আটে নামা মেহেদী মিরাজের সেঞ্চুরি পথ দেখালো বাংলাদেশকে

প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ৪৩০ রান

চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় দিনের শুরুতেই সাজঘরে লিটন দাস, মাত্র ১০ ওভার খেলা হওয়া নতুন বল হাতে আক্রমণে শ্যানন গ্যাব্রিয়েল। মেহেদী হাসান মিরাজের জন্য চ্যালেঞ্জটা ছিল বেশ কঠিন। তবে গ্যাব্রিয়েলের মুখোমুখি তৃতীয় বলে বাউন্সার ডেলিভারিতে দারুণ দক্ষতায় পয়েন্ট অঞ্চল দিয়ে চার মেরে লড়াইয়ের জন্য নিজেকে প্রস্তত ঘোষণা করেন মিরাজ। যা ধরে রেখে তুলে নিয়েছেন ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। ১৬০ বলে করা তার ১০৩ রানের ওপর ভর করে বাংলাদেশ দ্বিতীয় দিনের চা-বিরতির ঠিক আগে অলআউট হওয়ার আগে করে ৪৩০ রান।

মেহেদী হাসান মিরাজের ক্যারিয়ার পরিসংখ্যানে একটি জায়গায় এত দিন ছিল ‘শূন্যে’র আধিপত্য। হ্যাঁ, এই শূন্যতা তিন অঙ্কের একটা ইনিংসেরই। ২৩তম টেস্ট খেলছেন, প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন ৪১টি; ওয়ানডে ৪৪, লিস্ট ‘এ’ ৯৩টি। ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ মিলিয়ে খেলা হয়ে গেছে ৮৮টি ম্যাচ। কিন্তু সেঞ্চুরি একটিও করতে পারেননি। শতকের স্বাদ কেমন, সেটি এত দিন জানা ছিল না তাঁর। ক্যারিয়ারের প্রথম শতকটি করলেন এমন একটা মুহূর্তে, যখন সে ধরনের কিছুরই দরকার ছিল বাংলাদেশ দলের। একেবারে টেস্ট ক্রিকেটের মঞ্চে দাঁড়িয়েই প্রথম শতরানের গৌরব গায়ে মাখলেন তিনি।

২৩তম টেস্টে এসে নিজের সর্বোচ্চ সংগ্রহ দেখলেন তিনি। কিন্তু কে ভেবেছিল সেই ইনিংসটিই তিনি শতরানে রূপ দেবেন। বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের ফিফটিকে বড় করা, কিংবা সেটিকে শতকে পরিণত করার প্রবণতা এতটাই কম, তাই মিরাজের সেঞ্চুরিটি তাই ছিল আনন্দময় একটা ব্যাপারই।

লিটন আউট হওয়ার সময় বাংলাদেশের সংগ্রহ ২৪৮ রান। আড়াইশর আগে পাঁচ উইকেট হারিয়ে ফেলায় দলীয় সংগ্রহটা বড় করার একটা চাপও ছিল মাথার ওপর। অপর প্রান্তে সাকিব আল হাসান ছিলেন সাহস দেয়ার জন্য। দুজন মিলে ষষ্ঠ উইকেটে গড়েন ৬৭ রানের জুটি। এ জুটিতে ভর করেই বাংলাদেশ পেরিয়ে যায় ৩০০ রানের কোটা।

আগের দিন থেকেই নিয়ন্ত্রিত এবং ধৈর্য্যশীল ব্যাটিং করছিলেন সাকিব। এদিন ব্যাটিংয়ে নেমে মিরাজ শুরু থেকেই খেলতে থাকেন রানের চাকা সচল রেখে। জোমেল ওয়ারিকানকে সুইপ কিংবা কেমার রোচের ফুল লেন্থের ডেলিভারি অনড্রাইভে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে আত্মবিশ্বাসের জানান দিয়েছেন ২৩ বছর বয়সী এ স্পিনিং অলরাউন্ডার।

তার ইনিংসের সেরা শট ছিল ইনিংসের ১১৭তম ওভারে। জোমেল ওয়ারিকানের মিডল-লেগস্ট্যাম্পের ডেলিভারিতে ইনসাইড আউট শটে এক্সট্রা কভার দিয়ে দৃষ্টিনন্দন এক বাউন্ডারি হাঁকান তিনি। মধ্যাহ্ন বিরতির সময় তিনি অপরাজিত থাকেন ৪৬ রানে। বিরতির পর ফিরে কর্নওয়ালের ওভারে প্রথমে থার্ড ম্যানে ৩ রান নিয়ে পৌছান ৪৯ রানে, পরে ফাইন লেগ দিয়ে ২ রান নিয়ে পূরণ করেন ক্যারিয়ারের তৃতীয় ফিফটি।

২৩ ম্যাচের টেস্ট ক্যারিয়ারে মিরাজের সবশেষ ফিফটি ছিল ২০১৮ সালের নভেম্বরে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঢাকা টেস্টে ক্যারিয়ার সর্বোচ্চ ৬৭ রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত ছিলেন মিরাজ। কিন্তু দিনটিকে নিজের করে নেয়ার জন্য যা যা করা দরকার তার সবই করেছেন মিরাজ। ক্যারিয়ারের তৃতীয় ফিফটিকে পরিণত করেন সেঞ্চুরিতে।

নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে নাঈম হাসান যখন বোল্ড আউট হয়ে যান তখন মিরাজের রান ৯৩। শেষ ব্যাটসম্যান মোস্তাফিজ আসার পরও একটুও অধৈর্য হননি মিরাজ। ৯৩ থেকে পর পর দুটি বাউন্ডারি মেরে নিজের রান নিয়ে যান ৯৯ রানে। তখনই স্টাম্প মাইক্রোফোনে ভেসে এলো মিরাজের কণ্ঠ, ‌’এলার্ট থাকিস’। ঠিক পরের বলেই ফাইনলেগ অঞ্চলে প্যাডেল সুইপ করে তুলে নেন টেস্ট ক্রিকেটের বহু আকাঙ্ক্ষিত শতক। শেষ পর্যন্ত রাকিম কর্নওয়েলের বলে লং অনে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন তিনি। তবে তার আগেই বাংলাদেশ খুঁজে পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে মাঠের লড়াইয়ের প্রয়োজনীয় রসদ।

এমএহক

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!