চট্টগ্রামের বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতালে আবার নার্স-চিকিৎসকদের অবহেলা, গাফিলতি ও ভুল চিকিৎসায় এক বছর এক মাস বয়সী শিশু সন্তানের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এর আগে গত বছরের ২৯ জুন অবস্থিত এই হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় আড়াই বছরের শিশু রাইফার মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছিল।
ভুল চিকিৎসার শিকার জিহান সারোয়ার প্রিয় নামের ওই শিশুর মা লালখানবাজার নিবাসী মোহছেনা আক্তার ঝর্ণা রোববার (১ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন বরাবরে দেওয়া লিখিত অভিযোগে চট্টগ্রাম নগরীর ম্যাক্স হাসপাতালের অব্যবস্থাপনার কথা তুলে ধরে এর প্রতিকার দাবি করেন ওই শিশু সন্তানের মা।
শিশুটির বাবার নাম শামীম সারোয়ার। এক ভাই ও এক বোনের মধ্যে প্রিয় ছিল ছোট।
মোহছেনা আক্তার ঝর্ণা সিভিল সার্জন বরাবরে দেওয়া অভিযোগে বলেন, ‘গত ১৭ নভেম্বর তার এক বছর ২৪ দিন বয়সী শিশুসন্তান জিহান সারোয়ার প্রিয় অসুস্থ বোধ করলে তাকে বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতালের এনআইসিইউতে ভর্তি করাই। ভর্তির পর অন-কলে চিকিৎসক সনৎ কুমার বড়ুয়াকে দেখালে তিনি ব্যবস্থাপত্র লিখে দেন। এরপরই ম্যাক্স হাসপাতালের অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার মুখে আমরা অসহায় হয়ে পড়ি। এনআইসিইউ’র মত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে তাদের কোন অভিজ্ঞ চিকিৎসক ও নার্স নেই।’
তিনি বলেন, গত ২১ নভেম্বর দুপুরে আমার সন্তানকে মেশিনের মাধ্যমে ধীরে ওষুধ দেওয়ার কথা থাকলেও অনভিজ্ঞ নার্স ওই ওষুধের শেষের অংশ হাত দিয়ে পুশ করেন। আর তখনই আমার সন্তান পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেয়।
ম্যাক্স হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার চারদিনের প্রায় সময়ই নার্স, আয়া ও চিকিৎসকদের অবহেলার স্বীকার হয়েছেন উল্লেখ করে মোহছেনা ঝর্ণা বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে অদক্ষ ও অনভিজ্ঞ চিকিৎসক কোন সিদ্ধান্ত দিতে দিতে পারেনি। অদক্ষ ও অনভিজ্ঞ নার্সরা ডিউটিতে রাতে ঘুমিয়ে থাকে। তাদের ডাকলে উল্টো বকা শুনতে হয়।’
এছাড়া তার সন্তানের বিভিন্ন পরীক্ষার রিপোর্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের দেখতে দেয়নি দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমার সন্তানের চিকিৎসার বিস্তারিত তারা আমাদের দেয়নি। তারা যে ওষুধ আমার সন্তানকে দিয়েছে তার মেয়াদ ছিল কি না তাও আমরা জানি না।’
ম্যাক্স হাসপাতাল শুধু তাদের ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি পূর্ণ করে চলেছে উল্লেখ করে ঝর্ণা অভিযোগে বলেন, ‘রোগীদের সুচিকিৎসা প্রদানে তাদের বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। এসব কারণে আমার সন্তানের মৃত্যুর সঠিক কারণ উদঘাটন এবং ম্যাক্স হাসপাতালের প্রতিটি অনিয়মের বিরুদ্ধে তদন্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’
অভিযাগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বী বলেন, ‘যেকোনো মৃত্যু অনাকাঙ্খিত। আমরা অবশ্যই বিষয়টি তদন্ত করে দেখব। বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের সাথে সমন্বয় করে তদন্তের ব্যবস্থা করা হবে। চিকিৎসায় কোনো গাফিলতি, ত্রুটি বা অবহেলা হয় তবে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বী বলেন, ‘পত্রিকায় এই ঘটনার বিষয়ে সংবাদ দেখে আমরা একটা কমিটি গঠন করেছিলাম। তার মধ্যে একজন চিকিৎসক সদস্য তদন্তে অপরাগতা প্রকাশ করেন। এরপর আবারও তিন সদস্যের কমিটি নতুন করে গঠন করা হয়েছে। এই অভিযোগ পাওয়ার পর আমাদের তদন্ত করতে সুবিধা হবে। ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের যদি গাফিলতি থাকে তবে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বেসরকারি হাসপাতালগুলো সরকারি নীতিমালা অনুসারে যদি মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত না করে তাহলে আমার ব্যবস্থা নেব।’
মোহছেনা আক্তার ঝর্ণা বলেন, ‘ছেলের মৃত্যুর কারণ জানতে চাই। তারা খুঁজে বের করুক। আধ ঘন্টা আগেও ছেলে সুস্থ ছিল। কোথায় ভুল ছিল সেটাই তারা বের করুক। আমি তো শূন্য হয়েছি আর কেউ যেন শূন্য না হয়।’
মেনিনজাইটিসে আক্রান্ত প্রিয় জ্বর নিয়ে ১৭ নভেম্বর ম্যাক্স হাসপাতালে ভর্তি হন। এরপর ২১ নভেম্বর সকালে একটি ইনজেকশন দেওয়ার পরপর তার মৃত্যু হয় বলে পরিবারের অভিযোগ।
সিপি