ মানুষের উপর অনেকটা প্রভাব খাটিয়ে চাপিয়ে দেওয়ার কারণেই এটি হচ্ছে।
তিনি স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, সাংবাদিকতা এবং সংবাদ পরিবেশনার ক্ষেত্রে আমাদের হয়ত শতভাগ স্বাধীন থাকার পরিবেশ নেই। কিন্তু সত্য ঘটনা সত্যই, তা ধর্মীয় ইস্যু হোক আর রাজনৈতিক ইস্যু হোক সেটা সত্য হিসেবেই প্রকাশ পাবে। কারণ, সত্য কখনো চাপা থাকে না, থাকতে পারে না।
আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি বিনির্মাণে সাংবাদিকদের ভূমিকার ওপর গুরুত্বারোপ করে অন্যান্য বক্তারা বলেন, দেশে দেশে, মানুষে মানুষে ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনির্মাণ ও তা রক্ষার ক্ষেত্রে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের ভূমিকা অপরিসীম। সাংবাদিকতায় স্বাধীন পরিবেশ যে রাষ্ট দিতে পাওে, সে রাষ্ট্র তত বেশি উন্নত ও আধুনিক হতে পেরেছে।
অনুষ্ঠানে সংগঠনের কার্যকরী কমিটির সদস্য প্রবীণ সাংবাদিক আবুল কালাম আজাদের অকস্মাৎ মৃত্যুতে তাঁর আত্মার মাগফেরাত কামনা করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সংলাপে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক সংবাদ মাধ্যমের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সাংবাদিক স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন।
উল্লেখ্য, শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে ১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত আরএফপি সারা বিশ্বেই একযোগে কাজ করছে। বর্তমানে প্রায় ১৪০টি দেশে আরএফপি’র সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশেও সংগঠনটি পথ চলছে বহু বছর ধরে। বিশেষ করে ২০১৬ সাল থেকে বিস্তৃত পরিসরে আরএফপি’র কর্মতৎপরতা চলছে।