অবাধ ভোটে বিএনপি নেতাদের বাধা, ভোটের আগেই শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনে প্রশাসক নিয়োগ

শিপিং খাতের ঐতিহ্যবাহী সংগঠন দখলের চেষ্টা

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসএএ) আসন্ন নির্বাচন স্থগিত করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সংগঠনটির কার্যক্রম তদারকির জন্য চট্টগ্রামের অতিরিক্ত কমিশনার (রাজস্ব) শারমিন জাহানকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) বাণিজ্য সংগঠন অনুবিভাগ থেকে পৃথক দুটি চিঠিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এর আগে বৃহস্পতিবার ভোটগ্রহণের দিন ঠিক করা হয়েছিল। কিন্তু মনোনয়নপত্র জমা দেওয়াকে ঘিরে অভিযোগ ওঠার পর নির্বাচন স্থগিত করা হয়। ব্যবসায়িক অঙ্গনে এ সিদ্ধান্তকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে, কারণ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে অন্যতম প্রভাবশালী সংগঠন।

বাণিজ্য সংগঠন অনুবিভাগের উপসচিব চৌধুরী সামিয়া ইয়াসমীনের সই করা এক চিঠিতে বলা হয়, তিন ব্যবসায়ীর আবেদন এবং শুনানির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্বাচনের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। সেখানে নতুন তারিখ উল্লেখ করা হয়নি।

অন্যদিকে মহাপরিচালক মুহাম্মদ রেহান উদ্দিনের সই করা আরেক চিঠিতে শারমিন জাহানকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগের কথা জানানো হয়।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পারা কয়েকজন প্রার্থী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন, যা নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অনিয়মের ইঙ্গিত দেয়। সংগঠনের সার্বিক কার্যক্রমও যথাযথভাবে পরিচালিত হচ্ছে না বলে মন্তব্য করা হয়।

প্রশাসককে ১২০ দিনের মধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের নির্দেশ দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে শারমিন জাহান জানান, তিনি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে নিয়োগপত্র হাতে পাননি।

গত ৯ সেপ্টেম্বর এক ব্যবসায়ী নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান এ জেড এম জালাল উদ্দিন বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন, মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিনে এক পক্ষের বাধায় কয়েকজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি। মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল ৭ সেপ্টেম্বর।

বিএনপি নেতাদের হস্তক্ষেপের অভিযোগ

এর আগে শিপিং খাতের ঐতিহ্যবাহী সংগঠনটির পূর্বনির্ধারিত দ্বিবার্ষিক নির্বাচন বন্ধ করে সিলেকশনের মাধ্যমে ‘নিজেদের লোক’ বসাতে মরিয়া হয়ে ওঠেন চট্টগ্রাম বিএনপির কয়েকজন নেতা। তাদের হুমকির মুখে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধিভুক্ত সংগঠনটি নির্বাচনের মাত্র এক সপ্তাহ আগে নির্বাচনের ভেন্যু পরিবর্তন করতেও বাধ্য হয়। সংগঠনটির অফিসে গিয়ে শিপিং ব্যবসার সঙ্গে দূরতম সম্পর্ক নেই—এমন ‘বিএনপি ক্যাডার’রা গিয়ে নির্বাচন কমিশন ও শিপিং ব্যবসায়ীদের হুমকি দেয় বলেও অভিযোগ ওঠে। ৪৭ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত শিপিং খাতের গুরুত্বপূর্ণ সংগঠনটি অতীতে কখনও এ ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়নি।

জানা গেছে, সংগঠনটির ৯৫ ভাগেরও বেশি সদস্য অবাধ নির্বাচনে যে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপের বিরোধী। শিপিং ব্যবসায়ীরা বলছেন, নির্বাচিত কমিটিকে পাশ কাটিয়ে নিজেদের ‘পছন্দের লোক’ বসিয়ে অনির্বাচিত কমিটি গঠনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, শিপিং এজেন্টদের ভেন্ডর নিয়োগ ও বিভিন্ন কাজ বাগিয়ে নেওয়ার নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে রাখা।

পরে বিএনপি নেতাদের সমর্থনপুষ্ট চক্রটি সাজানো নির্বাচনের মাধ্যমে শিপিং খাতের ঐতিহ্যবাহী সংগঠনটি দখল করে নেওয়ার চেষ্টা করে। অনেক প্রার্থীকে মিথ্যা মামলায় জড়ানোর হুমকি দেওয়া হয়। আবার অনেক প্রার্থীকে মনোনয়নপত্রই জমা দেওয়া হয়নি।

শিপিং ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদের ভাই আমীর হুমায়ূন মাহমুদের নেতৃত্বে মহানগর বিএনপির চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক এস এম সাইফুল আলম এবং সদস্য মশিউল আলম স্বপন প্রভাব খাটিয়ে শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃত্ব কব্জা করার চেষ্টা করে আসছেন।

ksrm