‘অস্থির’ নিত্যপণ্য বাজার—দমবন্ধ উপক্রম, নিয়ন্ত্রণ পুরোই সিন্ডিকেটের হাতে

আর মাত্র কদিন পরই শুরু হচ্ছে রমজান মাস। রমজান শুরুর আগেই হু হু করে বাড়তে শুরু করেছে নিত্যপণ্যের দাম। প্রতি বছর রমজান শুরুর আগেই যেনো অভিনব কারসাজিতে নামে কতিপয় ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। মাস পনের দিন আগে থেকেই অতি প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করে। গত শুক্রবার (২৬ মার্চ) চট্টগ্রামের পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, অতি প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ১০ টাকা থেকে ১৬০ টাকা।

গত ১৫ দিনের ব্যবধানে মুদির দোকানে দাম বেড়েছে প্রায় প্রতিটি পণ্যের। অস্ট্রেলিয়ান উন্নতমানের ছোলা কেজি প্রতি ৮০ টাকায়, চিনি ৬৪ টাকায়, মসুর ডাল (ছোট জাত) ১১৫ টাকা ও বড় জাতের মসুর ডাল ৭৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। মটর ডাল ৪৫ টাকা ও খেশারি ডালের দাম ১৩৫ টাকা। খোলা সয়াবিনের কেজি ১৪০ টাকা ও পলিব্যাগ কোম্পানি ভেদে বিক্রি হচ্ছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকার মধ্যে। আদা ৮০ টাকা, আমদানি করা রসুন বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ৪০ টাকায় ও দেশি রসুন ৭০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।

চিনির দাম মণপ্রতি বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা, কেজিতে ৬৭ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। খেজুর আরিচা ৪০০, বড়ই ৩৪০, জিয়াদা ২৪০ এবং সর্বনিম্ন ইরাকী খেজুর ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। একই দশা চালের বাজারে। মিনিকেট চাল কেজিতে ৫ টাকা বেড়েছে। মিনিকেট কেজিপ্রতি ৬০, মিনিকেট আতব ৫৫, মালা ৫০, জিরা সিদ্ধ ৬৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিপ্রতি ১০ থেকে ১২ টাকা বেড়েছে।

এদিকে মুরগির বাজারে এখনো স্বস্তি ফেরেনি। সোনালী মুরগি ৩৩০ টাকা, লেয়ার ২৩০ ও ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ টাকা কেজি। ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ৮৬ টাকায়। গরুর মাংস হাড়সহ বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ টাকা কেজি। হাড়ছাড়া ৭০০ টাকায় ও খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৮০ টাকায়।

মাছের বাজারের দাম অপরিবর্তিত। রূপচাঁদা আকার ভেদে ৩৩০ থেকে ৫০০ টাকা, বাইলা মাছ ২৩০ থেকে ২৭০ টাকায়, ছুরি মাছ ২৮০ টাকা, কোরাল মাছ ৫৫০ টাকা, পোয়া মাছ ২৫০ টাকা, লইট্যা আকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি।

এছাড়া বাটা ২৩০-২৫০ টাকা, পাবদা ৪৫০, সামুদ্রিক চিংড়ি ৩২০ থেকে আকারভেদে ৫০০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে। চাষের তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৫০ টাকায়, রুই আকারে ছোট ১৪০ থেকে ১৬০ টাকায় ও কাতাল ১৮০-২৩০ টাকায়, কই ৫০০ টাকায় ও শিং ৫০০, কেসকি মাছ ২৫০ টাকায় ও চিংড়ি ৪৫০ টাকায়, পাঙ্গাস ১০০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

হঠাৎ দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে বিশ্ব বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। এর প্রভাব দেশীয় বাজারে পড়েছে। তাদের মতে রপ্তানিকারক দেশগুলোতে উৎপাদন কমে গেছে। বিশ্ব বাণিজ্যের অবস্থাও আগের মতো নেই। তাই গত কয়েক মাস ধরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ওঠা-নামা করছে।

একই সাথে দাম বেড়েছে সবজিরও। গত সপ্তাহে নগরের বহদ্দারহাট কাঁচাবাজারে পটল, ঝিঙে, বেগুন, ঢ্যাঁড়স, মুলা, লাউ, শসা, ঝিঙে, মরিচের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় সবজিগুলোর দাম ছিল হাতের নাগালে। কিন্তু সপ্তাহ না ঘুরতেই বাজারে দেখা গেছে এসব সবজি কেজিপ্রতি ১০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। প্রায় একই দামে এসব সবজি বিক্রি হচ্ছে রেয়াজউদ্দিন বাজারেও। কিন্তু চকবাজার, কর্ণফুলী মার্কেট ও কাজির দেউড়ি কাঁচাবাজারে আরও বেশি দামে এসব সবজি বিক্রি করা হচ্ছে।

কর্ণফুলী বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ফুলকপি ও বাঁধাকপি কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকায়, বেগুন ২৫ থেকে ৩০ টাকা, আলুর কেজি ২০ টাকা, কাঁচামরিচ ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, গাজর ২০ টাকা, শিম ২৫ থেকে ৩০ টাকা, শশা ৫০ টাকা, পেঁপে ২০ টাকা ও টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকায়। এছাড়া ঢেঁড়স প্রতিকেজি ৮০ টাকা, বরবটি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, ঝিঙা ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ টাকা ও লতি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা করে কেজি। শরবত খাওয়ার অন্যতম উপাদান লেবুর দামও হাতের নাগালের বাইরে। মাঝারি মানের লেবু বিক্রি হচ্ছে একটি ১৫ থেকে ২০ টাকায়। ভালো মানের হলে তা গিয়ে দাঁড়ায় ২৫ টাকা।

রমজানকে সামনে রেখে সবজির দাম বেড়েছে—এই কথা মানতে নারাজ সবজি ব্যবসায়ীরা। তাঁদের দাবি বাজারে সবজির সরবরাহ কম হওয়ায় দাম বেড়েছে। বহদ্দারহাট কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা শরীফ উদ্দিন ও আবদুর রহিম বলেন, রমজান উপলক্ষে কখনো দাম বাড়ানো হয় না। দাম বাড়ে মূলত সরবরাহ কম থাকলে। এখন সরবরাহ কমেছে, তাই দামও কিছুটা বেড়েছে।

তবে ব্যবসায়ীদের এ দাবি মানতে নারাজ ক্রেতারা। কর্ণফুলী মার্কেটে সবজি কিনতে আসা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, রোজায় দাম বাড়ানোর অংশ হিসেবে আগে থেকেই ব্যবসায়ীরা অজুহাত বের করেছেন। তিনি বাজার স্থিতিশীল রাখতে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করার জন্য প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। একই কথা বলেন, চকবাজারে বাজার করতে আসা গৃহবধূ হালিমা বেগম।

এমএহক

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!