আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামে (আইআইইউসি) অটাম সেমিস্টারের ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৮ জুন) বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়ামে এই সেমিস্টারে ভর্তি হওয়া ১২০০ নবীন শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে এই প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আইআইইউসি বোর্ড অব ট্রাস্টের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর আনোয়ারুল আজিম আরিফের সভাপতিত্বে ওরিয়েন্টেশন স্পীকার ছিলেন ইসলামী চিন্তাবিদ ও আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ।
ওরিয়েন্টেশন স্পীকারের বক্তব্যে শায়খ আহমদুল্লাহ বলেন, ‘আইআইইউসি এমন শিক্ষার্থী তৈরি করেছে যারা বিশ্বব্যাপী যোগ্যতার প্রমাণ রাখছে। তারুণ্যের কোনো কালিমা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে যেন না লাগে তা নিশ্চিত করতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশই যথেষ্ট। নৈতিকভাবে শক্তিশালী হওয়ার মধ্য দিয়েই অন্য দশটি প্রতিষ্ঠান থেকে আইআইইউসিকে আলাদা থাকতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পড়তে এসে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক গড়ে তরুণদের অনেকে নিজের মেধা-চরিত্রকে ধ্বংস করছে। আইআইইউসি শিক্ষার্থীদের উন্নত চরিত্রের অধিকারী হতে হবে, উদ্যোক্তা হওয়ার যোগ্য হতে হবে। চাকরির প্রতি দুর্বলতা থেকে বের হয়েই তাদের উদ্যোক্তা হতে হবে। নবী করিম (স.) ব্যবসাকে সবসময় উৎসাহ দিতেন।’
আইআইইউসি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীর প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন,
‘বাংলাদেশের মানুষ প্রফেসর ড. আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীকে হয়তো রাজনীতিবিদ হিসেবে জানে। একজন ইসলামিক ব্যাকগ্রাউন্ডের স্টুডেন্ট হিসেবে আমি জানি তিনি অনেক বড় আলেম। সাধারণ বড় আলেম নয়, তাঁর প্রতিটি আর্টিকেল, প্রতিটি লিখনী ও গবেষণামূলক কিতাব আছে সেগুলো থেকে আমি জ্ঞান অর্জন করার চেষ্টা করি। আমি অবাক হয়ে যাই, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাকে এই পরিমাণ ইলম দিয়েছেন।’
প্রফেসর ড. নদভীর একটি গ্রন্থের কথা উল্লেখ করে শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, ‘প্রফেসর ড. নদভী’র সম্প্রতি লিখা গ্রন্থ আল-কাওয়ায়েদুল ফিকহিয়া (ফিকাহ শাস্ত্রের নীতিমালা) কোনো সাধারণ বই-পুস্তক নয়। এটি এমন একটি বই, তা মাদ্রাসায় দাওরায়ে হাদিস শেষ করার পর মুফতি কোর্সের স্টুডেন্টদের পড়ার যোগ্য বই। এই মানের সাবজেক্টের বই লিখা একজন মানুষ ড. আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী। দীর্ঘদিন তিনি সৌদি আরবের বড় বড় শায়খদের সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন। তিনি তাই জানবেন, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশেষ করে সৌদি আরবের বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের একান্তে একটা সময় শিক্ষকদের সাথে কাটানোর সুযোগ থাকে, শিক্ষকদের সান্নিধ্যে যাওয়ার সুযোগ থাকে।’
তিনি বলেন, ‘সৌদি আরবের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্লাসের বাইরে এসে শিক্ষকরা মসজিদে নববীতে প্রোগ্রাম করেন, দারস করেন, উন্মুক্ত ক্লাস সেখানে হয়, সেগুলোতে শিক্ষার্থীরা গিয়ে বসে। এতে শিক্ষকদের সাথে ব্যক্তিগত একটা সম্পর্ক তৈরি হয়।’
শায়খ আহমদুল্লাহ বলেন, ‘পৃথিবীতে বড় বড় যত মনীষী তৈরি হয়েছে, ইসলামিক দিক থেকে বলেন কিংবা সাধারণ দিক থেকে বলেন সবার ইতিহাস দেখুন, শিক্ষার্থী হিসেবে শিক্ষকের সাথে তাদের নিগুঢ় সম্পর্ক ছিল। যেটা আজকাল নেই। বিশ্ববিদ্যালয়তো অনেক পরের কথা এটি স্কুল লেভেল থেকেই নেই। আমরা ছোট বেলায় দেখেছি, কোনো শিক্ষার্থী স্কুলে না এলে শিক্ষক বাড়িতে চলে যেতেন। এখন তা কল্পনাও করা যায় না। শিক্ষক এখন শিক্ষকের জগৎ নিয়ে আছেন, ছাত্র আছেন ছাত্রের জগৎ নিয়ে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষকদের সাথে সুনিবিড় সম্পর্ক গড়া ছাড়া কখনো আমাদের জ্ঞানের পূর্ণতা সম্ভব নয়।’
অনুষ্ঠানে প্রফেসর ড. আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী বলেন, ‘আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম জ্ঞান বিতরণের পাশাপাশি জ্ঞান সৃজনেও ভূমিকা রাখছে। বিশ্বব্যাপী এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে চলেছে। আইআইইউসি বর্তমানে অবকাঠামো এবং অ্যাকাডেমিকভাবে শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে আছে।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন আইআইইউসি’র বোর্ড অব ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কাজী দ্বীন মুহাম্মদ, উপ উপাচার্য প্রফেসর ড. মছরুরুল মওলা, ট্রেজারার প্রফেসর ড. মুহাম্মদ হুমায়ুন কবির, ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান ড. ইঞ্জিনিয়ার রশীদ আহমেদ চৌধুরী, বোর্ড অব ট্রাস্টের সদস্য রিজিয়া রেজা চৌধুরী, প্রফেসর ড. ফসিউল আলম, প্রফেসর ড. ছালেহ জহুর, শরীয়াহ ও ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. শাকের আলম শওক, বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. আকতার সাঈদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর ড. গিয়াস উদ্দিন হাফিজসহ বিভিন্ন অনুষদের ডিন ও বিভাগের চেয়ারম্যানবৃন্দ। অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আইআইইউসি’র রেজিস্ট্রার এ.এফ.এম আখতারুজ্জামান কায়সার।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুহিব উল্লাহ ও ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স এন্ড স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার ডিভিশনের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মাহফুজুর রহমান।