চট্টগ্রাম নগরের লালখানবাজার এলাকার মতিঝর্ণায় রেলওয়ের ২৬ একর জায়গায় গড়ে উঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে দিনক্ষণ ঠিক করা হলেও স্থানীয় সংসদ সদস্য আফছারুল আমীনের একটি চিঠিতে (ডিমান্ড অব অর্ডার) তা আটকে গেছে। ২ ডিসেম্বর থেকে ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট সাত কর্ম দিবসের মধ্যে ওই এলাকার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল।
এমপির ডিও লেটারে মতিঝর্ণা এলাকায় বিভিন্ন আদালতের চলমান বিচারাধীন বিষয়গুলো বিবেচনায় আনার অনুরোধ জানানো হয়। এরপর নির্ধারিত সময়ে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেনি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। যদিও তারা বলছে, দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে মতিঝর্ণা এলাকার ২৬ একর জায়গা রেলওয়ের মালিকানা নির্ধারিত হয়েছে।
রেলওয়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় ভূ সম্পত্তি দপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, গত ৯ নভেম্বর মতিঝর্ণা এলাকায় অবৈধ দখলদার এবং স্থাপনা উচ্ছেদের বিষয়ে দিনক্ষণ ঠিক করে বিভাগীয় ভূসম্পত্তি দপ্তর। সাত কর্ম দিবসের মধ্যে উচ্ছেদ অভিযানের প্রস্তুতিও শুরু করে রেল কর্তৃপক্ষ।
এর মধ্যে স্থানীয় সংসদ সদস্য আফছারুল আমীন গত ২৩ নভেম্বর রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপকের বরাবরে উচ্ছেদ অভিযান স্থগিত করার জন্য একটি ডিও লেটার প্রদান করেন। এর পর নির্ধারিত সময়ে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেনি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
রেলওয়ের চট্টগ্রাম বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা মাহবুব উল করিম বলেন, যেহেতু একজন সংসদ সদস্য এ বিষয়ে চিঠি দিয়েছেন সেটি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিবেচনায় নিয়েছেন। তবে উচ্ছেদ অভিযান বাতিল করা হয়নি। আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে জরিপকৃত তথ্য অনুযায়ী মতিঝর্ণা এলাকায় অবৈধ স্থাপনার মধ্যে পাঁচটি আটতলা ভবন, চার তলা ভবন ১০ টি, কাঁচাঘর ১০৫০টি, দ্বিতল ভবন ৩২টি, সেমি পাকা ঘর ৩৫০টি, কাঁচা এবং সেমিপাকা দোকান ৫১০টি ও বেশ কিছু ধর্মীয় স্থাপনা আছে। ওই সময় নানা প্রতিকূলতায় মধ্যে জরিপ করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। অবৈধ স্থাপনার সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে বলে জানায় রেল সূত্র।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান ভূ সম্পত্তি কর্মকর্তা ইশরাত রেজা বলেন, মতিঝর্ণা এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান স্থগিত করার বিষয়ে যেহেতু একজন সংসদ সদস্য ডিও লেটার দিয়েছেন তা আমরা উপেক্ষা করতে পারি না। তবে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে ওই জায়গায় রেলওয়ের মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিষয়টি তাকে (এমপি আফছারুল আমীন) চিঠি দিয়ে অবহিত করা করা হয়েছে। উচ্ছেদের বিষয়ে আমরা মন্ত্রণালয়ের সিন্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।
সংসদ সদস্য আফছারুল আমীন বলেন, মতিঝর্ণা এলাকার কিছু বাসিন্দা আমার কাছে এসেছিল। তারা বলেছে ওই এলাকার জায়গা নিয়ে আদালতে মামলা চলমান আছে। যেহেতু তারা আমার নির্বাচনী এলাকায় বসবাস করে, তাই তাদের দাবিকে গুরুত্ব দিয়ে উচ্ছেদ অভিযান স্থগিত করার জন্য একটি ডিও লেটার দিয়েছি।
রেলওয়ে থেকে ফিরতি চিঠি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘ডিও লেটারের প্রেক্ষিতে আমাকে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে আমি ঢাকায় থাকার কারণে ওই চিঠিতে কী লেখা হয়েছে তা দেখা হয়নি। তবে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে যদি ওই জায়গা রেলওয়ের হয় সেখানে উচ্ছেদের বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই।’’
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহা ব্যবস্থাপক (জিএম) নাসির উদ্দিন আহমেদ জানান, ইতোমধ্যে আমরা এমপি আফছারুল আমীনকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছি যে, মতিঝর্ণা এলাকায় অবৈধভাবে বসবাসকৃত ২৬ একর জায়গা রেলওয়ের। ওই জায়গায় উচ্ছেদের জন্য পরবর্তীতে দিনক্ষণ ঠিক করা হবে।
লালখান বাজার এলাকায় রেলওয়ে জায়গায় পাহাড়ের পাদদেশে অবৈধভাবে বসতি স্থাপন করে আছে ছিন্নমূল মানুষ। এসব জায়গা দখল করে প্রভাবশালীরা কম আয়ের মানুষদের কাছে ভাড়া দেয়। ওই এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হলেও তাদের বাধার মুখে বারবার পিছু হটে প্রশাসন। স্থানীয় সংসদ সদস্যের ডিও লেটারের কারণে এবারের উচ্ছেদ অভিযানও আটকে গেছে।