ক্রিকেট গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা। সেটি আরও বেশি অনিশ্চয়তাময় হয়ে উঠে যখন দলটির নাম হয় পাকিস্তান। নিজেদের দিনে তারা হারাতে পারে বিশ্বের যেকোনো দলকে। আবার মুডে না থাকলে পা কাটতে পারে পঁচা শামুকেও। তবে মুড বিষয়টি বেশি যায় ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের দল ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে। ক্যারিবিয় সাগরের ঝড় উঠার যেমন আগামবাণী দেয়াটা বেশি রিস্কি, একইভাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট নিয়ে আগাম কথা বলাও অনেক রিস্কি। সেই দুই আনপ্রেডিক্টেবল দল পাকিস্তান আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ যখন মুখোমুখি হয় তখন অনুমান করাটা অনেক বেশি বোকামীর কাজ হয়ে যাবে। তাদের ম্যাচ নিয়ে সবচেয়ে যেটি নিরাপদ ভবিষ্যতবাণী করা যায় তা হলো ‘দিন যার ম্যাচ তার’।
বিশ্বকাপের প্রথম দুই আসরের চ্যাম্পিয়ন উইন্ডিজ, আর ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ জিতেছিল ইমরানের খানের পাকিস্তান। বিশ্বকাপের ১২তম আসরের দ্বিতীয় দিনে গ্রুপ পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হবে পাকিস্তান-উইন্ডিজ। শুক্রবার (৩১ মে) বাংলাদেশ সময় দুপুর সাড়ে তিনটায় নটিংহ্যামের ট্রেন্ট ব্রিজে শুরু হবে ম্যাচটি।
শেষ ১৯৭৯ সালে কিংবদন্তি অধিনায়ক ক্লাইভ লয়েডের হাত ধরে জোড়া শিরোপা জিতেছিল উইন্ডিজ দল। তবে এরপরে আর শিরোপার স্বাদ উপভোগ করতে পারেনি ক্যারিবীয়রা। অন্যদিকে ১৯৯২ সালে আর এক কিংবদন্তি ক্রিকেটার ইমরানের খানের নেতৃত্বে প্রথম এবং শেষবারের মতো বিশ্বকাপ শিরোপা ঘরের তোলে পাকিস্তান।
শক্তিমত্তার বিচারে এবারের দুই দলই প্রায় সমানে সমান। তবে র্যাংকিংয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের চেয়ে এগিয়েই রয়েছে সরফরাজ আহমেদের দল। কিন্তু এগিয়ে থেকেও যেন স্বস্তিতে নেই তারা। প্রস্তুতি ম্যাচে আফগানিস্তানের কাছে হারের পাশাপাশি টানা ১০টি ওয়ানডে ম্যাচের হার নিয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করতে যাচ্ছে পাকিস্তান।
তবে পাকিস্তান অধিনায়কের দাবি এই হারকে ভুলে গিয়ে নতুন ভাবে শুরু করতে প্রস্তুত তারা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচ নিয়ে সরফরাজ বলেন, ‘হ্যাঁ, আমরা টানা ১০টি ম্যাচ হেরেছি কিন্তু আমরা এসব ভুলে গিয়েছি এবং বিশ্বকাপ শুরু করতে যাচ্ছি।’
বিশ্বকাপে হেড টু হেড মোট ম্যাচ: ১০টি। উইন্ডিজ জয়ী: ৭টি। পাকিস্তান জয়ী: ৩টি। মুখোমুখি দুই দল মোট ম্যাচ: ১০৩টি। উইন্ডিজ জয়ী: ৭০টি। পাকিস্তান জয়ী: ৩০টি। পরিত্যক্ত: ৩টি।
অন্যদিকে বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশের কাছে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনাল হারলেও সেটা ওয়েস্ট ইন্ডিজের পূর্ণশক্তির দল ছিল না। প্রস্তুতি ম্যাচে একপ্রকার দাপট দেখিয়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয় তুলে নেয় তারা। দলের প্রায় সব ব্যাটসম্যানই আছেন দুর্দান্ত ফর্মে।
