ফাইনালের উঠার সমীকরণ ছিল বার্সেলোনার জন্য অনেক সহজ। হারলেও তারা পাবে ফাইনালের টিকিট, তবে সে হার চার গোলের ব্যবধান হতে পারবে না। অন্যদিকে লিভারপুলের জন্য ছিল আপাতদৃষ্টিতে কঠিন কাজ। শুধু জিতলে হবে না, ব্যবধান হতে হবে কমপক্ষে চার শূন্য। একইসাথে নিজেরা একটি গোল খেলে আরও বড় ব্যবধানে জিততে হবে। এ যেন নিজের ঘর রক্ষা করে অন্যের ঘর তছনছ করে দেয়া। ফুটবল বিশ্বকে হতবাক করে সেই অসম্ভবকে সম্ভবে পরিণত করলো লিভারপুল।
ঠিক যেন গত মৌসুমের পুনরাবৃত্তি ঘটলো বার্সেলোনার সঙ্গে। সেবার রোমার বিপক্ষে শেষ আটের প্রথম লেগে ৪-১ গোলে জিতলেও, দ্বিতীয় লেগে ০-৩ গোলে হেরে যাওয়ায় বিদায় নিতে হয়েছিল টুর্নামেন্ট থেকে।
এবার রোমার বদলে লিভারপুল এবং শেষ আটের বদলে সেমিফাইনাল। বাকি সব প্রায় একই বলা চলে। নিজেদের মাঠে প্রথম লেগে ৩-০ গোলে জিতে স্বস্তিতেই ছিল আর্নেস্ত ভালভার্দের দল। অন্যদিকে ঘরের মাঠে প্রতিশোধ নিতে মরিয়া ছিল ইয়ুর্গেন ক্লপের লিভারপুল।
মঙ্গলবার দিবাগত রাতে সে প্রতিশোধ নিয়েই নিল লিভারপুল। অ্যানফিল্ডে সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগে বার্সেলোনাকে ৪-০ গোলে হারিয়ে, দুই লেগ মিলে ৪-৩ গোলের অগ্রগামিতায় চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে উঠে গেল লিভারপুল।
মহাগুরুত্বপূর্ণ এ ম্যাচে দলের দুই সেরা তারকা মোহামেদ সালাহ এবং রবার্তো ফিরমিনোকে ছাড়াই খেলতে নেমেছিল অলরেডরা। কিন্তু তাদের অভাব বুঝতে দেননি ডিভক অরিগি এবং জর্জিনিও উইজনাল্ডুম। দুজনই করেছেন জোড়া গোল, ফাইনালে পৌঁছে দিয়েছেন দলকে।
এ ম্যাচে না থাকলেও, গায়ে ‘নেভার গিভ আপ’ অর্থাৎ ‘কখনো হার মেনো না’ লেখা টিশার্ট পরে গ্যালারিতে উপস্থিত ছিলেন সালাহ। তার দেয়া এ অনুপ্রেরণা কাজে লাগিয়েছে লিভারপুল। ম্যাচের পুরোটা সময় নিয়ন্ত্রণ করেই বার্সার জালে হালি গোল দিয়েছে।
যার শুরুটা হয় ম্যাচের ৭ মিনিটের মাথায়। সালাহর পরিবর্তিত খেলোয়াড় অরিগিই প্রথম আঘাত হানেন বার্সার জালে। লিভারপুল অধিনায়ক হেন্ডারসনের প্রচেষ্টা ঠেকিয়ে দেন বার্সা গোলরক্ষক টের স্টেগান। কিন্তু ফিরতি বলে সেটি জালে জড়ান অরিগি।
শুরুতেই লিড পেয়ে তেঁতে ওঠে লিভারপুল। তবে গোল শোধ দিতে মরিয়া হয়ে ওঠে বার্সেলোনাও। প্রথমার্ধেই লিওনেল মেসি, লুইস সুয়ারেজ এবং জর্দি আলবার সামনে আসে গোটা চারেক সুযোগ। কিন্তু একটিও কাজে লাগাতে পারেননি তারা। ফলে ০-১ গোলে পিছিয়েই বিরতিতে যায় বার্সা।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে রবার্টসনের বদলে জর্জিনিও উইজনাল্ডুমকে নামিয়ে খেলা শুরু করেন লিভারপুল কোচ ক্লপ। কোচের আস্থার প্রতিদান দিতে তিনি সময় নেন মাত্র ১০ মিনিট। তাও মাত্র ৩ মিনিটের ব্যবধানে জোড়া গোল করে দুই লেগ মিলে ৩-৩ গোলের সমতা নিয়ে আসেন উইজনাল্ডুম।
ম্যাচের ৫৪তম মিনিটে আলবার ভুল থেকেই ডি-বক্সের মাঝ বরাবর বল পেয়ে যান উইজনাল্ডুম। ফাঁকায় দাঁড়িয়ে সহজেই স্টেগানক পরাস্ত করেন তিনি। এ গোলের ১২২ সেকেন্ডের মাথায় জার্দান শাকিরির ক্রসে মাথা ছুঁইয়ে গোল ব্যবধান ৩-০ করেন এ ডাচ তারকা।
তখনো লিভারপুলের ফাইনালের টিকিট পেতে হলে করতে হতো অন্তত ১ গোল। সে কাজটি করেন অরিগি। তবে এক্ষেত্রে আলেক্সান্ডার আর্নল্ডের সুযোগ সন্ধানী ভাবনারই মূল কৃতিত্ব।
কর্নার কিকটি তিনি সতীর্থ খেলোয়াড়কে দেয়ার ভান করে বার্সা খেলোয়াড়দের মনোযোগ সরান অন্যদিকে। সে সুযোগ ফাঁকায় বল পেয়ে যান অরিগি। গোললাইন করে ফেলেন ৪-০। যা পরে আর শোধ করতে পারেনি বার্সেলোনা।