রফিক সরকার ( লামা ) বান্দরবান প্রতিনিধি :
আজ শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে পাহাড়ে বসবাসরত বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব “ওয়াগ্যোয়েই পোয়েঃ” বা প্রবারণা পুর্নিমা। ‘ওয়াগ্যোয়েই পোয়েঃ’ মার্মা শব্দ, এর অর্থ উপবাসের সমাপ্তি। অন্য অধিবাসীরা একে “ওয়াহ” বলে থাকেন। বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরা আষাঢী পূনির্মা থেকে আশ্বিনী পূর্নিমা পর্যন্ত তিন মাস বর্ষব্রত (উপবাস) থাকার পর ধর্মীয় গুরুদের সম্মানে এ বিশেষ উৎসবের আয়োজন করে।
এই উৎসবই হলো ‘ওয়াইগ্যোয়েই পোয়েঃ’ উৎসব। মারমাদের পাশাপাশি বৌদ্ধ ধর্মালম্বী বড়ুয়া, চাকমা, তঞ্চঙ্গারাও এ উৎসবে যোগ দেয়। তিনদিন ব্যাপী এ উৎসবকে ঘিরে পার্বত্য রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলাসহ বান্দরবানের অন্য উপজেলার ন্যায় লামা উপজেলার প্রত্যন্ত পাহাড়ী পল্লীগুলোতেও চলছে এ উৎসবকে ঘিরে আনন্দের বন্যা ও সাজ সাজ রব। পাশাপাশি উপজেলার প্রতিটি হাটবাজারে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্টি তরুণ তরুনীদের মাঝে ধুম পড়েছে কেনাকাটার।
এ উপলক্ষ্যে উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকেও প্রতিটি বৌদ্ধ ও পাড়াগুলোতে আর্থিক অনুদানও প্রদান করা হয়েছে। পাশাপাশি নেয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা।
রবিবার সকালে বিশেষ প্রার্থণার মধ্য দিয়ে শুরু হয় উৎসবের প্রথম দিন। পরে ছোয়াইং দানের পর এদিন সন্ধ্যা থেকে শুরু হবে ফানুস উড়ানো। এই চীনা কাগজ দিয়ে বিভিন্ন রং, বর্ণ এবং সাইজের ফানুস তৈরি হয়। পরে সলতে দিয়ে তৈল সহকারে তা উড়ানো হয়। এ সময় সূত্রপাত ও কীর্তন হয়, যুবকেরা নৃত্য করেন। ফানুস উড়ানোর দিকটা ধর্মীয়।
বৌদ্ধ ধর্মে ফানুস উড়ানো দেখাও পূণ্যের কাজ। গৌতম বুদ্ধের চুলামণি চৈত্যকে বন্দনার জন্যই ফানুস উড়ানো হয়। ফানুস বাতি উড়ানোর প্রতিযোগিতা সকলকে আকৃষ্ট করে। বিশাল আকৃতির ফানুস বাতি আকাশে উড়ানোর দৃশ্য দেখার জন্য বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের লোক এমনকি বহু বিদেশি পর্যটকও ভীড় জমিয়ে থাকে। উৎসবের দিনগুলোতে প্রতিদিন বিকাল থেকে ফানুস উড়ানো শুরু হয়। ফানুস উড়ানোর আগে রথে জ্বালানো হবে হাজার হাজার মোমবাতি। এ জন্য স্থানীয় ক্যাং ও বৌদ্ধ মন্দিরগুলোকে সাজানো হয় বর্নিল সাজে।
শিশু কিশোর ও তরুণ তরুনীরা নতুন পোষাক পরিধান করে এই দিনগুলো পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে বেড়াবে বন্ধুদের সঙ্গে। উৎসবের দ্বিতীয় দিন সোমবার সকাল থেকে বিহার ভান্তের মাঝে ছোয়াইং দানসহ ধর্ম দেশনাসহ দায়ক দায়িকা, তরুণ তরুনীরা সোমবার সন্ধ্যায় মাতামুহুরী নদীতে হাজার হাজার বাতি ভাসিয়ে প্রদীপ পুজা করবেন। এছাড়া বৌদ্ধ বিহারে অবস্থানরত উপাসক উপাসিকাকে তরুণ তরুণীরা ঢোল বাজনা বাজিয়ে গোসলের আয়োজন করবে।
উপজেলার একটি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়নের কেয়াংগুলোতে পৃথকভাবে এ উৎসব পালন করা হবে। বিশেষ করে লামা উপজেলার কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ বিহার ছাড়াও গজালিয়া, রুপসীপাড়া এবং পৌর এলাকার সাবেক বিলছড়ি বৌদ্ধ বিহারে জাঁকজমকভাবে এ উৎসব পালন হবে বলে জানা গেছে। বিহারে বিহারে ভান্তেগণ দায়ক দায়িকার উদ্দেশ্যে ধর্ম দেশনা ও পঞ্চশীলের মধ্য দিয়ে উৎসব শেষ হবে মঙ্গলবার।
লামা কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ বিহারের ‘ওয়াগ্যোয়েই পোয়েঃ’ উদ্ধসঢ়;যাপন কমিটির আহবায়ক মংচাই মার্মা ও সদস্য সচিব বাবু মং মার্মা এ প্রতিবেদককে জানায়, প্রতিবারের ন্যায় এবারও যথাযথ মর্যাদায় কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ বিহারসহ উপজেলার সবক’টি বৌদ্ধ বিহারসহ পাড়ায় ওয়াগ্যোয়েই পোয়েঃ উৎসব পালনের সকল প্রস্তুতির মাধ্যমে রবিবার থেকে উৎসব শুরু হবে। তিনি বলেন, উৎসবের প্রথম দিন বিভিন্ন পাড়া থেকে আগত উপাসক উপাসিকাগণ পঞ্চশীল গ্রহণের জন বৌদ্ধ মন্দিরে অবস্থান করবেন। মঙ্গলবার রাতে উৎসব শেষ হবে।
এ বিষয়ে লামা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইকবাল হোসেন বলেন, ‘ওয়াগ্যোয়েই পোয়েঃ’ উৎসব যথাযথভাবে পালনের জন্য উপজেলার প্রতিটি কেয়াং বৌদ্ধ বিহারগুলোতে ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আশা করি প্রতি বছরের ন্যায় এবারও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উৎসব সম্পন্ন হবে।
এ এস / জি এম এম / আর এস পি :::