আফগান অধিনায়ক রশিদ খানের ফাইনাল খেলার আকুতি
আফগানিস্তান অধিনায়ক রশিদ খানকে সংবাদ সম্মেলনে প্রথমেই শুনতে হলো- ‘ফাইনালে খেলার মতো ফিট কিনা আপনি?’। রশিদের জবাব- ‘ফিটনেস নিয়ে আমি এখনো নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারবো না। হ্যামস্ট্রিং সমস্যাটা আছে। আজ এবং আগামীকাল পর্যন্ত আমাকে এই সমস্যার সমাধানের জন্য কাজ করতে হবে। অনুশীলনে দেখবো কি অবস্থায় আছে ইনজুরির ধরন। তারপর আগামীকাল (মঙ্গলবার) সিদ্ধান্ত নেবো খেলার বিষয়ে।’
তিনি দলের সেরা তারকা। ম্যাচ উইনার। দলনেতা। বল হাতে দলের সবচেয়ে প্রভাবী ক্রিকেটার। এমন একজন ক্রিকেটার ফাইনালের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে যদি খেলতে না পারে তাহলে তো নিশ্চিতভাবে তার দল ভুগবে? এই প্রশ্নের সঙ্গেও একমত হলেন না আফগান অধিনায়ক-‘আমাদের অন্য পরিকল্পনাও সাজানো আছে। মুজিব ও নবীর মতো দক্ষতাসম্পন্ন স্পিনার আছে আমাদের। তাছাড়া বাঁহাতি স্পিনার হিসেবে শরফুদ্দিন আশরাফও আছে। আশরাফ বেশ ভাল একজন অলরাউন্ডারও।’
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের বিপক্ষে শেষ ম্যাচের অষ্টম ওভারের সময় ফিল্ডিং করতে গিয়ে হ্যামস্ট্রিং ইনজুরিতে পড়েন রশিদ। কয়েকওভারের জন্য মাঠের বাইরে গিয়ে চিকিৎসা নেন। সেই ব্যথা সঙ্গে নিয়েই আবার মাঠে নামেন। চিন্তা একটাই দলকে জেতাতে হবে। হ্যামস্ট্রিংয়ের সেই চোট নিয়ে ম্যাচে ৩ ওভার বোলিং করেন রশিদ খান। প্রায় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে বোলিং করেও দুটি উইকেটও পান। শেষের দিকে কোন রান আপ না নিয়ে জায়গায় দাড়িয়ে বোলিং করেন তিনি। যদিও ম্যাচটা বাঁচাতে পারেননি। সাকিবের ব্যাটিং বীরত্বে বাংলাদেশ সেই ম্যাচ জিতে নেয় ৪ উইকেটে।
আর রশিদ খান হ্যামস্ট্রিং নিয়ে বোলিং করে তার চোটকে আরো জটিল করে ফেললেন! -ওভারে চোট নিয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে বোলিং করাটা কি ভুল সিদ্ধান্ত ছিলো না? এই প্রশ্নের উত্তরে রশিদ জানালেন-‘আসলে ইনজুরির মাত্রাটা কেমন ছিলো সেটা জানতেই আমি চোট নিয়েই বোলিং করেছি। ফিজিও এবং কোচ চাইছিলেন না, আমি যেন বোলিং করি। আমি প্রথম দুই ওভার ভালই বোলিং করি। কিন্তু দৌড়াতেই গিয়েই বিপদটা আরেকবার বাড়িয়ে ফেলি। ইনজুরির অবস্থা আরো শোচনীয় হয়ে পড়ে। আশা করছি আমার এই ইনজুরি আগামীকাল ফাইনালের আগে ঠিক হয়ে যাবে। ফিজিওর সামনে এখন অনেক কাজ।’
-ইনজুরি নিয়ে বোলিং করা, দৌড়ানোর সেই সিদ্ধান্তের জন্য এখন কোন দুঃখ হচ্ছে কিনা? এখন তো ফাইনাল ম্যাচে খেলাটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়লো আফগান অধিনায়কের!
এই প্রশ্নে রশিদের ব্যাখা-বিশ্লেষণ সত্যিকার অর্থেই তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য শিক্ষনীয়-‘প্রথমেই বলে নেই, আমার বোলিং করা উচিত ছিল না। কিন্তু দল যখন আপনাকে চাইবে, তখন তো আপনাকে সেখানে হাজির হতেই হবে। আমরা তো আসলে দেশের জন্যই খেলি। যা কিছু করি, সবই দেশের জন্য। বিশ্বাস করুন, যদি এক হাত না থাকে তাও আমরা দেশের হয়ে লড়তে নেমে যাবো। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের একটা ম্যাচে আসগর আফগান তার অ্যাপেন্ডিসাইটিস অস্ত্রোপচারের মাত্র চারদিনের মধ্যেই ম্যাচ খেলতে নেমে গিয়েছিল। যদি আমি শতকরা ১০ ভাগও ফিট থাকি, তাও ফাইনালে খেলবো! আমি আমার দেশকে ভালবাসি। আমি নিজের জন্য চিন্তা করি না, দেশের জন্যই জিততে চাই।’
ইনজুরির যে ধরন রশিদ খানের তাতে ফাইনালে তাকে প্রায় সবাই অনিশ্চিতই ধরে রেখেছেন। তবে রশিদ খান সম্ভবত খুঁড়িয়ে হলেও ঠিকই ফাইনাল খেলে দেবেন। ৪ ওভার বোলিং তো মাত্র! দেশের জন্য এই ম্যাচে একটু না হয় বাড়তি কষ্টই করলাম-এই চিন্তা নিয়েই ফাইনালের পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন আফগান অধিনায়ক!