আদালতের হুঁশিয়ারি/ ভ্রাম্যমাণ আদালতে আসামি পাঠালে শাস্তি হবে ওসিদের

সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রামের থানার অফিসার ইনচার্জ বা ওসিরা আসামিদের স্থানীয় উপজেলা কর্মকর্তাদের (ইউএনও) কাছে হাজির করায় সময় আইনের লঙ্ঘন করছেন বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রামের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। উচ্চ আদালতের দেওয়া আদেশ না মেনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হলে ওসিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আদালত।

২০ আগস্ট চট্টগ্রামের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রশাসনিক বিভাগ জারি করা এক অফিস আদেশে একথা জানানো হয়। এতে স্বাক্ষর করেন চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কামরুন নাহার রুমী। আদেশে বলা হয়, ‘সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ ও নানা উৎস থেকে আমাদের গোচরীভূত হয়েছে যে, চট্টগ্রাম জেলার থানার ওসিরা আইন লঙ্ঘন করে আটক করা আসামিদের নিয়মিত আদালতে সোপর্দ না করে স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাছে উপস্থাপন করছেন। আর ওই সব ইউএনও মোবাইল কোর্ট আইন ২০০৯ এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘনপূর্বক আসামিদের আইনবর্হিভূতভাবে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করছেন। যা দেশের সংবিধান ও প্রচলিত আইনের সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন।’

ওই অফিস আদেশে মোবাইল কোর্ট আইন ২০০৯ এর ৬ (১) ধারার সূত্র ধরে বলা হয়েছে, ‘এ আইনের অধীনে ক্ষমতাপ্রাপ্ত এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও অপরাধ প্রতিরোধ কার্যক্রম পরিচালনার সময় কোনো অপরাধ, যা কেবল তার সামনে সংঘটিত বা উদঘাটিত হয়ে থাকলে, তিনি তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলেই উক্ত অপরাধ আমলে নিয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তির স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে দোষী সাব্যস্ত করে এ আইনে নির্ধারিত দণ্ড প্রয়োগ করতে পারবেন।’

চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের জারি করা আদেশে ভ্রাম্যমাণ আদালত কর্তৃক টাঙ্গাইলের সখীপুরের এক স্কুল ছাত্রকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার ঘটনায় ২০১৭ সালের ১১ মে হাইকোর্টের এক স্বপ্রণোদিত রুলের রায়ের অংশবিশেষও মনে করিয়ে দেওয়া হয়। এমনকি ওই রায়ে দুই বছরের রায় প্রদানকারী ইউএনও এবং ওসির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়াও হয়েছিল বলে উল্লেখ করে বলা হয়, এই রায় বাংলাদেশের সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট সকলের ওপর বাধ্যকর।

চট্টগ্রামের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রশাসনিক বিভাগের জারি করা এই অফিস আদেশে চট্টগ্রাম জেলার সকল ওসিকে সতর্ক করে বলা হয়, পুলিশ কর্তৃক আটক আসামিদের ক্ষেত্রে মোবাইল কোর্ট আইন ২০০৯ এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের মাননীয় হাইকোর্ট বিভাগের উপযুক্ত রায়ের সিদ্ধান্ত না মেনে আইনবর্হিভূত কোনও কাজ করলে বা এ ধরনের কোনও সংবাদ আদালতের নজরে আসলে বিধি মোতাবেক সংশ্লিষ্ট ওসিদের বিরুদ্ধে আইনগত শাস্তিমূলক ব্যবস্থার পাশাপাশি তা সুপ্রিম কোর্টকে অবহিত করা হবে বলে জানানো হয়।

আদালত পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি, চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার, রেলওয়ে পুলিশ সুপার, সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার, পিবিআই, চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, জেলার সকল সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, রেলওয়েসহ ১৭ থানার ওসি, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এবং জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসিকে আদেশের অনুলিপি পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।

২০১৭ সালের ১১ মে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার বিধান অসাংবিধানিক ঘোষণা করেন উচ্চ আদালত। ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনের ১১টি বিধান সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে ঘোষণা করেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাসের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন। রায়ে বলা হয়, ১১টি বিধান বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ-সংক্রান্ত সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর বিরোধী। ওই রায়ে আদালতে চ্যালেঞ্জ হওয়া ছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালতের অতীত সিদ্ধান্ত মার্জনা করা হয়।

ওই রায়ের ফলে ২০০৯ সালের ওই আইনের মাধ্যমে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। রায়ে একই সঙ্গে রিট আবেদনকারীদের সাজা অবৈধ ঘোষণা করা হয়। জরিমানার অর্থ ৯০ দিনের মধ্যে ফেরত দিতে বলা হয়। দুটি পৃথক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ছয় বছর আগে এবং অপর একটির পরিপ্রেক্ষিতে পাঁচ বছর আগে এ বিষয়ে রুল হয়। রুলের ওপর শুনানি শেষে আদালত আবেদনগুলো রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন। এরপর রায় ঘোষণা করা হয়৤

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) নুরেআলম মিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি এখনও অফিসিয়ালি জানি না বলে তাই কোনও মন্তব্য করতে পারব না। অন্যরা পুলিশের কোনও ভুল হলে যেখানে ছাড়ে না, সেখানে আদালত কি ছাড় দেবে? তবে আমরা আইনের লঙ্ঘন করে কোনও কাজ করি না।’

এডি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm