অস্ত্র হাতে বেপরোয়া চট্টগ্রামের ‘যুবলীগ নেতা’ জনি

চট্টগ্রামের বাকলিয়া থানার রাজাখালী এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এক স্বঘোষিত যুবলীগ নেতা। থানায় তার বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মামলা। রয়েছে চান্দগাঁও ও কর্ণফুলীর চর এলাকায় চাঁদাবাজি-দখলবাজির বিস্তর অভিযোগও। নিজের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে রাজাখালি এলাকার বড় ট্রাক টার্মিনালও। তিনি ওই এলাকায় ত্রাস হিসেবে পরিচিত। সম্প্রতি একটি সমিতির নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে কিশোর গ্যাংয়ের অর্ধশত সদস্য নিয়ে হাতে দেয় অস্ত্রের মহড়া। নাম তার মহিউদ্দিন জনি।

অবাক করা বিষয় হচ্ছে, দীর্ঘ এক মাস আগে প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া দিলেও পুলিশ প্রশাসন যেন ঘুমে, অস্ত্র উদ্ধারে যেমন কোনো খবর নেই, তেমন নেই একাধিক মামলা থাকা সত্ত্বেও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানো আসামিকে গ্রেপ্তারের উদ্যোগ। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, অস্ত্রের মহড়া দেয়ার বিষয়টি আড়াল করতেই পারলেই যেন বাঁচে পুলিশ।

চট্টগ্রাম প্রতিদিন-এর অনুসন্ধানে বাকলিয়া থানার রাজখালী এলাকায় সেই যুবলীগ নেতা মহিউদ্দিন জনির অস্ত্র হাতে নিয়ে মহড়া দেওয়ার ভিডিও ফুটেজটি হাতে এসেছে। জানা যায়, নগরের বাকলিয়া থানার রাজাখালী এলাকার মাহফুজা কলোনির জসিম উদ্দিনের পুত্র মহিউদ্দিন জনি (৩২)। তিনি একাধিক ফৌজধারি মামলার আসামি। এসব মামলার মধ্যে বেশ কয়েকটি মামলা বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন।

প্রায় একমাস আগে একটি ভিডিও ফুটেজে রাজাখালী এলাকায় স্থানীয় ট্রাক সমিতির নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক সভায় মহিউদ্দিন জনিকে অস্ত্র হাতে প্রার্থীদের ভয়ভীতি ও তাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াতে দেখা যায়। তার সঙ্গে ছিল সেখানকার বিভিন্ন আসামি সহ প্রায় অর্ধশত জনের কিশোর গ্যাং। চলমান লকডাউন কারণে বর্তমানে ট্রাক সমিতির নির্বাচন স্থগিত রয়েছে।

ভিডিও ফুটেজে আরও দেখা যায়, জনির সাথে আছে শাহ আলম ওরফে রুবেল চৌধুরী (৩৭)। পেশায় ট্রাক চালক। তার নামে রয়েছে প্রায় ৭টি মামলা। ২০১৫ সালের ৫ জুলাই মাদকের মামলায় তাকে সাজা দিয়েছিল কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত। তিনি চট্টগ্রামের বাঁশখালী থানার রতনপুর গ্রামের আবসুস সাত্তার ওরফে বাচ্চু ড্রাইভারে পুত্র। এছাড়া ছিল মো. বেলাল (২৫)। তার বিরুদ্ধেও রয়েছে একাধিক মামলা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মহিউদ্দিন জনি নিজেকে পরিচয় দেন চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগ নেতা অথচ মহানগর যুবলীগ জানিয়েছে, যুবলীগের মহানগরের কার্যকরী কমিটিতে এই নামে কোনো সদস্যও নেই। এমনকি সংশ্লিষ্ট থানা ও ওয়ার্ড কমিটিতেও তার কোনো পদবি নেই। কিন্তু এলাকায় চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে পরিচয় দেন যুবলীগ নেতা হিসেবে। রাজাখালী এলাকায় গড়ে তোলেন পুলিশের খাতায় তালিকাভূক্ত সশস্ত্র কিশোর গ্যাং। যেখানে রয়েছে একাধিক মামলার আসামি।

মূলত এই কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রক হিসেবে এলাকার চোখে ভয় ও আতঙ্গের নাম মহিউদ্দিন জনি। অভিযোগের বিষয়ে চাইলে মহিউদ্দিন জনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে স্থানীয়রা অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমি কোনো অবৈধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নই। ভিডিওতে যে অস্ত্র হাতে আমাকে দেখা যাচ্ছে সেটা মিথ্যা। আমার বিরুদ্ধে দুটি মামলা রয়েছে তাও ষড়যন্ত্রমূলক। এ বিষয়ে আমি প্রতিবাদ দিয়েছি।’

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ৩৫ নম্বর বক্সিরহাট ওয়ার্ডের যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আতিক উল্লাহ বলেন, ‘মহিউদ্দিন জনি নামে কোনো নেতা ওয়ার্ড যুবলীগের কার্যকরী কমিটিতে পদবিতে নেই। তিনি যদি কোনো পদবিতে আছেন বলে দাবি করেন, সেটা তার ব্যক্তিগত বিষয়টি। ওটাতো আমি আর বলতো পারব না।’

জানতে চাইলে বাকলিয়া থানার ওসি রুহুল আমিন বলেন,‘ মহিউদ্দিন জনি অস্ত্র নিয়ে মহড়া বিষয়টি আমার জানা নেই। এখনই খোঁজ নিচ্ছি।

মুআ/কেএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!