অস্ত্র উঁচিয়ে বহদ্দারহাট কাঁপাচ্ছেন কথিত ‘নেতা’ জাবেদ (ভিডিও)

ব্যবসায়ী থেকে পথচারী অতিষ্ট সবাই

চট্টগ্রাম নগরীর বহদ্দারহাট অতিষ্ট হয়ে উঠেছে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা পরিচয় দেওয়া এক ব্যক্তির অত্যাচারে। চাঁদাবাজি, মারধর, হুমকি-ধমকি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ছাড়াও কথায় কথায় অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করা কোনোটিই বাদ থাকছে না কথিত এই নেতার দিনলিপিতে। আর এর শিকার হচ্ছে বহদ্দারহাটের ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারণ পথচারীরাও।

নিজেকে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা পরিচয় দেওয়া এই ব্যক্তির নাম জাবেদুল ইসলাম জাবেদ। স্বেচ্ছাসেবক লীগের নগর কমিটি নিয়েও তিনি সক্রিয় রয়েছেন বলে জানা যায়। কিন্তু আড়ালে তার মূল কাজ অপরাধজগতের নেতৃত্ব দেওয়া— স্থানীয় ভুক্তভোগীরা জানাচ্ছেন এমনটিই। চাঁদাবাজি মাদকসহ একাধিক মামলার আসামি জাবেদ চান্দগাঁও থানার ঘাসিয়াপাড়ার ৬ নং ওয়ার্ডের আবুল কালামের ছেলে।

শুধু বহদ্দারহাটই নয়, চকবাজার এলাকাকেন্দ্রিক ছিনতাইকারী গ্রুপের দলনেতা বুইশ্যা এখন কারাগারে থাকলেও তার দলবলও চলছে জাবেদের তত্ত্বাবধানেই।

জাবেদুল ইসলাম জাবেদ প্রথম আলোচনায় আসেন ২০১২ সালের এক ঘটনায়। ওই সময় বহদ্দারহাটের স্বজন সুপার মার্কেটে চাঁদা না পেয়ে এক ব্যবসায়ীর প্রতিষ্ঠানে কিশোর গ্যাং নিয়ে হামলা চালান তিনি। দেশি অস্ত্র উঁচিয়ে গুলিও ছোঁড়েন তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বহদ্দারহাট থেকে চকবাজার এলাকার একাংশ ঘিরেই জাবেদের রাজত্ব। সম্প্রতি পুলিশের সামনেই বহদ্দারহাটে এক ব্যবসায়ী নেতাকে মারধরের চেষ্টা চালান তিনি। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেন তিনি।

জানা গেছে, বিপদে-আপদে জাবেদের পাশেই থাকেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মেয়রের ‘এপিএস’ পরিচয়দানকারী দুলাল। জাবেদের পক্ষ নিয়ে তিনি বলেন, ‘জাবেদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা রয়েছে, কোর্ট থেকে সেগুলোতে খালাস পাবেন। রায়ের আগে নিউজ করবেন কেন?’

অনুসন্ধানে জানা যায়, বহাদ্দারহাট কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী ও সাধারণ জনগণ জাবেদুল ইসলামের অত্যাচারে অতিষ্ট। তার বিরুদ্ধে এলাকায় চাদাঁবাজি, মাদক বিক্রি ও ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণসহ নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ আছে কেউ তাকে চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে অপহরণ করে নিয়ে টর্চার সেলে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। মাদক, চাদাঁবাজি ও ঝুটব্যবসা নিয়ন্ত্রণসহ জাবেদের রয়েছে এলাকায় একচ্ছত্র অধিপত্য। যে কোনো ব্যবসা করতে হলে তাকে দিতে হয় মোটা অংকের চাঁদা। চাঁদা অস্বীকৃতি জানালে অপহর করে তোলে নিয়ে তার টর্চার সেলে অমানুষিক নির্যাতন করেন। ভয়ে বেশিরভাগ মানুষই ঘটনা চেপে গেলেও এলাকার ব্যবসায়ী ও সাধারণ অনেকে অতিষ্ঠ হয়ে থানায় তার বিরুদ্ধে মাদক ও চাঁদাবাজির একাধিক মামলা দায়ের করেছেন।

জানা গেছে, জাবেদ ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে চান্দগাঁও থানার চেয়ারম্যান ঘাটা এলাকায় পূর্বশত্রুতার জের ধরে আবু সাঈদ মুন্নাকে মারধর করেন। এ সময় জাবেদ হাতে থাকা অস্ত্রের আঘাতে মুন্নার মাথা ফাটিয়ে দেন। এ ঘটনায় মুন্না বাদি হয়ে জাবেদসহ ৬ জন ও আরো অজ্ঞাত ৮-১০ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। ২০১৮ সালের জুলাই মাসে নগরের চান্দগাঁও থানার ম্যানিলা হোটেলের সামনে একটি বাস ভাংচুর করে চালককে মারধর করেন জাবেদ। এ সময় তার পকেটে থাকা ২৫ হাজার টাকাও ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এ ঘটনায় বাসচালক আরিফ বাদি হয়ে জাবেদসহ ৬ জনকে আসামি করে চান্দগাঁও থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। একই বছর নগরের চকবাজার থানার পূর্ব ষোলশহর হামিদ স্কুলের পাশে সাহেদ হোসেন তার নিজস্ব জায়গায় ভবন নির্মাণ করতে গেলে জাবেদ দলবল নিয়ে এসে সাহেদ হোসেনের কাছে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না পেয়ে পরে তিনি লোকজনকে মারধর করে নির্মাণসামগ্রী লুট করে নিয়ে যান। এ ঘটনায় সাহেদ হোসেন বাদি হয়ে চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা করেন।

চলতি বছর নগরীর চান্দগাঁও কাঁচাবাজারের শহীদ হোসেন মজনুর মুরগির দোকান থেকে ৯ কেজি মুরগি কিনে তার দাম পরিশোধ করার কথা বলায় ক্ষিপ্ত হয়ে গালিগালাজ করেন জাবেদ। একপর্যায়ে মজনুকে প্রাইভেট কারযোগে অপহরণ করে জাবেদের ঘাসিয়া পাড়ার টর্চার সেলে নিয়ে গিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। মুক্তিপণ হিসেবে দাবি করা হয় দুই লাখ টাকা। পরে টাকা দেওয়ার অঙ্গীকার করে কোনমতে সেখান থেকে ছাড়া পান মজনু। ছাড়া পেয়ে জাবেদকে আসামি করে চান্দগাঁও থানায় একটি মামলা দায়ের করেন মজনু। একই ঘটনায় বহাদ্দারহাট বারইপাড়া ও ঘাসিয়াপাড়া ব্যবসায়ী ও জনসাধারণ মিলে ‎র‌্যাব-৭ চান্দগাঁও সার্কেলে একটি অভিযোগ করেন।

বিভিন্ন অভিযোগ প্রসঙ্গে জাবেদুল ইসলামের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এগুলো আপনারা ভূয়া নিউজ করতেছেন। আমার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ মিথ্যা। কোনো একটি অভিযোগ প্রমাণ করতে পারবে না। আমি মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কাজ করি। এগুলো উদ্দেশ্যমূলক নিউজ। আমি মেয়রকে দিয়ে আপনাকে কল দিচ্ছি।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!