আন্দোলনের নামে হাটহাজারী মাদ্রাসায় দুদিন ধরে হামলা ও ভাঙচুর চলেছে বেছে বেছে (ভিডিও)

মুখ খুললেন প্রবীণ আলেম দিদার কাসেমী

চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায় গত ১৬ ও ১৭ সেপ্টেম্বর কোনো ‘ছাত্র আন্দোলন’ নয়, বরং ‘সন্ত্রাস ও ডাকাতি’ হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন মাদ্রাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস ও প্রবীণ আলেম আহমেদ দিদার কাসেমী। আল্লামা শাহ আহমদ শফী জীবিত থাকা অবস্থায় হাটহাজারী মাদ্রাসার নায়েবে মোহতামিম বা ভারপ্রাপ্ত পরিচালক নির্বাচনের দৌড়ে তার নাম বেশ আলোচিত হচ্ছিল। তবে শেষপর্যন্ত পদটি পান শেখ আহমেদ।

ছাত্র আন্দোলনের নামে মাদ্রাসার শিক্ষকদের কক্ষে কক্ষে হামলা, তাদের লাঞ্ছিত করাসহ যেসব কর্মকান্ড ছাত্ররা পরিচালনা করেছে, তা দেশের কওমি অঙ্গনে নজিরবিহীন— এমন মন্তব্য করে এজন্য হেফাজতের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরীকে দায়ী করেছেন মাদ্রাসাটির জনপ্রিয় শিক্ষক দিদার কাসেমী।

আন্দোলনের এই দুই দিনে আন্দোলনকারীরা শাহ আহমদ শফীর ওপর নির্যাতন করেছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি। তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘এখানে কিসের আন্দোলন হয়েছে? এখানে সন্ত্রাস হয়েছে। ডাকাতি হয়েছে। আর এর জন্য একমাত্র দায়ী সন্ত্রাস ও ডাকাত জুনায়েদ। তার প্রত্যক্ষ মদদে এই অরাজকতা হয়েছে।’

জুনায়েদ বাবুনগরীকে ‘অরাজকতা সৃষ্টিকারী’ ও ‘মিথ্যাবাদী’ হিসেবে আখ্যায়িত করে সিনিয়র মুহাদ্দিস দিদার কাসেমী বলেন, ‘জুনায়েদ বাবুনগরী একটা সন্ত্রাস। আর বেশি মিথ্যা কথা বলে। সে সব মিডিয়াকে বলেছে শিক্ষকদের কক্ষে হামলার ঘটনা ঘটেনি। অথচ আপনারা দেখুন আমার কক্ষে এসি-ফ্রিজও তারা ভাঙচুর করেছে। তারা আমাকে লোহা দিয়ে ভয় দেখিয়েছে। মোবাইল কেড়ে নিয়ে গেছে।

দিদার কাসেমী ওই দুই দিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘এভাবে তারা আহমদ শফী হুজুরের সাথেও বেয়াদবি করেছে। হুজুরের কক্ষে ঢুকে ভাঙচুর করেছে। উনার সামনে উনার খাদেম আর নাতিকে মারধর করেছে। এমনকি হুজুরকেও লোহা দিয়ে ভয় দেখিয়েছে। বলছিল মুহতামিমগিরি ছেড়ে দে। তখন হুজুরের নাতি চিৎকার করে কান্না করে দিয়ে বলেছে, দাদা আপনি ছেড়ে দেন। এত শিক্ষকের কক্ষে হামলা হয়েছে। বাবুনগরীর কক্ষে তো কিছুই হয়নি। কেন হয়নি?’

হামলার পুরো নিয়ন্ত্রণই বাবুনগরীর কক্ষ থেকে করা হয়েছিল দাবি করে তিনি বলেন, ‘বাবুনগরী কে ছিল? সে বাবুনগর মাদ্রাসায় চাকরি করতো। তাকে কে চিনতো? তার মামার সাথে বিরোধ লাগায় বড় হুজুর দয়া করে তাকে চাকরি দিয়েছে এই মাদ্রাসায়। তাকে হেফাজতের মহাসচিব বানালো। এরপর সে হুজুরের সাথে টক্কর নিতে আরম্ভ করছে।’

এদিকে শাহ আহমদ শফীর জানাজায় তার ছেলে আনাস মাদানীকে দেখা যায়নি। এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কিভাবে আসবে? এখানে আসলে তো তাকে মেরেই ফেলতো। সে সেজন্য আসেনি।’

এদিকে অসুস্থ আল্লামা শফীর মৃত্যু হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হওয়ার কারণে হলেও তার ছেলে আনাস মাদানী ইঙ্গিত করছেন, হাটহাজারী মাদ্রাসায় কয়েকদিনের ঘটনাপ্রবাহ এবং উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে ‘টেনশনে’ তাঁর ‘হার্ট ফেল’ হয়েছিল।

আন্দোলনের নামে হাটহাজারী মাদ্রাসায় দুদিন ধরে হামলা ও ভাঙচুর চলেছে বেছে বেছে (ভিডিও) 1

চট্টগ্রামে হাটহাজারী মাদ্রাসায় টানা দুদিনের বিক্ষোভের জের ধরে এক পর্যায়ে অবরুদ্ধই ছিলেন মাদ্রাসার গত প্রায় ৩০ বছরের পরিচালক শাহ আহমদ শফী, যিনি বাংলাদেশে হেফাজত ইসলাম নাম কওমি ধারা সংগঠনের শীর্ষ নেতা ছিলেন।

শুক্রবার সন্ধ্যায় আহমদ শফী ঢাকার একটি হাসপাতালে মৃত্যুর পর তার ছেলে আনাস মাদানী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমার আব্বা দীর্ঘদিন রোগে ভুগলেও ভালোর দিকে ছিলেন। বৃহস্পতিবার অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার কারণে আব্বাজান হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে গেলেন ও উনাকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে নেওয়া হয়। সেখানকার ডাক্তাররা আমাকে ফোন দিয়ে বলেছেন আব্বা টেনশনের কারণে হার্ট ফেল করেছিলেন। সেজন্যই আজ এ অবস্থা।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!