আম্রপালির ফলন কমায় ৩ হাজার বাগান মালিকের মাথায় হাত খাগড়াছড়িতে

আম্রপালি আমের জন্য বিখ্যাত খাগড়াছড়ি জেলা। কিন্তু এ বছর আশানুরূপ ফলন হয়নি আম্রপালির। গত বছর যেখানে ১০০ টন আম পেয়েছে এবার সেখানে পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৩০ টন। অনেক বাগানে বিক্রি করার মতো আমের ফলনও হয়নি। আবার অনেকে শ্রমিক এবং সার-কীটনাশকের টাকা তুলতেও হিমশিম খাচ্ছেন। আর এমন অবস্থা দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছে জেলার তিন হাজারের বেশি পেশাজীবী আমবাগান মালিকের।

তবে বৈরী আবহাওয়ার কারণে ফলন কম হয়েছে বলে জানান বাগান মালিকরা।

আমবাগানে ঘুরে দেখা গেছে, বাগানে আমের ফলন কম। আবার অনেক বাগানে ফলনও আসেনি। গাছে ফলন কম হওয়ায় স্প্রে করছেন না অনেক বাগানি।

আম্রপালি আমবাগানের চাষি মংসুইপ্রু মারমা বলেন, ‘এবার গাছে আমের মুকুল আসেনি। বাগানে দেওয়া কীটনাশকের টাকা তুলতে পারবো কিনা জানিনা। এজন্য অনেক বাগানিরা ওষুধ প্রয়োগ করবে কিনা সে চিন্তায় আছে।’

তিনি বলেন, ‘আজ আম ছিঁড়ে দু-এক রাত রাখলে কিছু আমে ছিদ্র দেখা দেয়। তবে এটা পোকার ছিদ্র না। এখানকার আম সারাদেশে যায়। তবে কখনও ওইরকম পোকা হয় বলে শুনিনি।’

আমবাগান মালিক চানুমং মারমা বলেন, ‘এ বছর কোনো কোনো বাগানে ঠিকমত ওষুধ দেওয়া হয়নি। গত বছর যেখানে ১০০ টন আম পেয়েছি সেখানে এ বছর পাচ্ছি ৩০ টন। শ্রমিকের খরচ এবং স্প্রে-ওষুধের খরচও ভালোভাবে তুলতে পারিনি।’

Yakub Group

বাগান মালিক সমিতির প্রধান উপদেষ্টা অনিমেষ চাকমা রিংকু বলেন, ‘হাজারে দু-চারটা আমে পোকা পাওয়া যাচ্ছে। কৃষি বিভাগের কোনো তদারকি নেই। বাগান মালিকরা যে যেভাবে পেরেছে গাছে স্প্রে করেছে।’

তিনি বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় ফল এসেছে চার ভাগের এক ভাগ। ফলন কম ও বাজারে দাম কম পাওয়ার কারণে বাগানিদের আগ্রহ কমে যাচ্ছে। সার-কীটনাশকের দাম বাড়ছে। এসব বিষয়ে কৃষি বিভাগের তদারকির নেই তেমন। সরকারি প্রতিষ্ঠানের অতিরিক্ত টোল আদায়ের কারণেও আম চাষে বাগান মালিকদের আগ্রহ কমে যাচ্ছে।’

খাগড়াছড়ি পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মালেক বলেন, ‘ভালোভাবে পরিচর্যা করা না গেলে আমে পোকা হবে। অনেক বাগানের গাছে আম ধরেনি। আম পাড়ার পরে গাছে কেউ সার দেয় না। শুধুমাত্র ফল দেখলেই সার দেয়। সারাবছর গাছের যত্ন না নিয়ে শুধু ফল চাইলে হবে?’

খাগড়াছড়ি খেজুরবাগান হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-সহকারী পরিচালক সুজন চাকমা বলেন, ‘যেসব বাগানে পরিচর্যা কম, সেসব বাগানে আমের ফলনও কম হবে। আর আমে পোকা থাকতেই পারে। পোকা দমন না করলে পুরো বাগানের আমে পোকা হতে পারে।’

তিনি বলেন, আবহাওয়া পরির্বতনের কারণে এ বছর খাগড়াছড়িতে আমের ফলন কম। কিছু বাগানে বেশি পরিচর্যা করেছে, সেই সমস্ত বাগানে ফলন পেয়েছে।’

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (গাজীপুর) ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. মাজরারুল করিম বলেন, ‘বৃষ্টি বেশি পড়লে আর্দ্রতার কারণে পোকামাকড় ধরতে পারে। আবহাওয়া রৌদ্র্যজ্জ্বল হলে পোকা কম হয়।’

তিনি বলেন, ‘গাছের একটা ধারণ ক্ষমতা আছে। এক বছর ফলন কম হলে আরেক বছর ভালো হয়।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!