‘আইনজীবীর কাণ্ড’ চেম্বারেই ধর্ষণ—৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা প্রেমিকা, প্রেমিক গেল জেলে

বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে চট্টগ্রাম আদালতের আইনজীবি পল্টন দাশকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে অন্তঃসত্বা এক শিক্ষানবিশ নারী আইনজীবী চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানায় এ মামলা দায়ের করেন।

মামলায় তার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২০০০ (সংশোধনী-২০০৩) এর ৯(১) ধারায় অভিযোগ আনা হয়। এজাহারে মুল ঘটনাস্থল হিসেবে উল্লেখ করা হয়, চট্টগ্রাম আদালতের আইনজীবীদের জন্য নির্ধারিত ভবন দোয়েলের সপ্তম তলার ৭১৮ নম্বর কক্ষ। এর বাইরেও বিভিন্ন স্থানে প্রায় এক বছর ধরে ওই নারী আইনজীবী পল্টন দাশের হাতে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলেও উল্লেখ করা হয় এজাহারে।

৬ জুন এ ঘটনায় মামলা দায়ের হলে বৃস্পতিবার (১০ জুন) বিকেলে তাকে গ্রেফতার করে চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানা পুলিশ। ১১ জুন তাকে কারাগারে প্রেরণ করেন চট্টগ্রামের একটি আদালত।

মামলার নথি থেকে জানা গেছে, ২০১৭ সালে চট্টগ্রাম আইন কলেজে প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত অবস্থায় অভিযুক্ত পল্টন দাশের সঙ্গে ওই নারীর পরিচয় হয়। তাদের মধ্যে এরপর গড়ে উঠের প্রেমের সম্পর্ক। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে পল্টন দাশ ওই নারীকে ২০২০ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত তার চেম্বার ও বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে গিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করেন। এরপর তিনি অন্তঃসত্বা হয়ে পড়েন। বিষয়টি অভিযুক্ত পল্টনকে জানানো হলে তিনি গর্ভের সন্তান নষ্ট করতে বলেন ওই নারীকে। এমনকি বিষয়টি ধামাচাপা দিতে ওই নারীকে দেওয়া হয় টাকার প্রস্তাব।

বিষয়টি জানানোর পর বিয়ে না করায় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী ওই নারী। মামলার পরপরই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

জানতে চাইলে ভুক্তভোগী ওই নারী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি আইন কলেজে প্রথম বর্ষে পড়া অবস্থায় পল্টনের সঙ্গে পরিচয় হয়। আমার পারিবারিক জমি সংক্রান্ত তার সঙ্গে বিভিন্ন সময় কথাও বলতাম। সেও আমাকে প্রায় কল করতো। একপর্যায়ে আমাকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দেয় পল্টন। আমার পড়াশুনা শেষ করে দুইজনই বিয়ে পিঁড়িতে বসার কথাও ছিল। এ সুযোগটি কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন সময় আমার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে মিলিত হয়েছে পল্টন। এমনকি চট্টগ্রাম আদালতে প্র্যাক্টিস করার সময়ে তার চেম্বারে নিয়ে গিয়ে বিভিন্ন সময় সে ধর্ষণ করতো আমাকে। আমি বিয়ের কথা বললে, সে বিভিন্ন অজুহাত পেশ করে সময়ক্ষেপন করতো। আমি এখন আট মাসের গর্ভবতী।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি ছয় মাসের অসুস্থ থাকা অবস্থায় তাদের বাড়িতে গিয়ে তার বাবা-মাকে জানিয়েছি। তারাও কোনো সমাধান করেননি। তার পক্ষে থেকে প্রকৃতি চৌধুরী নামের একজন লোক পাঠিয়ে বলে আমি টাকা নিয়ে যেন দূরে সরে যাই। এমনকি সন্তান নষ্ট করার জন্য বেশ কয়েকবার লোক পাঠিয়ে হুমকি দেওয়া হয়। সে আমাকে হুমকি দিয়ে বলত সেই আইনজীবী। তার বাবাও আইনজীবি। তাকে কেউ কিছু করতে পারবে না।’

কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নেজাম উদ্দীন বলেন, ‘ভুক্তভোগী এক নারীর অভিযোগ পেয়ে চট্টগ্রামের পল্টন দাশ নামে এক আইনজীবীকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাকে কারাগারে প্রেরণ করেন আদালত।’

মুআ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!