ইংল্যান্ড সিরিজ দিয়ে অনেক দিন পর ক্যারিবীয় জার্সিতে ফিরেছেন ক্রিস গেইল। ফেরার আগেই জানিয়ে ছিলেন বিশ্বকাপের নিজের অবসরের কথা। তারপরই যেন আগের আরো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠলেন এই ক্যারিবিয়ান দানব। পাঁচ ম্যাচে করেন ৪২৪ রান তারপর আইপিএল কাটিয়েছেন দুর্দান্ত ফর্মে।
গেইলের পাশাপাশি দুর্দান্ত ফর্মে আছেন আরেক ওপেনার শাই হোপও। শেষ দশ ম্যাচে ৫৮৫ রান করেছেন এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। সেই সঙ্গে ফর্মে থাকা রাসেলকে দলে যোগ করায় আরো শক্তিশালী হয়েছে উইন্ডিজ।
ব্যাটিংয়ের আড়ালে বোলিং দুর্বলতাটা যেন ছায়ায় ঢাকা পড়ে যায় ক্যারিবিয়ানদের। বোলিংয়ে নেই বলার মতো কোন তারকা পারফরমার।
টানা তিন ম্যাচে ৩৪০+ রান করেও হারা একমাত্র দল পাকিস্তান। আর এটা ঘটেছে গত ইংল্যান্ড সিরিজেই। বাবর আজম, ইমাম উল হকরা নিজেদের দায়িত্ব পালন করলেও সেটা ঠিক ভাবে পালন করতে পারছেন না বোলাররা।
আর তাই বিশ্বকাপের ঠিক আগ মুহুর্তে স্কোয়াডে পরিবর্তন আনে পাকিস্তান। দলে যোগ করা হয় অভিজ্ঞ বোলার মোহাম্মদ আমির ও ওয়াহাব রিয়াজকে। কিন্তু তাদের নিয়েও প্রস্তুতি ম্যাচে আফগানিস্তানের কাছে তিন উইকেটে হেরে বসে তারা। তাই বলা যায়, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এমন বোলিং অব্যাহত থাকলে কঠিন সমস্যা পড়তে যাচ্ছে সরফরাজের দল।
দৃষ্টি থাকবে যাদের ওপর: উইন্ডিজ: ক্রিস গেইল, শাই হোপ।
পাকিস্তান: ফকর জামান, বাবর আজম।
ভেন্যু: নটিংহ্যাম ট্রেন্ট ব্রিজে ১৯৭৪ সালে ইংল্যান্ড-পাকিস্তান ম্যাচ দিয়ে ওডিআই ক্রিকেটে যাত্রা শুরু হয়। এই স্টেডিয়ামেই একদিনের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ ৪৮১ রান তোলে ইংল্যান্ড, প্রতিপক্ষ ছিল অস্ট্রেলিয়া। আর এখানে সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহ স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার, মাত্র ৮৩ রান। সর্বোচ্চ সফল রান তাড়া করে ম্যাচ জেতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ইংল্যান্ড। কিউইদের দেওয়া ৩৫০ রানের লক্ষ্যে ইংলিশরা পৌঁছে যায় ছয় ওভার এবং সাত উইকেট হাতে রেখেই। শেষ দশ ম্যাচের ছয়টিতেই দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং করা দল জয় পেয়েছে এই ভেন্যুতে।
দুই দলের সম্ভাব্য একাদশ
পাকিস্তান:
ইমাম উল হক, ফাখর জামান, বাবর আজম, হারিস সোহেল, সরফরাজ আহমেদ(অধিনায়ক, উইকেটকিপার), ইমাদ ওয়াসিম, আসিফ আলি, শাদাব খান, মোহাম্মদ আমির, হাসান আলি, শাহীন আফ্রিদি।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ:
ক্রিস গেইল, এভিন লুইস, শাই হোপ(উইকেট কিপার), শিমরন হেটমায়ার, ড্যারেন ব্রাভো, জেসন হোল্ডার, আন্দ্রে রাসেল, অ্যাশলে নার্স, কেমার রোচ, শেলডন কট্রেল, ওশানে থমাস।