অসুখের বাহানায় তড়িঘড়ি থানা ছেড়ে যান ওসি প্রদীপ

কক্সবাজারের টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার দাস ‘অসুস্থতাজনিত’ কারণ দেখিয়ে মঙ্গলবার (৪ আগস্ট) সকালে হঠাৎ করেই থানা থেকে বেরিয়ে যান। যাওয়ার আগে নিজেই থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তিনি। এরপর থেকে তাকে আর জনসমক্ষে দেখা যায়নি।

ওসি প্রদীপ অসুস্থতাজনিত কারণ দেখিয়ে থানা ছেড়েছেন বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন। বুধবার তিনি ‘প্রদীপ কুমার সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত, তার অবর্তমানে ইন্সপেক্টর (তদন্ত) যিনি আছেন তিনি ওসির দায়িত্ব পালন করবেন’ বলে জানালেও বুধবারই সেখানে পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে প্রদীপ কুমার দাসকে প্রত্যাহার করে নতুন ওসি হিসেবে ইন্সপেক্টর (তদন্ত) এবিএম দোহাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

ওসি প্রদীপ কুমারকে প্রত্যাহার করে কক্সবাজার জেলার পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে। তবে ‘অসুস্থতাজনিত’ কারণ দেখিয়ে টেকনাফ থানা ছাড়ার পর তাকে আর জনসমক্ষে দেখা যায়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যার ঘটনায় তাকে প্রত্যাহার হতে পারে— এটা আগেই আঁচ করতে পেরেছিলেন ওসি প্রদীপ। অসুস্থতাজনিত কারণ দেখিয়ে ছুটিও সে কারণেই নিয়েছেন। ১৯৯৫ সালে এসআই হিসেবে পুলিশে যোগ দেওয়া প্রদীপ কুমার দাস ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিসেবে টেকনাফ থানায় যোগ দেন ২০১৮ সালে।

এদিকে পুলিশের গুলিতে নিহত মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খানের বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বুধবার (৫ আগস্ট) সকালে কক্সবাজারে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ওই ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় ওসি প্রদীপ কুমার দাশ এবং পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ নয়জনকে আসামি করা হয়। মেজর (অব.) সিনহা নিহত হওয়ায় পরে টেকনাফের বাহাড়ছরা তদন্ত কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (পরিদর্শক) লিয়াকত আলীসহ ২১ জনকে এর আগেই ক্লোজ করা হয়।

মামলার এজাহারে নিহত সেনা কর্মকর্তার বোন শারমিন লিখেছেন, ‘বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলী টেকনাফ মডেল থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে ফোন দেন। তার নির্দেশ পেয়ে লিয়াকত আলী বলেন, ‘ঠিক আছে স্যার, … শেষ কইরা দিতাছি।’ এরপরই মেজর (অব.) সিনহার শরীরের ওপরের দিকে কয়েক রাউন্ড গুলি করেন লিয়াকত আলী। গুলির আঘাতে সিনহা রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে যান এবং নিজের জীবন বাঁচাতে ঘটনাস্থল থেকে উঠে পালানোর চেষ্টা করলে অন্য আসামিরা তাঁকে চেপে ধরে মাটিতে ফেলে দেয়। তখন সিনহাকে আরও এক রাউন্ড গুলি করা হয়। এরপর ঘটনাস্থলে প্রদীপ কুমার দাশ হাজির হন। তিনি গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মাটিতে পড়ে থাকা সিনহার শরীরে ও মুখে কয়েকটি লাথি মেরে মৃত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত হন। তিনি মৃতদেহের মুখ বিকৃত করার চেষ্টা করেন।’

কক্সবাজার আদালতের বিচারক তামান্না ফারাহ্ বাদীর দায়ের করা ফৌজদারি দরখাস্তটি মামলা হিসাবে গ্রহণ করার জন্য টেকনাফ মডেল থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশমতো বুধবার (৫ আগস্ট) সন্ধ্যায় কক্সবাজার থেকে বিশেষ বাহক মারফত জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে পাঠানো হয় টেকনাফ থানায়।

আদালত একই সঙ্গে কক্সবাজারের র‌্যাব-১৫ কে মামলাটি তদন্ত করে আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্যও নির্দেশ দেন।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!